এক ব্যক্তির দুই আধার কার্ড, দায় এড়াতে চাপান-উতোর
যেন একটা নিলে আর একটা ‘ফ্রি’!
ছবি তুলিয়ে, আঙুলের ছাপ, চোখের মণি স্ক্যান করিয়ে হা-পিত্যেশ করে আধার কার্ডের জন্য বসে আছেন— এ রাজ্যে এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। সেখানে বেলেঘাটার উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে এখন দু’-দু’টি আধার কার্ড! দু’টি কার্ডে সব কিছুই বিলকুল এক। শুধু নম্বর দু’টিই আলাদা।
জোড়া আধার কার্ড নিয়ে এখন কী করবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না উজ্জ্বলবাবু। রান্নার গ্যাসের ডিলারের কাছে বা অন্য জায়গায় প্রমাণপত্র হিসেবে কোন কার্ডটি দাখিল করবেন! শুধু তা-ই নয়, দু’টি আধার নম্বর থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও আইনভঙ্গের অভিযোগ উঠবে কি না, তা নিয়েও রীতিমতো চিন্তায় তিনি।
কী করে উজ্জ্বলবাবু দু’টি আধার কার্ড পেলেন? ২০১২ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী ও দুই পুত্রের সঙ্গে স্থানীয় ডাকঘরে যান উজ্জ্বলবাবু। সেখানে তাঁদের ছবি তোলা-সহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয়। এর দু’মাসের মধ্যে তাঁরা সকলেই আধার কার্ড হাতে পান।
গোল বাধে আরও মাস ছয়েক পরে। সেই সময়ে জনগণনা দফতর ফের নতুন করে আধারের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু করে। উজ্জ্বলবাবুর দাবি, যে প্রতিনিধি তাঁর বাড়িতে দ্বিতীয় বার বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের কথা জানতে এসেছিলেন, তাঁকে তিনি তাঁর আধার কার্ড হয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। উজ্জ্বলবাবুর দাবি, ওই প্রতিনিধি তাঁকে জানান, পুরনো সব তথ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আগের সব আধার কার্ডও বাতিল করা হয়েছে। তাই তাঁদের নতুন করে কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে।
এই দুই আধার কার্ড নিয়েই সমস্যায় উজ্জ্বলবাবু। —নিজস্ব চিত্র।
সেই মতো উজ্জ্বলবাবু নির্দিষ্ট দিনে পরিবারের সকলকে নিয়ে শিবিরে গিয়ে ফের ছবি তুলে বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দিয়ে নাম নথিভুক্ত করে আসেন। তবে দ্বিতীয় বার শুধু তাঁর নামেই আধার কার্ড আসে। এর পরে আবেদনপত্রের রশিদে লেখা ‘হেল্প লাইন’-এ ফোন করে তিনি জানতে পারেন, প্রথম বার বৈধ আধার কার্ড পাওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের অন্য সদস্যের দ্বিতীয় বারের আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
এই কথা শুনেই সংশয় দেখা দেয় উজ্জ্বলবাবুর। স্ত্রী-পুত্রদের দ্বিতীয় বারের আবেদন বাতিল হলে একই যুক্তিতে তাঁর আবেদনও কেন বাতিল করা হল না? তাঁর নামে দু’টি কার্ডের মধ্যে এ বার কোনটি তিনি তাঁর পরিচয়পত্র হিসেবে দাখিল করবেন? উজ্জ্বলবাবু বলেন, “জবাবের জন্য কোথায় যেতে হবে, তা জানি না। তবে পুরসভায় এ নিয়ে খোঁজ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ এ নিয়ে কিছু বলতে পারেননি।”
