অযত্নে পড়ে বই-কম্পিউটার, কর্মীর
অভাবে ভুগছে হাওড়ার বহু গ্রন্থাগার
র্মীর অভাবে ধুঁকছে হাওড়া জেলার অধিকাংশ সরকারি গ্রন্থাগার। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু গ্রন্থাগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে কোথাও আবার গ্রন্থাগার সপ্তাহে তিন দিন করে খোলা হচ্ছে। পাঠকদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে কর্মী নিয়োগ করে গ্রন্থাগারগুলি সুষ্ঠু ভাবে চালানোর দাবি জানানো হয়েছে।
বাগনানের পানিত্রাস শরৎ স্মৃতি গ্রন্থাগারে ১৯৮৭ সাল থেকে গ্রন্থাগারিক এবং সহকারি গ্রন্থাগারিক নেই। সামতাবেড়ে শরৎচন্দ্রের বাড়ির কাছে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারের অমূল্য সম্পদ হল কথাশিল্পীর নিজের সংগ্রহের বহু মূল্যবান গ্রন্থ ও পুঁথি। ১৯৮৭ সালে গ্রন্থাগারটিকে ‘টাউন লাইব্রেরি’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয় রাজ্য গ্রন্থাগার দফতর। কিন্তু ওই বছর থেকেই এখানে গ্রন্থাগারিকের পদটি খালি পড়ে। ২০১২ সালের গোড়ায় একজন গ্রন্থাগারিক কাজে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এক বছর পরেই তিনি অবসর নেন। টাউন লাইব্রেরি হিসাবে স্বীকৃত এই গ্রন্থাগারে থাকার কথা গ্রন্থাগারিক-সহ ৫ জন কর্মী। কিন্তু আছেন ৩ জন। ফলে একদিকে যেমন পাঠকদের নিয়মিত পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না, অন্য দিকে ব্যাহত হচ্ছে মূল্যবান গ্রন্থ ও পুঁথি সংরক্ষণের কাজ।
কর্মী না থাকায় এক বছর বন্ধ নাউল প্রগতি পাঠাগার। —নিজস্ব চিত্র।
এখানে এসে দেখা গেল একটি টিনের বড় বাক্সে অযত্নে পড়ে রয়েছে পুঁথিগুলি। পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এগুলি সংরক্ষণ করতে হলে প্রয়োজন টাকার। কিন্তু গ্রন্থাগারিক না-থাকায় টাকা চাওয়া বা প্রকল্প রচনা-সংক্রান্ত প্রশাসনিক কাজগুলি করা যাচ্ছে না। এখানে দু’টি কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে বছর দুই আগে। কিন্তু কম্পিউটার কোনও কাজে লাগছে না। পরিচালন সমিতির সম্পাদক ভাস্কর রায় বলেন, “সব কিছু ঠিকঠাক চালাতে গেলে প্রয়োজন গ্রন্থাগারিকের। তিনিই এ বিষয়ে প্রধান দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু পদটি শূন্য থাকায় সব কিছু ভেস্তে যেতে বসেছে।” গ্রন্থাগারে রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার বই। রয়েছেন ১৩০০ গ্রাহক। ছাত্র-ছাত্রী এবং চাকুরিপ্রার্থীদের উপযোগী বইপত্র থাকায় এই ধরনের পাঠকের সংখ্যা কম নয়। গ্রন্থাগারের কর্মী বাসুদেব প্রামাণিক বলেন, “আমি পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু একা কত দিক সামলাবো।”
বাগনারেই মুগকল্যাণ পল্লীভারতী পাঠাগার এ বছরেই পা দিয়েছে ১২৫ বছরে। এটি অবশ্য গ্রামীণ পাঠাগারের শ্রেণিভুক্ত। এখানে থাকার কথা একজন গ্রন্থাগারিক এবং একজন দফতরি। কিন্তু দফতরি পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এখানেও দেওয়া হয়েছে কম্পিউটার। গ্রন্থাগারিক তপনকুমার গুড়িয়া বলেন, “কম্পিউটারের মাধ্যমে বইয়ের তালিকা তৈরি করার কথা। কিন্তু সহকারী না থাকায় আমাকেই সব কাজ সামলাতে হচ্ছে। তালিকা তৈরির কাজে মনোনিবেশ করা যাচ্ছে না।” গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সম্পাদক অরুণকুমার ঘোষের কথায়, “বহুবার সংশ্লিষ্ট দফতরে আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু সহকারী পাঠানো হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমরাই মাঝে মাঝে এসে গ্রন্থাগারের কাজ সামলাই।” এখানেও ভিড় বাড়ছে ছাত্র-ছাত্রী ও চাকুরিপ্রার্থীদের। তাঁরা এখানে এসে নিয়মিত পড়াশোনা করেন। অরুণবাবু বলেন, “আমরা এই গ্রন্থাগারে একটি জাদুঘর তৈরি করছি। লোকসংস্কৃতির স্থানীয় গবেষক রয়েছেন। অন্যান্য পেশার মানুষও রয়েছেন। তাঁদের আমরা এই উদ্যোগে সামিল করছি। কিন্তু দিনের পর দিন এ ভাবে কর্মী না থাকলে গ্রন্থাগারের অস্তিত্বেই বিপন্ন হতে বসেছে।”
শ্যামপুরের নাউল প্রগতি পাঠাগারে কোনও কর্মী নেই। ফলে গ্রন্থাগারটি গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। অন্য দিকে, শ্যামপুরেরই নজরুল পাঠাগারে রয়েছেন শুধুমাত্র দফতরি। পাশেই সজনেখালি বাণীমন্দিরে কোনও গ্রন্থাগারিক বা কর্মী নেই। ফলে নজরুল পাঠাগারের দফতরি সপ্তাহে মাত্র দু’দিন সজনেখালি বাণীমন্দিরে এসে এই গ্রন্থাগারটিকে খোলেন। ওই দু’দিন আবার বন্ধ থাকে নজরুল পাঠাগার।
জেলা গ্রন্থাগার সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়ায় মোট ১২২টি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত গ্রন্থাগার রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১২টি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ২০টির মতো গ্রন্থাগার সপ্তাহে দু’তিন-দিন করে খোলা হয়। জেলা গ্রন্থাগারের এক আধিকারিক জানান, বিষয়টটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, “শুধু হাওড়া জেলাই নয়। এ ধরনের সমস্যা রাজ্য জুড়ে। মোট ১৭০০ পদ শূন্য। জরুরি ভিত্তিতে অন্তত অর্ধেক পদে যাতে গ্রন্থাগারিক এবং কর্মী নিয়োগ করা যায় তার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি।” এই দফতর সূত্রের খবর, নিয়োগ-সংক্রান্ত ফাইল অর্থ দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে অনুমোদন চেয়ে। তা এখনও আসেনি। মন্ত্রী বলেন, “অর্থ দফতরের কাছে আমরা নিয়মিত তদ্বির করছি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.