|
|
|
|
সেতুর বয়স পার, তবু কমতি নেই ভারী ট্রাকের
নিজস্ব সংবাদদাতা • গলসি |
দিনে দিনে ভার বহনের ক্ষমতা হারিয়েছে সেতুটি, অথচ তার উপর দিয়েই রোজ অন্তত পঁচিশটা ট্রাক চলাচল করে। এছাড়া ট্রাক্টর, গাড়ি, ছোট লরি এসব তো রয়েইছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে গলসি ২ ব্লকের গলসি-আদ্রাহাটি রোডে ডিভিসি-র সেচখালের উপর নির্মিত এই সেতুটি, তা সত্ত্বেও প্রতিদিনই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বালি বোঝাই ডাম্পারগুলি যাতায়াত করে। আর তাঁদের আশঙ্কা সত্যি হলে এলাকার প্রায় ১০টি গ্রামের সঙ্গে গলসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
জেলায় ডিভিসি-র সেচখালের উপর নির্মিত সেতুর সংখ্যা প্রায় ২৫০। সেগুলির বেশিরভাগই জীর্ণ। ফলে যে কোনও মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা নিয়েই বাস করছেন জেলার গ্রামীণ মানুষ। দামোদর সেচ মণ্ডলের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার ধীরাজকুমার ধর বলেন, “সেতুগুলির বেশিরভাগই সেচখালগুলি তৈরির সময় নির্মিত। তা প্রায় ১৯৫৫-৫৬ সালের কথা। সমস্ত কিছুরই একটা সময়সীমা থাকে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে সেতুগুলি ব্যবহারের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। আগের তুলনায় রাস্তা বেড়েছে। গাড়ি, ট্রাক-সহ সমস্ত ধরণের যানবাহনের সংখ্যাও লাফিয়ে বেড়েছে। কিন্তু সেতুগুলি বদলায়নি। ব্যবহৃত হতে হতে সেতুগুলির অবস্থা সত্যিই বিপজ্জনক।” তিনি আরও জানান, জীর্ণ সেতুগুলির মধ্যে অন্তত ১৫০ থেকে ১৭৫টির অবিলম্বে মেরামতি প্রয়োজন। মেরামতির টাকা চেয়ে রাজ্য সেচ দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। তবে চিঠির জবাব এখনও আসেনি বলে তাঁর দাবি। তবে মেরামতির চেয়ে সেতুগুলিতে নতুন করে, আগের তুলনায় বেশি ওজন সইবার ক্ষমতাসম্পন্ন করে তৈরি করা বলে জরুরি বলেও তাঁর মত। |
|
পাথর উঠে বেহাল সেতু। —নিজস্ব চিত্র। |
আদ্রাহাটির ওই সেতু দিয়ে যে বালি বোঝাই ট্রাকগুলি যাতায়াত করে সেগুলির বেশিরভাগই বাঁকুড়ার পাত্রসায়র সংলগ্ন দামোদরের বালি ঘাট থেকে বালি এনে গলসির গোহগ্রাম, আদ্রাহাটি হয়ে জাতীয় সড়কে ওঠে। গলসির বাসিন্দাদের অভিযোগ, সরকার অনুমোদিত ওজনের চেয়ে বিপুল ওজন বহন করে ওই ট্রাকগুলি। ফলে সেতু তো বটেই গলসি-আদ্রাহাটি রাস্তাটিরও অবস্থাও প্রচন্ড খারাপ। বিষয়টি নিয়ে গলসি ২ ব্লকের বিডিও ধ্বজপ্রদ শান্ডিল্যের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা। বাসিন্দাদের মধ্যে করিম মল্লিক, বুদ্ধদেব মণ্ডল, অজয় সাহাদের অভিযোগ, “সেতুটির দু’পাশে বিপজ্জনক সেতু বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা ছাড়া আর কিছুই করেনি প্রশাসন। আমরা বহু দিন ধরেই সেতুটি সংস্কারের দাবি করছি। কিন্তু এখনও কিছুই হয়নি।” স্থানীয় ইরকোনার বাসিন্দা বিমান হাটি, সুশান্ত পালদের দাবি, “সেতুটিতে মাঝেমধ্যে জোড়াতালি দেওয়া হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই অবশ্য সেই মেরামতির চিহ্নটুকুও দেখতে পাওয়া যায় না। আর সেই অবস্থাতেই, বিশাল বিশাল বালি বোঝাই ট্রাক ওই জীর্ণ সেতুটির উপর দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছে।”
কিন্তু বাঁকুড়া থেকে আনা বালি এ পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কেন? গলসি ২ ব্লকের বিএলআরও দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “সরকারি খাদান থেকে ওই বালি তোলা হচ্ছে। যে সব ট্রাক বালি নিয়ে ওই জীর্ণ সেতু পারপার করছে তাদের কাছে সরকারি চালানও রয়েছে। কী করে ওদের ঠেকাব?” গলসি ২ বিডিও ধ্বজপ্রদ শান্ডিল্যও বলেন, “ওই সেতু দিয়ে ট্রাক চলাচল ঠেকানো সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করি, যাতে বিপুল ওজন নিয়ে কোনও ট্রাক সেতু পার না করে। মাঝেমধেই ওখানে পুলিশ নিয়ে অভিযান চালাই আমরা। কিন্তু রোজ রোজ তো অভিযান চালানো সম্ভব নয়!”
গলসি থানার ওসি দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওই সেতুর উপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ওজনের ট্রাক যাতে চলাচল না করে, তার জন্য নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গত মাসে অন্তত ২৫-৩০টি বেশি ওজনবাহী ট্রাককে আটক করে আমরা বিএলআরও দফতরের হাতে তুলে দিয়েছি। কয়েক লক্ষ টাকার জরিমানাও আদায় করা হয়েছে।” |
|
|
|
|
|