জলঙ্গি, মাজদিয়া ও বসিরহাটের সঙ্গে এ বার নাম জুড়তে চলেছে পুরুলিয়ার। খেজুর গুড়ের বাজার ধরতে বাইরের জেলায় পুরুলিয়ার গুড় বিক্রির কথা ভাবছে প্রশাসন। সম্প্রতি এ নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের বৈঠকও সেরে ফেলেছে রাজ্য স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও কৃষি বিপণন দফতর। এই জেলার বাসিন্দা তথা রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “আমাদের জেলায় প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খেজুর থেকে জেলায় আর্থিক বিকাশের কী করা যায়, তা ভাবতে বলেছিলেন। আমরা খেজুর গুড়ের ব্যবসায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের যুক্ত করার কথা ভাবছি। এই জেলা তো বটেই বাইরের জেলাতেও পুরুলিয়ার গুড় বিক্রির ভাবনা রয়েছে আমাদের।”
রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে রয়েছে খেজুর গাছ। প্রশাসনিক বৈঠক করতে জেলা সফরে এসে পুরুলিয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় এমন দৃশ্য দেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই খেজুর গাছকে কী ভাবে কাজে লাগানো যায় তা প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন তিনি। সেই খেজুর গাছের রস থেকে তৈরি সুস্বাদু গুড়ই এ বাজার বাণিজীকিকরণের পথে এগোল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। কী ভাবে এই গুড়কে অত্যাধুনীক ব্র্যান্ডের মোড়কে রসিকজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কলকাতায় দুই দফতরের বৈঠক হয়ে গিয়েছে। এ বার বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করতে শীঘ্রই জেলা প্রশাসন বৈঠকে বসতে চলেছে। |
শীত এলেই পুরুলিয়ার গ্রামে গ্রামে গুড়ের মহল বসে যায়। জেলার যে সব এলাকায় খেজুর গাছ বেশি রয়েছে, সেখানে গুড়ের কারিগররা এসে ঘাঁটি গাড়েন। খেজুর গাছের মালিকদের সঙ্গে তাঁরা চুক্তির ভিত্তিতে রস সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে আসরে নেমে পড়েন। খেজুর গাছের ছাল কেটে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় মাটির হাঁড়ি। সারা রাত ধরে গাছ থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়া রস জমা হয় হাঁড়িতে। সকালে হাঁড়ি হাঁড়ি খেজুর রস বড় পাত্রে ঢেলে আগুনের জ্বালে অনেক ক্ষণ ধরে ফুটিয়ে তৈরি করা হয় গুড়। নিতুড়িয়া, সাঁতুড়ি, কাশীপুর, পাড়া, বাঘমুণ্ডি, হুড়া, পুঞ্চা-সহ জেলার বহু এলাকায় এই সময় খেজুর গুড় তৈরি হচ্ছে। তার মিষ্টি সুবাসে এলাকা ম ম করছে।
জেলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী দফতরের আধিকারিক সুশান্তরঞ্জন ভক্ত বলেন, “পুরুলিয়ার শুষ্ক মাটির খেজুর রসের গুড় অত্যন্ত সুস্বাদু। একবার অন্য জেলার বাজারে নিয়ে গেলে রসিকজনের মন যে জিতে নেবে তাতে আমরা নিশ্চিত।” নদিয়ার তেহট্ট থানার বারনিয়া গ্রামের বাসিন্দা গুড়ের কারিগর দয়াল দফাদার, যিনি কমবেশি কুড়ি বছর এই ব্যবসায় যুক্ত। তাঁর কথায়, “আমি টানা ১৩-১৪ বছর পুরুলিয়ায় এসে গুড়ের ব্যবসা করছি। কাশীপুর, সাঁতুড়ি, পাড়া-সহ আশপাশের এলাকায় ব্যবসা করেছি। গতবার সাঁওতালডিহিতে, এ বার কাশীপুরে গুড় তৈরি করছি। এই এলাকার মধ্যে কাশীপুরের গাছের গুড় সুস্বাদু এবং ভালো গন্ধ। মাটির ভাঁড়ে রাখলে ছ’মাস সেই গন্ধ থাকবে।”.
জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “জেলার খেজুর গুড়কে বাজারে আনার জন্য আপাতত যে সমস্ত এলাকায় গুড় তৈরি হয়, তেমন তিনটি ব্লক কাশীপুর, পাড়া ও বাঘমুণ্ডির গুড়কে প্রাথমিক ভাবে আমরা বাজারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, আগামী বছর থেকে জেলাজুড়ে পরিকল্পনামাফিক এই কাজ শুরু হবে।
শান্তিরামবাবু বলেন, “আমাদের জেলার কম মানুষই গুড় তৈরির কাজ করেন। তাই বাইরের দক্ষ কারিগরদের নিয়ে এসে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী বছর থেকে তাঁরাই গুড় তৈরি করবেন।” এক আধিকারিক জানান, গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনের পুরুষদের কাজে লাগানো হবে। বিভিন্ন এলাকা থেক গুড় সংগ্রহ করে জেলার ব্র্যান্ড দিয়ে তা বিক্রি করার কথা ভাবা হচ্ছে। |