|
|
|
|
ফের রাতের চলন্ত ট্রেনই জ্বলন্ত কফিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
বেঙ্গালুরু-নান্দেড় এক্সপ্রেসে আগুন লেগেছিল ২৮ ডিসেম্বর। সেই ঘটনায় ২৬ যাত্রীর মৃত্যুর ঠিক ১০ দিনের মাথায় আবার ট্রেনে আগুন। এ বার মুম্বই-দেহরাদূন এক্সপ্রেসে। মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের ঠাণে সংলগ্ন দাহানু স্টেশনের কাছে ওই দুর্ঘটনায় পুড়ে মারা গিয়েছেন তিনটি কামরার ন’জন। আহত ১০ যাত্রী।
নান্দেড় এক্সপ্রেসে শেষ রাতে আগুন লেগেছিল বাতানুকূল কামরায়। মুম্বই-দেহরাদূন এক্সপ্রেসে সাধারণ তিনটি কামরায় আগুন লাগে গভীর রাতেই। যাত্রীরা তখন গভীর ঘুমে। রাতের ট্রেনগুলিই কেন এ ভাবে কার্যত চলন্ত ও জ্বলন্ত কফিনে পরিণত হচ্ছে, তার রহস্য ভেদ করতে পারেনি রেল। যদিও আগেকার অগ্নিকাণ্ড-সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার পরে যেমনটি হয়েছিল, সেই রীতি মেনে চিফ সেফটি কমিশনারের পাশাপাশি রেলের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খার্গে।
মঙ্গলবার ঠিক কী ঘটেছিল?
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত আড়াইটে নাগাদ ছুটন্ত মুম্বই-দেহরাদূন এক্সপ্রেসের এস-৩ কামরায় আগুন জ্বলতে দেখেন একটি লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান। ওয়াকিটকিতে ট্রেনের গার্ডকে খবর দেন। গার্ড খবর দেন চালককে। চালক ঘোলবাদ হল্ট স্টেশনে ট্রেন থামিয়ে দেন। দমকলের তিনটি ইঞ্জিন ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তত ক্ষণে ন’জন যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। কমবেশি পুড়েছে ট্রেনটির তিনটি কামরা। |
|
জ্বলছে মুম্বই-দেহরাদূন এক্সপ্রেস। বুধবার। ছবি: পিটিআই। |
আগুন লাগল কী ভাবে?
প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, ট্রেনের কামরায় কোনও দাহ্য পদার্থ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তবে শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। ফরেন্সিক পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে কামরার বৈদ্যুতিক লাইনও পরীক্ষা করা হচ্ছে। রেল বোর্ডের কর্তাদের একাংশ মনে করেন, রেলের বিভিন্ন জোনে অবিলম্বে ‘সেফটি অডিট’ বা নিরাপত্তা সমীক্ষা চালু করা প্রয়োজন। ট্রেনে যাত্রী-নিরাপত্তা কোথায়, কতটা এবং কী অবস্থায় রয়েছে, ওই অডিট হলেই সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
রেল মন্ত্রকের একাংশের বক্তব্য, মুম্বই-দেহরাদূন এক্সপ্রেসে সিগারেট বা জ্বলন্ত স্টোভের মতো ‘বাইরের কোনও উৎস’ থেকে আগুন ছড়িয়েছে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। যে-ভাবে প্রায় একই সময়ে পরপর তিনটি কামরায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে রহস্যের গন্ধও পাচ্ছেন তাঁরা।
রেলের হিসেব, ২০১২ থেকে এ-পর্যন্ত ট্রেনে আগুন লেগে ৬৫ যাত্রীর প্রাণ গিয়েছে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ২১ জানুয়ারি সব জোনের জেনারেল ম্যানেজারকে দিল্লিতে জরুরি বৈঠকে ডেকেছেন। ওই বৈঠকে যাত্রী-নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। শর্ট সার্কিটই হোক বা সিগারেট কিংবা স্টোভ, কেন বারবার এ ভাবে যাত্রীদের পুড়ে মরতে হচ্ছে, তার জন্য দূরপাল্লার ট্রেনে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং খতিয়ে দেখা হবে।
রেল মন্ত্রকের আত্মসমীক্ষা হল, তাদের সব থেকে বড় ব্যর্থতা হল কার্যকর ফায়ার ও স্মোক অ্যালার্ম চালু করতে না-পারা। ট্রেনে আগুনের শিখা বা ধোঁয়া বেরোলে ওই অ্যালার্ম বেজে ওঠে। পরীক্ষামূলক ভাবে ভুবনেশ্বর রাজধানীতে তা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু সফল হয়নি। মুম্বই-দেহরাদূন এক্সপ্রেসের অগ্নিকাণ্ডে ন’জনের অর্ধেকই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ওই অ্যালার্ম থাকলে তাঁদের এ ভাবে মরতে হত না বলে মনে করেছে মন্ত্রক। |
|
|
|
|
|