১ পৌষ থেকে বনগাঁর সাত ভাই কালীতলায় শুরু হয়েছে উৎসব, মেলা। প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো একটি কালীমন্দিরকে কেন্দ্র করে হওয়া এই মেলায় ভিড় জমান উত্তর ২৪ পরগনা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার মানুষ। মন্দিরে পুজো দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইছামতীর তীরে চড়ুইভাতির আকর্ষণও অনেককে এখানে টেনে আনে। |
ইছামতী নদীর ধার মন্দির সংলগ্ন ১২ একর জমিতে এই মেলা বসেছে। বনগাঁ রেল স্টেশনে নেমে রামনগর রোড ধরে আসা যায় এখানে। অথবা বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ থেকে ৪ কিলোমিটার নদীপথেও আসা যায়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ইছামতী মজে যাওয়ায় সে পথ বন্ধ। ভোর রাত থেকেই পুজো দেওয়ার লম্বা লাইন পড়ে। বিশেষ করে পৌষের প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান এখানে। অনেকে আবার পুজো দিয়ে মেলা দেখে চড়ুইভাতি করে ফিরে যান। তবে মেলাচত্বরে নিরামিষ খিচুড়ি রেঁধে চড়ুইভাতির চলই বেশি। আমিষ রাঁধতে হলে যেতে হবে নদীর ধারে, অন্যত্র।
জনশ্রুতি রয়েছে, ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দে বেনাপোল কাগজপুকুরের রাজা রামচন্দ্র খাঁ তাঁর সাত ভাইকে শাক্ত ধর্ম প্রচারের জন্য বনগাঁর এক কালীমন্দিরে পাঠান। এখন অবশ্য সেই প্রতিমা নেই। তার মুকুট রয়েছে। সেটিকেই পুজো করা হয়। বাসিন্দাদের কয়েক জনকে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি মেলা কমিটি। প্রতি বছর ওই মেলা থেকে যা আয় হয়, তাই দিয়ে স্কুল উন্নয়ন ও গ্রামোন্নয়নের বেশ কিছু কাজ করেন এলাকার মানুষ। ইতিমধ্যেই নাগরদোলা, হরেক রকম খাবার আর হাতের কাজের জিনিস নিয়ে বেশ জমে উঠেছে মেলা। একটি বৃহৎ গ্রামীণ মেলাই বলা চলে এটিকে। |
কলকাতা থেকে বাবার সঙ্গে মেলা দেখতে এসেছিলেন কলেজপড়ুয়া অমৃতা চক্রবর্তী। বললেন, “শুনেছিলাম এখানকার মন্দির খুবই জাগ্রত। তাই পুজো দিতে এসেছি। তবে এখানে এত বড় মেলা, ইছামতী নদী উপরি পাওনা।” তবে নদীপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মেলার আনন্দ অন্যান্য বারের থেকে বেশ খানিকটা ফিকে হয়ে গিয়েছে। প্রতিবার পুণ্যার্থী থেকে পিকনিক পার্টির অনেকেই নৌকায় মাইক বেঁধে নাচ-গান করে আনন্দ করতেন। ইছামতীতে বোটিং করাও অন্যতম আকর্ষণ ছিল। মাঝিরাও মরসুমের আয়ের আশায় বসে থাকতেন। কিন্তু ইছামতীতে কচুরিপানা ভর্তি হয়ে যাওয়ায় নৌকা চলাচল বন্ধই বলা চলে। সুশান্তবাবু বলেন, “কচুরিপানার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরে জানিয়েছি। আমরা নিজেরাও পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে বিএসএফের তরফ থেকে বাধা এসেছে।” বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “অতীতে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে একশো দিনের কাজ প্রকল্পে কচুরিপানা তোলা হয়েছে। কিন্তু এখন সেরকম কোনও তহবিল নেই। অন্য কোনও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমেও তা পরিষ্কার করা যায় না। কেউ বা কোনও সংস্থা চাইলে অনুমতি নিয়ে তা করতে পারেন।”
|