|
|
|
|
অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে প্রহৃত পুরকর্মীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা |
অবৈধ নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে কড়েয়া থানা এলাকায় বৃহস্পতিবার পুলিশ ও পুরকর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতি হল স্থানীয় বাসিন্দাদের। জখম হলেন পুরসভার এক অফিসার, এক পুলিশকর্মী-সহ চার জন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশের হাতে মার খেয়ে বাড়ির এক অংশীদারও জখম হন। অবৈধ নির্মাণ ভাঙার জেরে ওই ব্যক্তি কেরোসিন খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলেও এলাকাবাসীর দাবি। তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে। জখম পুলিশ ও পুরকর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছাড়া হয়।
পুলিশ ও পুরসভা সূত্রের খবর, দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ কড়েয়ার চামরু খানসামা লেনের একটি বহুতলের বেআইনি অংশ ভাঙতে যান পুরকর্মীরা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানান, পাঁচতলা ওই বাড়ির প্রথম তিনটি তলা তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকি দু’টি তলা বেআইনি। তাই ওই অংশ ভাঙতে যান কর্মীরা।
পুলিশ জানায়, এই কাজে পুর-কর্তৃপক্ষ তাদের সাহায্য চান। পুরসভার ডেমোলিশন স্কোয়াডের স্পেশাল অফিসার সুপ্রকাশ ভট্টাচার্য বাড়ি ভাঙার অস্থায়ী কর্মীদের নিয়ে ওই বহুতলে পৌঁছন। সেখানে আগে থেকেই কড়েয়া থানার পুলিশ হাজির ছিল।
ওই বহুতলের অন্যতম অংশীদার রফিক আহমেদের অভিযোগ, পুর-কর্মীরা দলবল নিয়ে বাড়ির পাঁচতলায় উঠেই হাতুড়ি, শাবল, গ্যাস-কাটার দিয়ে ভাঙার কাজ শুরু করেন। রফিকের ভাই রিয়াজের অভিযোগ, কিছুক্ষণের জন্য পুরকর্মীদের অপেক্ষা করতে বললেও তাঁরা রাজি হননি। এ নিয়ে পুরকর্মীদের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। এক সময়ে রিয়াজ সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে চোট পান। রফিক বলেন, “পুলিশ সহযোগিতা করলেও পুরকর্মীরা যে ভাবে গোটা বাড়ি ভেঙে ফেলার হুমকি দিচ্ছিলেন, তাতে আমার ভাই ভয় পেয়ে যায়। নিজের ঘরে গিয়ে হতাশায় কেরোসিন খেয়ে বসে।”
এলাকায় রটে যায়, রিয়াজকে ফেলে মারা হচ্ছে। কয়েকশো স্থানীয় বাসিন্দা ওই বহুতলের সামনে হাজির হন। পুলিশ জানায়, নিয়ম মাফিক বাড়ি ভাঙার ছবি ভিডিও ক্যামেরায় তুলে রাখছিলেন কনস্টেবল গৌতম ভট্টাচার্য। উত্তেজিত জনতা বহুতলে ঢুকে ওই তাঁকে চড়-ঘুষি মারেন। বিল্ডিং বিভাগের এক অফিসার বলেন, “সুপ্রকাশবাবু ছাড়াও পুরসভার আরও দুই ইঞ্জিনিয়ার এবং দুই অস্থায়ী কর্মী পার্থ দাস ও বিষ্ণু দাসকেও মারধর করা হয়েছে।”
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তিলজলা, গড়িয়াহাট থানার পুলিশকেও সেখানে পাঠানো হয়। তাঁরা জখম কনস্টেবল এবং পুরকর্মীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
বিকেল তিনটে নাগাদ ঘটনাস্থলে যান পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ-পূর্ব) দেবব্রত দাস। বাড়ির অন্যতম অংশীদার রফিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয় পুলিশ অফিসারদের। চারটে নাগাদ বাড়ির ভাঙার কাজ অর্ধসমাপ্ত রেখে যন্ত্রপাতি নিয়ে ফিরে যান পুরকর্মীরা।
মেয়র এ দিন বলেন, “অবৈধ নির্মাণ বাড়ির মালিকদেরই ভেঙে দিতে বলা হয়েছিল। তাতে কাজ না হওয়ায় পুরসভা থেকে বাড়ির মালিকদের নোটিস পাঠানো হয়। বলা হয়, পুরসভা বেআইনি অংশ ভেঙে দেবে।” তিনি জানান, পুরসভার অফিসার ও কর্মীদের মারধরের অভিযোগ দায়ের হয়েছে পুলিশের কাছে।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, ওই বহুতলের পাঁচটি তল তো এক দিনে বা এক পক্ষকালের মধ্যে তৈরি হয়নি। তখন কড়েয়া থানার পুলিশ বা পুর কর্তৃপক্ষ ভাঙতে আসেননি কেন? অবৈধ নির্মাণ নিয়ে কড়েয়া থানার ওসি-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। এ বিষয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বেআইনি বাড়ি নজরে আসার পরে পুরসভা নোটিস পাঠায়। তাতে কাজ না হলে তবেই ভাঙা হয়। সেই ভাঙার জন্য পুরসভার মেয়র পারিষদের অনুমোদন লাগে। যা সময় সাপেক্ষ। লালবাজারের কর্তারা জানান, এ ক্ষেত্রেও কড়েয়া থানার ওসি-র ভূমিকা খতিয়ে দেখা হবে। |
|
|
|
|
|