অবাঞ্ছিত অনুপ্রবেশ ও বহিরাগত সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য রুখতে বছর তিনেক আগে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছিল আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে। মঙ্গলবার রাতে সেই ক্যাম্পের পুলিশের বিরুদ্ধেই মদ্যপ অবস্থায় অশালীন আচরণের অভিযোগ উঠল সাফাই কর্মীদের কোয়ার্টারে গিয়ে। রাতেই পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান হাসপাতালের সাফাই কর্মী এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা। হাসপাতাল সুপার নির্মাল্য রায়ের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মীকে রাতেই ক্যাম্প থেকে তুলে নেওয়া হয়। আরামবাগের এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্র জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মৃণাল নন্দী নামে ওই এএসআইকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী অবশ্য বলেন, “কিছু বহিরাগত নিয়ে মদ-জুয়ার আসর বসেছে বলে খবর পেয়েছিলাম। তারই তল্লাশিতে যাওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে। হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ ক্যাম্প থাকুক, সমাজবিরোধীরা চাইছে না।”
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল চত্বরে সমাজবিরোধীদের ওঠাবসা নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। হাসপাতাল চত্বরে মদ-জুয়া-গাঁজার আসরে পুলিশি অভিযানও চলেছে বহু বার। নার্স কোয়ার্টারের সামনে মাতালদের অশালীন আচরণ, রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের থেকে ছিনতাই, এমনকী ধর্ষণের অভিযোগ নিয়েও এক সময়ে জেরবার ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ব্যতিব্যস্ত ছিল মহকুমা পুলিশ-প্রশাসনও।
এ সব অবাঞ্ছিত ঘটনা বন্ধ করতে হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতি বৈঠক করে গত ২০১১ সালের গোড়ায় স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের সিদ্ধান্ত হয়। তখন থেকেই পুলিশ ক্যাম্পে পালা করে একজন এএসআই এবং একজন কনস্টেবল থাকেন। দিন পনেরো মৃণালবাবু-সহ একজন কনস্টেবল ক্যাম্পে আসেন।
রাতের ঘটনা নিয়ে হাসপাতাল সাফাই কর্মীদের তরফে শঙ্কর জমাদারের অভিযোগ, “আমরা কেউ কোয়ার্টারে ছিলাম না। রাতে পুলিশ মদ খেয়ে ঘরে ঢুকে মশারি তুলে মেয়েদের গায়ে টর্চের আলো ফেলে। বদ মতলব ছিল বলে মেয়েরা বুঝতে পেরে আমাদের ডাকে। ওই পুলিশ কর্মীকে সরিয়ে দিতে হবে বলে রাতেই আমরা বিক্ষোভ দেখাই। মেয়েদের উত্যক্ত করার অভিযোগ করেছেন ভোলানাথ জমাদার, অভিজিৎ বাগেরাও।
তবে হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকা কর্মীদের বড় একটা অংশের অভিযোগ, কিছু সাফাই কর্মী এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের কোয়ার্টারে প্রতি রাতেই বাইরের কিছু ছেলে এসে মদ-জুয়ার আসর বসায়। দেহব্যবসায়ও চলে বলে তাঁদের অভিযোগ। এ বিষয়ে হাসপাতাল সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “কিছু বহিরাগত এসে অসামাজিক কাজকর্ম করে বলে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি মহকুমাশাসক ও পুলিশকে বলেছি।”
হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বুধবার সকালে হাসপাতালে এসে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মহকুমাশাসক এ বিষয়ে বলেন, “হাসপাতালে স্বাভাবিক পরিবেশ কোনও ভাবেই বিঘ্নিত হতে দেওয়া যাবে না।” ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি। |