জেলাশাসকের বিরুদ্ধে মারধর ও গালিগালাজ করার অভিযোগে থানায় গেলেন সরকারি নাইট গার্ড ও কেয়ারটেকার। অন্য দিকে, জেলাশাসক আবার ওই দু’জনের বিরুদ্ধে সরকারি অতিথিকে সার্কিট হাউসে ঢুকতে না দেওয়া এবং বেআইনি ভাবে ওই বাড়ির একটা ঘর দখল করে রাখার পাল্টা অভিযোগ করলেন পুলিশে। জেলা প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তার সঙ্গে একেবারে নিচু তলার কর্মীদের এমন এক নজিরবিহীন বিতণ্ডার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার হাওড়ায় চাঞ্চল্য ছড়াল।
পুলিশি সূত্রে খবর, জেলা সার্কিট হাউসের কেয়ারটেকার বিকাশ রাউতের অভিযোগ, ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বেসামাল অবস্থায় আচমকাই সার্কিট হাউসে আসেন জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ। তিনি জানান, সার্কিট হাউসে ঢুকে জেলাশাসক জানতে চান, মঙ্গলবার রাতে কেন সরকারি অতিথিকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি? বিকাশ বলেন, “এর পরে আমি কিছু বলার আগেই উনি আমাকে মারতে শুরু করলেন।”
সার্কিট হাউসের আগেকার কেয়ারটেকার জিতেন্দ্রকুমার তিওয়ারি পরিবার নিয়ে এই বাড়িতেই থাকেন। তিনি এখন হাওড়ার ওল্ড কালেক্টরেট বিল্ডিংয়ের নাইট গার্ড। এর পরে তাঁকেও ডাকেন শুভাঞ্জনবাবু। জিতেন্দ্রর অভিযোগ, দেখামাত্রই কোনও কথা না বলে তাঁকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন জেলাশাসক। জিতেন্দ্র জানান, ওই সার্কিট হাউসের রান্নাঘরে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে থাকেন। এ দিন জিতেন্দ্র বলেন, “কেন রান্নাঘরে থাকি, প্রশ্ন তুলে স্যার আমাকে মারতে শুরু করলেন। স্ত্রীকেও গালি দিলেন।” এর পরেই হাওড়া থানায় গিয়ে জেলাশাসকের বিরুদ্ধে একটি জেনারেল ডায়েরি করেন জিতেন্দ্র।
কিন্তু সার্কিট হাউসের কর্মী না হয়েও সেখানে তিনি থাকেন কেন? জিতেন্দ্র বলেন, “১২ বছর ওই সার্কিট হাউসের কেয়ারটেকার ছিলাম। দেড় বছর আগে আমাকে বদলি করে দেওয়া হয় ওল্ড কালেক্টরেট বিল্ডিংয়ে। এখনও আমি সরকারি কোয়ার্টার পাইনি। তাই ওখানেই থাকি।” পুলিশি সূত্রের খবর, সার্কিট হাউসের রান্নাঘর দখল করে রাখা ও প্রভাব খাটানোর জন্য জিতেন্দ্রর বিরুদ্ধে আগেও বেনামে কিছু অভিযোগ জমা পড়েছিল হাওড়া থানায়। এ দিন ফের ওই দখলের বিষয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন শুভাঞ্জনবাবু।
মারধর ও গালিগালাজের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে শুভাঞ্জনবাবু বলেন, “অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হয়েছে। কোনও মারধর, গালিগালাজ করিনি।” তাঁর জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর কাছে অভিযোগ আসছিল যে, সার্কিট হাউসে বেআইনি ভাবে লোকজন বসবাস করছেন। সরকারি কর্মীরা সেখানে থাকতে পারছেন না। এর উপর মঙ্গলবার রাতে সরকারি কর্মীরাও ওই সার্কিট হাউসে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান। “বেআইনি ভাবে বসবাস করা লোকজনকে উঠে যেতে বলতেই এ দিন ভোরে গিয়েছিলাম,” বলেই দাবি করেছেন হাওড়ার জেলাশাসক।
পুলিশ সূত্রে বলা হচ্ছে, মহাত্মা গাঁধী রোডের উপর জেলাশাসকের বাংলোর থেকে কিছুটা দূরেই রয়েছে জেলার সার্কিট হাউসটি। দোতলা ওই বাড়ির এক তলায় রয়েছে অতিথি নিবাস। দোতলায় থাকেন হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার অজেয় রাণাডে। মঙ্গলবার রাতে শুভাঞ্জনবাবুর বন্ধু তথা কয়েক জন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মী ওই সার্কিট হাউসে থাকতে গিয়েছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই সরকারি কাজে এসেছিলেন। কিন্তু কেয়ারটেকার বিকাশ দরজা না খোলায় ফিরে যেতে হয়েছিল ওই অতিথিদের।
এ দিন জিতেন্দ্র ও বিকাশ দু’জনেই অভিযোগ করে বলেন, “জেলাশাসকের অতিথিরা ফিরে গিয়েছেন বলেই উনি ক্ষিপ্ত হয়ে এসে মারধর করতে শুরু করেছিলেন।” কিন্তু বিকাশই বা রাতে দরজা খোলেননি কেন? তাঁর দাবি, “ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাই আওয়াজ শুনতে পাইনি।” হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রাণাডে বলেন, “জেলাশাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। আবার অভিযোগকারী জিতেন্দ্রকুমার তিওয়ারির বিরুদ্ধেও জবরদখল করার অভিযোগ উঠেছে। বিকাশের বিরুদ্ধে সরকারি অতিথিকে থাকতে না দেওয়ার অভিযোগও জমা পড়েছে। সমস্ত ঘটনারই তদন্ত করছি।”
এ দিকে এই ঘটনার পর এ দিন দুপুর থেকে হাওড়ার প্রশাসনিক মহলে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরে জেলাশাসকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে শাস্তির দাবিতে আদালত চত্বরে মিছিল বের করে আইএনটিইউসি সমর্থিত কনফেডারেশন অব স্টেট গর্ভমেন্ট এমপ্লয়িজ। ওই সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “যদি বেআইনি ভাবে কেউ থেকে থাকে, সেখানে সেই দখলদারকে ওঠাতে জেলাশাসক নিজে কেন ভোরবেলা চলে যাবেন? এর প্রতিবাদে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।” |