সুরক্ষায় ফাঁক আছে, তা জানা ছিল আগেই। তা-ও বদলায়নি পরিস্থিতি। বরং ফের এক বার তা সামনে আসার পরেও কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ স্রেফ মিথ্যে অভিযোগ বলে উড়িয়ে দিলেন বিষয়টি।
বিদেশ থেকে আসা পাচারকারীরা যাতে শুল্ক অফিসারদের নজর এড়িয়ে পালাতে না পারে, সে জন্য কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনালে রয়েছে কাচের দেওয়াল। অথচ সেই দেওয়ালেরই মাঝ বরাবর বড়সড় ফাঁক। সেখান দিয়ে হাত গলিয়ে চলছে সোনা পাচার। ধরাও পড়েছে পাচারকারী। বিষয়টি জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষকেও। তবু সুরক্ষার হাল যে সেই তিমিরেই, তা ফের প্রমাণিত হল।
বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা অবশ্য তার পরেও বলছেন, “আন্তর্জাতিক উড়ানের যাত্রীর কোনও ভাবেই দেওয়ালের কাছে আসার কথা নয়। আসতে গেলে শুল্ক দফতর পেরিয়ে আসতে হবে। ফলে এই অভিযোগ ঠিক নয়।”
বিমানবন্দর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতে ১ কোটি ২২ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা মূল্যের সোনার বিস্কুট এ ভাবেই ফাঁক গলে চলে যাচ্ছিল বিমানবন্দরের দর্শনার্থী এলাকায় থাকা পাচারকারীর দোসরের কাছে। কিন্তু শুল্ক দফতরের তৎপরতায় ধরা পড়ে যান দু’জনেই।
শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এ ভাবেই পাচারের সময়ে ধরা পড়ে এক জন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এ বারও বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে শুল্ক দফতরের অতিরিক্ত কমিশনার রামেশ্বর মিনা জানান।
রামেশ্বর মিনা জানান, ধৃত পাচারকারীর নাম দিলীপ রাও। তার দোসরের নাম প্রকাশ বাল্মীকি। দু’জনেই বিমানবন্দরের কাছে থাকেন। দিলীপের কাছে ৪ কিলো ২০৪ গ্রাম সোনা মিলেছে। রামেশ্বর জানান, ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০ কোটি টাকার ৬২ কিলোগ্রাম সোনা বাজেয়াপ্ত করেছে বিমানবন্দরের শুল্ক দফতর। একটি আর্থিক বছরে এত বেশি সোনা বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে নেই।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে তাই এয়ারওয়েজের উড়ানে ব্যাঙ্কক থেকে শহরে আসেন দিলীপ। তাঁর কাছে ছিল মোট ১৪টি বিভিন্ন আকৃতি ও ওজনের সোনার বিস্কুট। দু’টি বিস্কুটে সুইৎজারল্যান্ড ব্যাঙ্কের ছাপ মারা ছিল। শুল্ক দফতর সূত্রে খবর, এই সমস্ত সোনা যে সিঙ্গাপুরের ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়েছে, তারও প্রমাণ মিলেছে।
মঙ্গলবার রাতে টিকিট কেটে দর্শনার্থী হিসেবে প্রকাশ বিমানবন্দরে ঢোকেন। কলকাতায় নামার পরে দিলীপ দেওয়ালের মাঝে দরজার ফাঁক দিয়ে সোনার বিস্কুট ভরা প্যাকেট তুলে দেন প্রকাশের হাতে। কিন্তু শুল্ক অফিসারেরা যে নজর রাখতে শুরু করেছেন, তা খেয়াল করেননি তাঁরা। এর পরেই দু’দিক থেকে দু’জনকে হাতেনাতে ধরা হয়। শুল্ক দফতর সূত্রের খবর, এই কাজের জন্য কিলোগ্রাম প্রতি ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা ছিল দিলীপের। ভাগ পাওয়ার কথা ছিল প্রকাশেরও। যারা টাকা বিনিয়োগ করে এই পাচারের কাজ করছে, তারা বিদেশ থেকে আমদানি করা প্রতি কিলোগ্রাম সোনায় ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছে বলে জেনেছেন শুল্ক অফিসারেরা। তাঁরা জানান, ব্যাঙ্ককে এখন সোনার দাম প্রায় ২০ লক্ষ টাকা কেজি। ভারতে তা বিক্রি হচ্ছে ৩০ লক্ষ টাকায়। |