গত বছরটা শুরু হয়েছিল দমদম স্টেশনের কাছে জোড়া খুন দিয়ে। শেষ হয়েছে আরও একটি খুন, গুলির লড়াইয়ে। চলতি বছরেও সেই ধারা অব্যাহত। মঙ্গলবার ভরসন্ধ্যায় দমদমের শ্যামনগরে দুষ্কৃতীদের বুলেট বৃষ্টিতে গুরুতর জখম হয় এক যুবক। পরপর দু’বছরের দু’টি ঘটনার পুলিশি তদন্তেই দুষ্কৃতীদের এলাকা দখলের লড়াইয়ের কথা সামনে এসেছে। সেই সঙ্গে দমদমবাসীদের অভিযোগ, বছর পেরোলেও স্থানীয়দের নিরাপত্তা সেই তিমিরেই রয়ে গেল। নতুন বছরেও বদলাল না দমদমে দুষ্কৃতী-তাণ্ডবের ছবিটা।
মঙ্গলবারের ঘটনার তদন্তে নেমে ফের দুষ্কৃতীদের এলাকা দখলের লড়াইয়ের গল্পই দেখতে পাচ্ছে পুলিশ। প্রশ্ন উঠেছে, গত এক বছরে দমদমের কুখ্যাত দুষ্কৃতী রাজেশ নায়েক-সহ বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরেও কেন এলাকায় দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব কমছে না? পুলিশের এক অংশের মতে, রাজেশ গ্রেফতার হওয়ার পরে দমদমের শ্যামনগর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা এখন কার দখলে যাবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে লড়াই। রাজেশ জেলে গেলেও এখন জামিনে মুক্ত এক সময়ে রাজেশের প্রতিদ্বন্দ্বী গেদু। ফলে এখন পাল্টাচ্ছে নানা সমীকরণ। হচ্ছে দলবদল। পুলিশের অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরেই চলছে আক্রমণ, প্রতি আক্রমণ।
মঙ্গলবার কয়েক জন দুষ্কৃতী ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী সুরেশ মিশ্র ওরফে ল্যাংড়া সুরেশকে গুলি করে। পুলিশ জেনেছে, সুরেশেরও রাজেশের ঘনিষ্ঠ ছিল। আরজিকরে সে পুলিশকে জানায়, তাকে গুলি করেছে নাটা কার্তিক নামে এক যুবক। পুলিশ জেনেছে, আগে নাটা কার্তিক ছিল রাজেশের দলে। মাস খানেক আগে বার করে দেওয়া হয় তাকে। পুলিশের অনুমান, বদলা নিতেই সুরেশের উপরে হামলা করে সে।
পুলিশ আরও জেনেছে, গত কয়েক বছর ধরে রাজেশ ওড়িশায় বসে দমদমের ব্যবসায়ী-প্রোমোটারদের থেকে তোলাবাজি চালিয়েছে। সেখানে ইট-বালি-সিমেন্টের সরবরাহের বরাত বেশি পেয়েছে রাজেশের সিন্ডিকেটের যুবকরাই। পুলিশ জেনেছে, সুরেশ এক সময়ে একটি কারখানায় দারোয়ানের কাজ করত। রাজেশের সিন্ডিকেট থেকে ইট-বালি-সিমেন্টের সরবরাহের ব্যবসা করে গত কয়েক বছরে তার আর্থিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়। রাজেশের সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দী গেদুর এলাকা ভাগ করা থাকলেও বেশির ভাগ সময়েই সেই ভাগাভাগি মানা হয়নি। যার জেরে গত বছর মাঝেমধ্যেই অশান্তি হয়েছে।
তবে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে গত বছরের শেষ থেকে। রাজেশের দলের বেশ কয়েক জনকে ধরে ফেলে পুলিশ। মাস খানেক আগে সকালে দমদমে হরিজনপল্লিতে গেদুর সঙ্গে রাজেশের দলের লোকেদের গুলির লড়াই হয়। মারা যায় ডায়নস নামে এক দুষ্কৃতী। ওই ঘটনায় রাজেশের বোন রাখী নায়েক ও ভাই বাবু নায়েক ধরা পড়ে। এতে রাজেশের দল কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। পুলিশ জানতে পারে, রাজেশ ওড়িশায় বসে বোন রাখীকে দিয়েই দল চালাত। এর কিছু দিন পরেই ফের আসে বিধাননগর কমিশনারেটের সাফল্য। এ বার ওড়িশা থেকে ধরা পড়ে রাজেশ।
তবে রাজেশকে ধরে যে দমদেম দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব বন্ধ হবে না, পুলিশ তা টের পেয়েছে মঙ্গলবারের ঘটনায়। পুলিশের অনুমান, রাজেশের দল দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এখন গেদু ফের দমদমে তার নিজের জমি উদ্ধারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠতে পারে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, “আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। এই ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে কয়েকটা জায়গায় রাতভর তল্লাশি চলেছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।” |