ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া নিয়ে মঙ্গলবার গোলমালের জেরে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩ দিন ক্লাস বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। বুধবার ওই ছুটির সিদ্ধান্ত ঘোষণা হয়। আগামী ১৭ জানুয়ারি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তার আগে এ ভাবে কলেজ ছুটি করা যায় কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।
কলেজের অধ্যক্ষ ধীরাজকুমার বসাক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কলেজ পরিচালন কমিটির সভাপতি আনন্দগোপাল ঘোষ বলেন, “অধ্যক্ষ আমাকে জানিয়েছেন মঙ্গলবার ব্যাপক ভাঙচুরের জন্য চেয়ার, বেঞ্চ, কম্পিউটার, জলের লাইন-সহ অনেক কিছু ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ওই সমস্ত কিছু মেরামত করা না হলে ছাত্রদের অসুবিধা হবে। তাই বুধবার থেকে তিনদিন কলেজে ক্লাস ছুটি থাকবে।” এ দিকে মঙ্গলবার রাতেই আনন্দচন্দ্র কলেজ সহ বিভিন্ন কলেজে গোলমালের ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতির কথা কর্তৃপক্ষের তরফে শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। কলেজ অধ্যক্ষ কাউন্সিল কাউন্সিলের উত্তরবঙ্গ জোনের সম্পাদক দেবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আনন্দচন্দ্র কলেজে ভাঙচুরের ঘটনা মঙ্গলবার রাতে শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।”
কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক হিসেবে মঙ্গলবারের হামলায় অন্তত ৪ লক্ষ টাকার সম্পত্তি এবং প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হয়েছে। ওই বিষয়ে ঘটনার দিন পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। যদিও বুধবার পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত একজনকেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও নামে অভিযোগ করেননি। আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি।” জড়িতদের শনাক্ত করতে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না ওই প্রশ্নের উত্তরও এ দিন পুলিশ কর্তারা মন্তব্য করতে চাননি।
বুধবার পুলিশ মোতায়েন ছিল কলেজ চত্বরে। এদিন মনোনয়নপত্র পরীক্ষার কাজ হয়েছে। দুপুর নাগাদ তিনদিনের ক্লাস ছুটির কথা জানাজানি হতে ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। এসএফআই-র জেলা সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, “নির্বাচনের মুখে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ভাবে কলেজে ক্লাস ছুটি ঘোষণা করতে পারেন কী? ওই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কেমন করে হবে সেটাই বুঝতে পারছি না।”
ছাত্র পরিষদের তরফেও একই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কলেজের নির্বাচন পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “আমি কিছু বলতে পারব না। যা বলার পরিচালন সমিতি বলবে।” যদিও তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য দাবি করেন, সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্লাস ছুটি ঘোষণা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওই কারণে শান্তিতে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।”
এ দিকে মঙ্গলবারের ঘটনাকে ঘিরে কলেজের প্রাক্তনীদের তরফে অনেকে প্রতিবাদ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, হামলার ঘটনায় ৭২ বছরের প্রাচীন কলেজের ঐতিহ্য কলঙ্কিত হয়েছে। কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী তথা নাট্যকর্মী অমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ করার দাবিতে প্রত্যেকের পথে নামার সময় এসেছে।” প্রাক্তন ছাত্র তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক দীপক রায় বলেন, “নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, দেবেশ রায়ের মতো সাহিত্যিকেরা যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন, সেখানকার ঐতিহ্য এভাবে ভূলুণ্ঠিত হবে ভাবতে পারছি না।” একই বক্তব্য প্রাক্তন ছাত্র তথা ইণ্ডিয়ান টি প্ল্যানটার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরাই শাখা সচিব কুন্তল চক্রবর্তীরও। |