সরকারি সূত্রের খবর, আধারের জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নিয়ে গোড়ায় একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। প্রথমে ঠিক হয়েছিল দেশের সর্বত্রই আধারের গোটা দায়িত্বে থাকবে ইউআইডিএআই। অর্থাৎ, নাগরিকদের বায়োমেট্রিক তথ্যও যেমন তাঁরা সংগ্রহ করবেন, তেমনই সেই তথ্যের ভিত্তিতে আধার নম্বর ও কার্ড তৈরি করবেনও তাঁরা। সেই মতো ডাকঘর এবং কয়েকটি ব্যাঙ্কের শাখায় বায়োমেট্রিক তথ্যের শিবিরের আয়োজন করে ইউআইডিএআই। উজ্জ্বলবাবুর মতো অনেকেই তখন সেখানে গিয়ে ছবি তুলে আসেন এবং পরে আধার কার্ডও পান।
কিন্তু পরে বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে মতবিরোধের জেরে কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয়, কিছু রাজ্যে ওই ব্যবস্থা চালু থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মতো কয়েকটি রাজ্যে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব নেবে জনগণনা দফতর। সেই তথ্য তারা পাঠিয়ে দেবে ইউআইডিএআই-এর কাছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আধার নম্বর ও কার্ড তৈরি করবে ইউআইডিএআই। নিয়ম অনুযায়ী, উজ্জ্বলবাবুর তথ্য এক বার সংগ্রহ করে আধার কার্ড তৈরি হওয়ার পরে ফের তাঁদের তথ্য নেওয়ার কথা নয়। গলদ হয়েছে এখানেই।
কিন্তু দ্বিতীয় বার তথ্য নিয়ে তা কার্ড তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে ফেললে কম্পিউটারই তো তা বাতিল করে জানিয়ে দেবে ওই ব্যক্তির কার্ড আগেই হয়ে গিয়েছে। যেমনটি ঘটেছে উজ্জ্বলবাবুর পরিবারের অন্যদের ক্ষেত্রে। কিন্তু উজ্জ্বলবাবুর বেলায় তা হল না কেন? এর স্পষ্ট জবাব অবশ্য মেলেনি কারও কাছ থেকেই। ইউআইডিএআই-এ পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা পি কে উপাধ্যায় বলেন, “এটা আমাদের দায়িত্ব নয়। এই ব্যবস্থায় এক জনের নামে দু’টি আধার কার্ড তৈরি হওয়া অসম্ভব। পশ্চিমবঙ্গে জনগণনা দফতর যে তথ্য আমাদের কাছে পাঠায়, তার ভিত্তিতেই আমরা সংশ্লিষ্ট নাগরিকের আধার নম্বর ও কার্ড বানাই। এই কাজের দায়িত্বে থাকা কোনও অপারেটর গাফিলতি করলে, জনগণনা দফতরেরই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।”
জনগণনা দফতর কিন্তু আবার বল ঠেলছে ইউআইডিএআই-এর কোর্টে। জনগণনা দফতরের পূর্বাঞ্চলের যুগ্ম অধিকর্তা প্রণব মজুমদার বলেন, “আমারদের কাজ বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করে তা নির্দিষ্ট সফটওয়্যারে নথিভুক্ত করা। আধার কার্ড তৈরি করার দায়িত্ব ইউআইডিএআই-এর। এক জনের নামে যাতে একাধিক আধার কার্ড তৈরি না হয়ে যায়, সে জন্য ওঁদের কাছে বিশেষ ‘ই-ডুপ্লিকেশন সফটওয়্যার’ রয়েছে। যদি কারও কার্ড ভুলবশত দু’বার তথ্য নেওয়া হয়, তা হলে দ্বিতীয় বার কার্ড তৈরির সময়ে ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সহজেই তা ধরা পড়ার কথা। এ ক্ষেত্রে কী করে এমন হল, তা দেখার কথা ইউআইডিএআই-এরই।”
দায় একে অপরের উপরে চাপাতে চাইলেও দুই দফতরই জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আপাতত সেই ভরসাতেই রয়েছেন উজ্জ্বলবাবু।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.