পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি-সহ একাধিক নেতা তৃণমূলে যোগদান করায় কংগ্রেসে ভাঙন ধরল খড়িবাড়িতে। বুধবার শিলিগুড়ি মহকুমার ওই এলাকায় স্থানীয় খড়িবাড়ি হাই স্কুলের মাঠে খড়িবাড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান পরিমল সিংহ, উপপ্রধান অনিল মিন্জ, পঞ্চায়েত সদস্য সত্য কুমার সিংহ তৃণমূলে যোগ দেন। ১৩ আসনের ওই পঞ্চায়েতে কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যা ৯ থেকে কমে দাঁড়াল ৬ জন। বাকি চার জন সদস্য বামেদের। দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে এ দিন দল ছেড়েছেন ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি অরবিন্দ নাথ। তিনি প্রাক্তন প্রধান ছিলেন। তৃণমূলে যোগ দেন অঞ্চল সভাপতি ভবেশ্বর সিংহ, ব্লক সাধারণ সম্পাদক অরবিন্দ বর্মন, হীরণ্ময় রায়, সীমা দাসদের মতো অসংখ্য ছোট বড় কংগ্রেস নেতানেত্রী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের হাত থেকে দলীয় পতাকা নেন তারা। সিপিএম থেকেও অনেকে এ দিন যোগ দেন।
কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার বলেন, “ওই নেতাদের আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা দলে নেই তাদের বিষয়ে ভাবারও কিছু নেই। এতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের আঁতাত রয়েছে। শিলিগুড়ি পুরসভা বা সম্প্রতি সম্চাসারি গ্রাম পঞ্চায়েতের অনাস্থা ভোটে তা প্রমাণিত। কংগ্রেসের অনেকে তা মেনে নিতে পারছেন না। তা ছাড়া উন্নয়ন কাজে সামিল হতে মহকুমা পরিষদ, থেকে পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক কংগ্রেস এবং বাম সদস্য তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।” |
খড়িবাড়িতে কংগ্রেস ও সিপিএমের দলত্যাগীদের হাতে দলীয় পতাকা
তুলে দিচ্ছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
এ দিন দলের ওই অনুষ্ঠানমঞ্চ থেকেই খড়িবাড়িতে উন্নয়নের বার্তা দেন গৌতমবাবু। এ দিন তিনি ফাঁসিদেওয়া কৃষি মেলার শেষ দিন সেখানে গিয়ে কৃষি দফতরের তরফে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা কৃষকদের হাতে তুলে দেন। ঘোষপুকুরে একটি মডেল স্কুলের শিলান্যাসও করেন মন্ত্রী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সাহায্যে সেখানে একটি ডিগ্রি কলেজ গড়ার কাজ শীঘ্রই শুরু হবে বলে জানান তিনি। নকশালবাড়িতে দলের যুব সমাবেশে যোগ দিয়েও তাদের উন্নয়ন কাজে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। খড়িবাড়িতে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যেই মহকুমার ৩টি ব্লকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই খড়িবাড়িতেও তা দেওয়া হবে। ১০০ দিনের কাজে এই এলাকায় জোর দিতে প্রশাসনকে বলেছি।”
গৌতমবাবু জানান, ৩ কোটি টাকা খরচে এই এলাকায় মডেল স্কুল করা হবে। টেকনিক্যাল এডুকেশন দফতর থেকে এই এলাকায় একটি আইটিআই কলেজ গড়ার অনুমোদন মিলেছে। জায়গা দেখতে প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এখানকার নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা যেন জায়গা দু’টি খুঁজতে সাহায্য করেন। সেই সঙ্গে বাতাসি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামো উন্নত করতেও আশ্বাস দেন।
গৌতমবাবু বলেন, “যে নেতারা দলে এলেন তাদের অনেককেই আমি চিনি। তাঁরা কাজের মানুষ। কী কী উন্নয়ন কাজ দরকার দ্রুত তালিকা করে আমাকে জানান। আমি বাস্তবায়নে উদ্যোগী হব।” মন্ত্রীর মতে, ২০ ফেব্রুয়ারির পর যে কোনও দিন লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হবে। নির্বাচনীবিধি নিষেধ লাগু হলে কাজ করা সম্ভব হবে না। এরপর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন। তাই এখনই কাজ শুরু না করলে নতুন করে কাজ শুরু করতে জুন জুলাই মাস পেরিয়ে যাবে।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ সম্প্রতি বামেদের হাত থেকে দখল নিয়েছে তৃণমূল। তাদের ক্ষমতায় থাকা এই মহকুমা পরিষদের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজের খতিয়ান তুলে ধরতে খোদ মন্ত্রী নিজেই সচেষ্ট হয়েছেন। সভাধিপতিকে নিয়ে জেলাশাসক, মহকুমাশাসকের সঙ্গেও তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের বৈঠক করেছেন। তাঁর কথায়, “এই মহকুমা পরিষদ যে জেলা পরিষদের মতোই ক্ষমতা যুক্ত তা বাসিন্দাদের কাছে তুলে ধরতে চাই। হাতে এক বছর পেলে ভাল হত। কিন্তু সেই সময় নেই। তাই এক একটা দিন আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।” |