বহরমপুরের আবাসনে একই পরিবারের তিন মহিলার খুন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হলেও উদ্বেগ ধরা পড়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘ফেসবুকে’।
সোমবার বিকেলে বহরমপুরের একটি ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে বৃদ্ধা প্রভা দাস, তাঁর ভাইঝি মধ্য চল্লিশের বিজয়া বসু ও বিজয়াদেবীর তরুণী কন্যা আত্রেয়ী বসুর দেহ উদ্ধার করা হয়। তার পরে তিন দিন কেটে গেলেও ধরা পড়েনি অপরাধী। এই অবস্থায় অপরাধীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার মোমবাতি মিছিলে সামিল হন আশাবরী আবাসনের বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা থেকে বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা। সংঘমিত্রা রায় ও চন্দ্রাণী হাজরা বন্দোপ্যাধ্যায়ের মাথাতেই প্রথম এই ভাবনা আসে। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন সুমনা সেন, সুদেষ্ণা চট্টোপাধ্যায়, রত্না দাস ও প্রবীণ কৃষ্ণা অধিকারী। সংঘমিত্রাদেবী বলেন, “আমার ও চন্দ্রানীর ভাবনার সঙ্গে বাকিরা সহমত হওয়ায় মোমবাতি মিছিলে বের করার সিদ্ধান্ত হয়।”
মঙ্গলবার বিকেলেই তাঁরা মোমবাতি মিছিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তারপরেই ময়নাতদন্তের পরে ওই তিন জনের দেহ আবাসনে আসার পরে মিছিলের প্রয়োজনীয়তা যেন আত্রেয়ীদের পরিজনেরা সকলেই অনুভব করছিলেন। এর পরেই ওই মহিলাদের আবেগ শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদের ভাষায় বদলে যায়। তাঁরা সমবেত হয়ে ওই শীতের রাতেই পাড়ার বাসিন্দাদের, আশাবরী আবাসনের ছ’টি ব্লকের বিভিন্ন ফ্ল্যাটের ও এলাকার সমস্ত আবাসন ঘুরে ঘুরে আবাসিকদের এদিনের মিছিলে সামিল হওয়ার আবেদন জানান। |
চন্দ্রাণীদেবী বলেন, “কিন্তু যে কোনও মিছিল করার আগে পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়, তাও আমাদের জানা ছিল না। তখন আত্রেয়ীর স্কুলের এক জন শিক্ষিকা ওই বিষয়ে আমাদের সাহায্য করেন। তাঁর পরিচিত এক জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে মিছিলের রুট-ম্যাপ জানানো হলে তিনিই পুলিশ প্রশাসনের অনুুমতি পাইয়ে দেন।” এদিন অবশ্য ওই ছ’জন মহিলা সরাসরি বহরমপুর থানায় চলে গিয়ে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গেও মিছিলের ব্যাপারে কথা বলে আসেন। সেই সঙ্গে বহরমপুরের বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই মিছিলে আসার আবেদন জানান। সুদেষ্ণাদেবী, সুমনাদেবী, রত্নাদেবী, কৃষ্ণাদেবীরা জানান, “নিজের পরিচিত সকলকে ফোন করে মিছিলে আসার কথাও জানানো হয়।”
এ জন্য প্রায় হাজার খানেক মোমবাতি, বুকে পরার জন্য কালো ব্যাজ কেনা হয়। তড়িঘড়ি বানাতে দেওয়া ফ্লেক্স। অপরাধীর কঠোর শাস্তির দাবির পাশাপাশি তাতে লেখা ছিল‘ছিঃ! সভ্য সমাজের লজ্জা।” যা এদিনে মিছিলের সামনে মোমবাতির আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। পাশাপাশি হাতে লেখা হয় বিভিন্ন পোস্টার-ব্যানার।
ওই মিছিলের কথা জানিয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার আবেদন জানানো হয় ফেসবুকে। কেউ লিখেছেন আশাবরী আবাসনে জমায়েত হয়ে মোমবাতি মিছিলে আমাদের সঙ্গে সামিল হন। কেননা, ওই ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া খুব জরুরি। তাতে সকলেই স্বেচ্ছায় প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়ে ‘লাইক’ ও ‘কমেন্ট’ করেছেন তার সংখ্যাও কম নয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জনের মম্তব্যে উদ্বেগও ধরা পড়েছে। ছবি-সহ মোমবাতি মিছিলের কথা ‘পোস্ট’ হয়েছে।
আত্রেয়ী যে স্কুলে পড়ত, সেই প্রভারানি পাবলিক স্কুলের ২৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় দেড়শো মত ছাত্রছাত্রী এদিন মিছিলে অংশ নেন। স্কুলের অভিভাবকরাও ছিলেন মিছিলের সামনের সারিতে। সব মিলিয়ে অভিনব ওই প্রতিবাদ মিছিল থেকে দূরে সরে থাকতে পারেননি বহরমপুরের নাগরিকরা। |