এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মেরে পালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের বস্তির মধ্যে ঢুকে পড়েছিল পাথর বোঝাই ডাম্পারটি। বস্তির উঠোনে তখন ছেলেমেয়েদের নিয়ে রোদ পোহাচ্ছিলেন বেশ কয়েকজন মহিলা। আচমকা চোখের সামনে ডাম্পারটিকে দেখে সরে যাওয়ারও সুযোগ পেলেন না তাঁরা। ডাম্পারের ধাক্কায় মৃত্যু হল তাদেরই পাঁচজনের।
বৃহস্পতিবার রায়না থানার সেহরাবাজারের কাছে বর্ধমান-আরামবাগ রোডের উপর শ্রীধরঢালের ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিন জন। তাঁদের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ ওই ডাম্পারের চালককে গ্রেফতার করেছে। আটক করা হয়েছে ডাম্পারটিকেও। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম স্বস্তিকা ক্ষেত্রপাল (৬), অচর্না হাজরা (২৬), কল্যাণী হাজরা (৪২), শুভজিৎ হাজরা (৭) ও রিয়া হাজরা (৯ মাস)। এঁদের মধ্যে কল্যাণীদেবী, অর্চনা দেবী, রিয়া ও শুভজিৎ একই পরিবারের। |
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। আরামবাগের দিকে যাওয়ার পথে ওই পাথরবোঝাই ডাম্পারটি প্রথমে এক সাইকেল আরোহীকে ধাক্কা মারে। সাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন ওই আরোহী। তা দেখেই পালাতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় চালক ডাম্পারটি নিয়ে সোজা পাশের বস্তির মধ্যে ঢুকে পড়ে। সাত-আট জন মহিলা শিশুদের নিয়ে রোদ পোহাচ্ছিলেন সেখানে। ডাম্পারটি সোজা গিয়ে তাদের ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মারা যান ওই পাঁচ জন।
ওই ঘটনায় বস্তির সবাই শোকস্তব্ধ। একসঙ্গে মা, স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে হারিয়ে বাক্যহারা সঞ্জয় হাজরা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। কিছু জিজ্ঞেস করলেও জবাব না দিয়ে শূন্য চোখে চেয়ে রয়েছেন। তাঁদেরই এক আত্মীয় সোনালী হাজরা বলেন, “ওখানে কাছাকাছি একটি চালকলের শ্রমিকদের বস্তি গড়ে উঠেছে। এ দিন সেখানেই কেউ কেউ বেঞ্চে বসে আবার কেউ দাঁড়িয়ে গল্পগাছা করছিলেন। আচমকা হুড়মুড় করে ডাম্পারটি ঢুকে পড়ে। সরে যাওয়ার সুযোগও পাননি কেউ।” ওই বস্তিতেই এক আত্মীয়ের বাড়িতে সেহরাবাজার থেকে বেড়াতে এসেছিলেন অনুপ ক্ষেত্রপাল। ওই দুর্ঘটনায় মেয়েকে হারিয়েছেন তিনি। অনুপবাবু বলেন, “আমার ছ’বছরের মেয়ে স্বস্তিকা আর আট বছরের ছেলে পার্থসারথী বসে রোদ পোহাচ্ছিল। হঠাৎ ডাম্পারটা ঢুকে পড়ায় ছেলে কোনওরকমে সরে গেলেও মেয়েটাকে হারালাম। কী ভাবে বাড়ি ফিরব জানি না।” |