|
|
|
|
অন্ধ্রে সস্ত্রীক ধরা দিলেন মাওবাদী নেতা গুড়সা |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি
৮ জানুয়ারি |
দণ্ডকারণ্যের প্রবাদ ছিল, গুড়সা উসেন্ডি কখনও মরে না। মাওবাদী নেতা সেই গুড়সা
উসেন্ডি আজ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন।
গত বছর মে মাসে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতাদের উপর মাওবাদী হামলার পরে তখনও তিন রাত কাটেনি। নন্দকুমার পটেল, বিদ্যাচরণ শুক্ল, মহেন্দ্র কর্মা থেকে শুরু করে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের প্রথম সারির সকলেই নিহত। মাওবাদীদের তরফে বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, তারাই এই হামলা চালিয়েছে। সেই বিবৃতি দিয়েছিলেন গুড়সা উসেন্ডি। দণ্ডকারণ্য স্পেশ্যাল জোনাল কমিটির মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, সালওয়া জুড়ুম-এর ‘অত্যাচারে’র প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নকশাল দমন বিভাগের কর্তারা বলছেন, গুড়সা উসেন্ডি আসলে নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তির নাম নয়। মাওবাদীদের যিনিই দণ্ডকারণ্য স্পেশ্যাল জোনাল কমিটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব নেন, তাঁর নামই হয় গুড়সা উসেন্ডি। মাওবাদীদের মুখপাত্র ওই পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বিবৃতি, ই-মেল পাঠান। ২০০০ সালে অবুঝমাঢ়ে পুলিশি অভিযানে গুড়সা উসেন্ডি নামে ১৭ বছরের এক তরুণ মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছিল। তখন থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। সেই জন্যই দন্তেওয়াড়া, দণ্ডকারণ্য, অবুঝমাঢ়ের অরণ্যের প্রবাদ হল, গুডসা উসেন্ডি কখনও মরে না। উসেন্ডির নামে ফেসবুকে যে পেজ রয়েছে, সেখানেও পরিচিতিতে বলা আছে, ‘দন্তেওয়াড়ার ফ্যান্টম’।
আজ যে গুড়সা উসেন্ডি অন্ধ্র পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন, তাঁর আসল নাম গুমুডাভেল্লি বেঙ্কটাকৃষ্ণ প্রসাদ। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী রাজি-ও। ছত্তীসগঢ় পুলিশের একাংশ অবশ্য বলছেন, আত্মসমর্পণকারী প্রসাদই কি না, সে কথা অন্ধ্র পুলিশ এখনও তাঁদের নিশ্চিত করে জানাননি। কিন্তু অন্ধ্র পুলিশের তরফে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে, ৫৩ বছরের মাওবাদী নেতা প্রসাদ অসুস্থতার কারণেই আত্মসমর্পণ করেছেন। যদিও পুলিশেরই আর একটি সূত্রের খবর, সংগঠনের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বই এর কারণ। যার মূলে রয়েছে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেস নেতাদের উপর হামলার ঘটনা।
গোয়েন্দা-কর্তারা বলছেন, ছত্তীসগঢ়ে শুধু হামলার দায় স্বীকার নয়, হামলার নির্দেশও দিয়েছিলেন উসেন্ডি স্বয়ং ওরফে প্রসাদ। কিন্তু হামলার পরে তিনি নিজেই হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ, উসেন্ডির মনে হয়েছিল, বড্ড বেশি সংখ্যায় নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। হামলার লক্ষ্য ছিলেন শুধু রাজনৈতিক নেতারা। সেই নির্দেশ নিচুতলার ক্যাডাররা ঠিক মতো পালন করেননি। তাই পরবর্তী কালে সংগঠনের মধ্যে ওই হামলার কড়া সমালোচনা করেন উসেন্ডি।
উসেন্ডির মতো অনেক নেতারই মত ছিল, এই ঘটনার ফলে মাওবাদীদের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হবে। অতিরিক্ত হিংসার আশ্রয় নিতে গিয়ে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি হলে জনসমর্থন হারাতে হবে। উল্টো দিকের নেতাদের যুক্তি ছিল, যখন রাজ্যে রাজ্যে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু হয়েছে, তখন পাল্টা মারের পথ নেওয়াটাই একমাত্র কৌশল। জোনাল কমিটি থেকে শুরু করে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। যার ফলে দলের মধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েন উসেন্ডি। শেষ পর্যন্ত বীতশ্রদ্ধ হয়েই তিনি আজ আত্মসমর্পণ করলেন বলে মনে করছে পুলিশ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য উসেন্ডির আত্মসমর্পণকে বিরাট সাফল্য হিসেবেই দেখছে। শুধু কংগ্রেস নেতাদের কনভয়ে হামলা নয়। তার আগে ছত্তীসগঢ়ের টাড়মেটলায় সিআরপিএফ-এর উপর হামলাতেও গুড়সা উসেন্ডি ছিলেন প্রধান
মস্তিষ্ক। ওই হামলায় ৭৬ জন জওয়ান প্রাণ হারান।
বছর পাঁচেক আগে ওয়ারঙ্গল জেলার মাওবাদী নেতা গুমুডাভেল্লি ভেঙ্কটাকৃষ্ণ প্রসাদ দণ্ডকারণ্য স্পেশ্যাল জোনাল কমিটির মুখপাত্রের দায়িত্ব নেন। তার পর থেকে তিনিও গুড়সা উসেন্ডির ছদ্মনাম নেন। দু’বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যুর পর এই গুড়সা উসেন্ডি আরও পরিচিতি পান। পুলিশের রেকর্ড বলছে, স্নাতক হওয়ার পর ২০ বছর বয়সেই বাড়ি ছেড়েছিলেন প্রসাদ। যোগ দেন পিপল্স ওয়ার গ্রুপে। সেখান থেকে সিপিআই (মাওবাদী)। গত তিন দশক ধরে ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রের জঙ্গলে গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন প্রসাদ। গেরিলা হামলার বদলে পরিস্থিতি অনুযায়ী দলের রণকৌশল তৈরি, সাংগঠনিক কাজকর্ম, পরিস্থিতির পর্যালোচনার কাজেই তিনি বেশি
দক্ষ ছিলেন। বরাবরই তাঁর মত ছিল, শেষ উপায় হিসেবেই হিংসার আশ্রয় নেওয়া উচিত।
লোকসভা নির্বাচনের আগে উসেন্ডির এই আত্মসমর্পণ মাওবাদী সংগঠনের উপরে বড় আঘাত হানবে বলে আশা করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কারণ মন্ত্রকের তৈরি গোপন নোট বলছে, দক্ষিণ বস্তারে বসে মাওবাদীদের শীর্ষনেতারা এই মুহূর্তে পরিস্থিতির পর্যালোচনায় ব্যস্ত। তাঁদের ধারণা, বিধানসভা নির্বাচনে ছত্তীসগঢ়ে যে পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল, লোকসভা ভোটে ততটা করা যাবে না। সুতরাং সেই সুযোগে ভোট বয়কটের জন্য চাপ তৈরি করা সহজ হবে। ছত্তীসগঢ়ের কোন গ্রামের কারা সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নিচ্ছেন, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। মন্ত্রকের কর্তাদের আশা, সাংগঠনিক এই ব্যস্ততার সময় উসেন্ডির না থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
|
পুরনো খবর: ছত্তীসগঢ়ে খতম সালওয়া জুড়ুমের হোতা, জখম বিদ্যাচরণ |
|
|
|
|
|