মনমোহনের মন্তব্য টেনেই রসিকতা মোদীর

৯ জানুয়ারি
ড়া ভাষায় বেনজির আক্রমণ শানিয়েছিলেন মনমোহন সিংহ। জবাব দিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী বেছে নিলেন শুধুই ঠাট্টা -রসিকতার পথ। দিল্লিতে এসে প্রবাসী ভারতীয়দের সামনে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে রসিকতা করলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। তাতে দেদার হাততালিও কুড়োলেন। সেই সঙ্গে প্রবাসীদের মোদী আহ্বান জানালেন, লোকসভা নির্বাচনের সময় ভোট দিতে ভারতে চলে আসুন। তা সম্ভব না হলে অন্তত ভোটের বিতর্কে অংশ নিন।
গত সপ্তাহের শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মনমোহন বলেছিলেন, মোদী দেশের প্রধানমন্ত্রী হলে সর্বনাশ হবে। আমদাবাদের রাস্তায় নরহত্যায় নেতৃত্ব দেওয়ার মতো চাঁছাছোলা অভিযোগে মোদীকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি। তার পরেও মোদী দিল্লিতে এসেছেন। কিন্তু মনমোহনের আক্রমণের জবাব দেননি। আজও সরাসরি কোনও জবাব না দিয়ে ঠাট্টার পথ ধরলেন মোদী। আর তার জন্য বেছে নিলেন প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনের মঞ্চকে। যে মঞ্চে দাঁড়িয়ে গত কালই প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “ভাল সময় আসছে।” দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে তাঁর ওই আশ্বাসকেই আজ হাতিয়ার করেছেন মোদী। বলেছেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। দেশের জন্য ভাল সময় আসছে।”
মোদী এই কথা বলা মাত্রই হাসি আর হাততালিতে ফেটে পড়ে বিজ্ঞান ভবনের মঞ্চ। মোদীও হাসতে হাসতে বলেন, “এর বেশি আর কিছু বলারই প্রয়োজন নেই ! ” আবার হাসির রোল। মোদী যে ঠাট্টার মোড়কে মনমোহন -জমানার অবসান এবং নিজের সরকারের আগমনের বার্তা দিলেন, তা বুঝতে অসুবিধে হয়নি শ্রোতাদের। মোদী এর পর বলেন, “হয়তো চার থেকে ছ’মাস অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, ভাল সময় আসছে।”
অনাবাসী ভারতীয় মন্ত্রক আয়োজিত প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনে আজ সকালে আলোচনাসভার বিষয় ছিল বিভিন্ন রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনা। যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সভাপতিত্বে সেই সভায় মোদী ছাড়াও ছিলেন হরিয়ানা, কেরল মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা। ওই তিনটি রাজ্যের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীরা পাল্লা দিয়ে নিজেদের রাজ্যে প্রবাসী ভারতীয়দের আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন চলনে -বলনে একেবারেই স্বতন্ত্র।
মন্টেকের সামনেই তিনি মনমোহনকে যেমন কটাক্ষ করেছেন, তেমনই প্রবাসীদের বিনিয়োগ টানতে সচেষ্ট কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের প্রচ্ছন্ন কটাক্ষ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, “আমরা প্রবাসী ভারতীয়দের সম্পর্কে শুধু ভাবি, ওঁরা ডলার -পাউন্ড নিয়ে আসবেন। কিন্তু এই ভারতীয় ভাইবোনেদের শুধু তা দিয়ে মাপলে চলবে না। ওঁদের ভিন্ন ধরনের কর্মসংস্কৃতি আছে। ভিন্ন অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, অনুশাসন। সেই অভিজ্ঞতাকেই আমাদের কাজে লাগাতে হবে।”
বলা বাহুল্য, অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি হাততালি কুড়োতে মোদীর অসুবিধে হয়নি। বস্তুত, লাল জ্যাকেট পরা গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীই ছিলেন দিন সব উৎসাহের কেন্দ্র। অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তৃতার শেষে নিয়মমাফিক হাততালি পড়েছে। কিন্তু মোদীর নাম ঘোষণা থেকে শুরু করে বক্তৃতার ফাঁকে ফাঁকে জারি ছিল নাগাড়ে হাততালি। একটা সময়ে দেখা যায়, বক্তৃতা থামিয়ে মোদী হাসছেন, শ্রোতারাও হাসছেন।
পরে অন্য একটি হল - প্রবাসীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকও করেন মোদী। সেখানেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। অনেকে জায়গা না পেয়ে মাটিতে বসে পড়েন। দাঁড়িয়ে, দরজার বাইরে থেকেও অনেকে মোদীর কথা শুনছিলেন। মোদী দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, “এই সম্মেলন কক্ষে জায়গা হয়নি। কিন্তু আপনাদের জন্য আমার হৃদয়ে জায়গা রয়েছে।”
মোদী ভালই জানেন, প্রবাসীদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা যথেষ্ট। আজ হাসিঠাট্টার পাশাপাশিই প্রবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “কয়েক মাসের মধ্যেই সময়ের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার নির্বাচন আসছে। এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত থেকে দূরে থাকবেন না। যে বিপ্লব আসছে, তাতে অংশ নিন। ভোট দিতে দেশে ফিরে আসুন। সম্ভব না হলে বিতর্কে যোগ দিন, বন্ধুবান্ধব পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিন।” সম্মেলনের প্রতিনিধিদের বুঝতে অসুবিধে হয়নি, হাসি -গল্পের ফাঁকে পরোক্ষে তাঁদের সমর্থন তথা ভোটটাই আজ চেয়ে রাখলেন মোদী। এমনকী তিনি - মনে করিয়ে দেন, জরুরি অবস্থা এবং তার পরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে পরমাণু পরীক্ষার জেরে যখন ভারতকে বিরোধের মুখে পড়তে হয়, তখন প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। এই নির্বাচনেও তেমনই ভূমিকা হওয়া উচিত তাঁদের।
এখানেই থামেননি মোদী। আগামী দিনে প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলনের চেহারাটা কেমন হওয়া উচিত, তারও সুর বেঁধে দিতে চেয়েছেন। ১৯১৫ সালের জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেছিলেন মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। সেই দিনটিই প্রবাসী ভারতীয় দিবস হিসেবে উদযাপিত হয়। মোদী বলেছেন, আগামী বছর সেই ঘটনার শতবর্ষপূর্তি। সেই উপলক্ষ্যে বিশেষ ভাবে উদযাপিত হোক প্রবাসী ভারতীয় সম্মেলন। বিশ্বের সমস্ত প্রান্তের প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হোক। ওই সম্মেলনকে গুজরাতেও নিয়ে যেতে চেয়েছেন তিনি। একই ভাবে পাঁচ বছর পরে গাঁধীজির জন্মের সার্ধশতবর্ষ এবং ২০২২ সালে ভারতের স্বাধীনতার হীরক জয়ন্তী কী ভাবে উদযাপিত হওয়া উচিত, তা - বলেছেন মোদী।
সব দেখে দিনের শেষে কেউ কেউ বলেছেন, “মোদী যেন প্রধানমন্ত্রিত্বের ড্রেস রিহার্সাল দিতে এসেছিলেন। আজ দিনভর তাঁর প্রতিটি মন্তব্যেই তা স্পষ্ট।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.