দেবযানী খোবরাগাড়েকে এখনও জি-ওয়ান ভিসা দেয়নি আমেরিকা। এই ভিসা পেলে কূটনীতিকদের সমতুল রক্ষাকবচ পাবেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে ভারতে মার্কিন দূতাবাসের সুযোগ সুবিধা কমিয়ে আরও চাপ বাড়াল নয়াদিল্লি।
নয়াদিল্লিতে মার্কিন দূতাবাসের একটি ক্লাব রয়েছে। কূটনীতিক ছাড়াও এ দেশে বসবাসকারী অন্য মার্কিন নাগরিক এবং কূটনীতিকদের অতিথিরা সেই ক্লাবের পানশালা, সুইমিং পুল, বিউটি পার্লার থেকে জিম সবই ব্যবহার করতে পারতেন। এ ছাড়াও সেখানে একটি ফুটবল মাঠ এবং টেনিস কোর্টও রয়েছে। ১৬ জানুয়ারির মধ্যে এই ক্লাবটির বাণিজ্যিক কাজকর্ম গুটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। পাশাপাশি এ-ও জানানো হয়েছে, মার্কিন দূতাবাস এবং কূটনীতিকদের গাড়িও এ বার থেকে স্থানীয় ট্র্যাফিক আইনের আওতায় পড়বে।
পরিচারিকার ভিসায় মজুরি সংক্রান্ত ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ১২ ডিসেম্বর ভরা রাস্তায় হাতকড়া পরিয়ে গ্রেফতার করা হয় দেবযানী খোবরাগাড়েকে। অভিযোগ, নগ্ন করে তল্লাশি চালানোর পর মাদকাসক্তদের সঙ্গে এক কুঠুরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। গোটা ঘটনায় নিজেদের অসন্তোষ জানাতে একাধিক কঠোর পদক্ষেপের পাশাপাশি দেবযানী যাতে পূর্ণ রক্ষাকবচ পান, সে জন্য তাঁকে তড়িঘড়ি রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থায়ী কমিটিতেও বদলি করে দিল্লি। ২০ ডিসেম্বর সেই কাগজ মার্কিন বিদেশ দফতরের কাছে পৌঁছে গেলেও এখনও তা খতিয়ে দেখছে তারা। ভারতের দাবি ছিল, খোবরাগাড়ের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাক ওবামা প্রশাসন। সে পথেও যে তারা হাঁটবে না, তা আগেই জানায় আমেরিকা।
ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগে দেবযানী খোবরাগাড়ের বিরুদ্ধে ১৩ জানুয়ারি চার্জ গঠন হওয়ার কথা। তার আগে পর্যন্ত তাঁকে জি-ওয়ান ভিসা দেওয়ার বিষয়টি ঝুলিয়েই রেখেছে ওয়াশিংটন। গত সোমবার রাতে এই চার্জ গঠন করার প্রক্রিয়া আরও এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন জানান দেবযানীর আইনজীবী। সরকারি কৌঁসুলি এর বিপক্ষে সওয়াল করলেও এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মনে করা হচ্ছে, তার আগে মার্কিন দূতাবাসের ক্লাবটির কাজকর্ম বন্ধ করতে বলে চাপ বাড়িয়ে রাখল দিল্লি।
এই নিয়ে এ দিন প্রশ্ন করা হয়েছিল বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে। তিনি জানান, ভিয়েনা সনদেই এমন উল্লেখ রয়েছে। সনদের ৪১(৩) ধারায় বলা রয়েছে দূতাবাসের কাজের সঙ্গে খাপ খায় না, এমন কোনও বাণিজ্যিক কাজ তার চৌহদ্দির মধ্যে করা যাবে না। সরকারি সূত্রে খবর, দূতাবাসের মধ্যেকার ওই ক্লাবটি আমেরিকান কমিউনিটি সাপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (এসিএসএ) অধীন। এসিএসএ তাদের সদস্যদের ‘কোটা’ থেকেও বিনা শুল্কের পানীয়, সিগারেট ইত্যাদি তুলত। অভিযোগ, সে সব থেকে কিছু কিছু তারা পরে বিক্রিও করত। এ বার থেকে তারা আর ‘কোটা’র বাড়তি পানীয় বা সিগারেট তুলতে পারবে না। সরকারি সূত্রে খবর, এই ব্যাপারে ভারত তাদের বক্তব্য আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে। এত দিন তারা কত কর দিয়েছে, তা দেখতে আয়কর রিটার্নও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। মার্কিন দূতাবাসের কোনও গাড়িতে লালবাতি লাগালে, ভুল জায়গায় গাড়ি রাখলে বা ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে এখন থেকে তা আর বরদাস্ত করা হবে না বলেও জানান খুরশিদ।
চার্জ গঠন এক মাস পিছিয়ে দেওয়ার জন্য দেবযানী যে আবেদন করেছেন, তা নিয়ে আমেরিকা কী বলছে? গত কালই মার্কিন আইনজীবী প্রীত ভারারা জেলা আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, দেবযানী যে আরও এক মাস সময় চাইছেন, তা ভিত্তিহীন। চার্জ গঠনের পরও তাঁদের মধ্যে আলোচনা চলতে পারে। আজ ভারারার এই মন্তব্য নিয়ে মুখ খুলেছেন খোবরাগাড়ের আইনজীবী ড্যানিয়েল আরশ্যাক। তিনি জানান, দু’পক্ষের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তা গোপন রাখা হবে বলেই চুক্তি হয়। ভারারা ইচ্ছে করেই এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ আরশ্যাকের।
|