ধর্মতলার সভা ঘিরে যানজটের আশঙ্কা ছিলই। বুধবার সেটাই সত্যি হল। ফলে কাজের দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচির জেরে ফের থমকে গেল মহানগর। দুপুরের যানজট সামলে উঠতে গড়িয়ে গেল রাত। আজ, বৃহস্পতিবারও এক রাজনৈতিক দলের সমাবেশ রয়েছে ধর্মতলা চত্বরে। তার জেরে ফের কর্মব্যস্ত দিনে শহরের গতি থমকে যাবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে।
কাজের দিনে মানুষকে নাকাল করার ঘটনা নতুন নয়। তবে এ দিন তার সঙ্গে কলকাতা পুলিশের যান-নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতাও রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মানুষের অভিজ্ঞতা বলছে, রবীন্দ্র সদন থেকে ধর্মতলা পৌঁছতে অনেককেই একই রাস্তায় গোল করে ঘুরতে হয়েছে। কাউকে আবার ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে।
এ দিন বেলা ১টা থেকে ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সভা ডেকেছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। এর জেরেই সকাল থেকে ধর্মতলা চত্বরে যান-নিয়ন্ত্রণ শুরু করে পুলিশ। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে ঢোকার গাড়িগুলিকে অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। সভায় আসা সমর্থকদের বাসগুলিকে মেয়ো রোড সংলগ্ন মাঠে রাখা হয়। কিন্তু সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে বেলা দেড়টা থেকে। |
যানজটে স্তব্ধ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র। |
শিয়ালদহ থেকে কয়েক হাজার সমর্থককে নিয়ে মিছিল এস এন ব্যানার্জি রোড ধরে ধর্মতলায় আসতে শুরু করে। ফলে এ পি সি রোড, এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণিতে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। মিছিল ধর্মতলায় পৌঁছনো মাত্র বন্ধ হয়ে যায় জওহরলাল নেহরু রোড এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। এক পুলিশকর্তার কথায়, “ধর্মতলা এবং সংলগ্ন রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার মানে শহরের বড় অংশই থমকে যাওয়া।”
পুলিশকর্তাদের অবশ্য দাবি, মিছিলের জেরে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা থমকে যেতে পারে আঁচ করেই মেয়ো রোড এবং অন্য কয়েকটি রাস্তা দিয়ে গাড়ি ঘোরানো হয়েছিল। বন্ধ রাখা হয়েছিল পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলের উত্তরমুখী দিকটিও। ফলে যানজট হলেও যান চলাচল একেবারে থমকে যায়নি।
তবে পথে বেরোনো আমজনতাকে কিন্তু এই গাড়ি ঘোরানোর পাকেচক্রে পড়ে নাকাল হতে হয়েছে। বিকেলে দক্ষিণ কলকাতা থেকে ধর্মতলার দিকে আসছিলেন দেবাঞ্জন চক্রবর্তী। পার্ক স্ট্রিট পেরোতেই তাঁর গাড়িকে কিড স্ট্রিটের দিকে পাঠিয়ে দেয় ট্রাফিক পুলিশ। চৌরঙ্গি লেন, সদর স্ট্রিট ঘুরে তিনি এসে পড়েন জওহরলাল নেহরু রোডে। উত্তরে যাওয়ার বদলে তত ক্ষণে তাঁর গাড়ির মুখ ফের ঘুরে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার দিকে। ফের রবীন্দ্র সদন-ভিক্টোরিয়া-রেড রোড হয়ে বি বা দী বাগ দিয়ে ধর্মতলায় পৌঁছতে হয় তাঁকে।
গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের মোড়ের পর থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ বন্ধ থাকায় যানজট ছড়ায় উত্তর ও মধ্য কলকাতাতেও। বিকেলে গিরিশ পার্ক থেকে বৌবাজার যাচ্ছিলেন মৌমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক-একটি মোড়ে প্রায় কুড়ি মিনিট করে দাঁড়িয়েছে তাঁর ট্যাক্সি। একই অবস্থা উত্তর কলকাতার দিকে যাওয়া গাড়িগুলিরও। জরুরি কাজে শ্যামবাজার যাচ্ছিলেন এক মহিলা। যানজটে ফেঁসে থেকে পরিচিত এক জনকে ফোনে বললেন, “কত ক্ষণে পৌঁছব, বলতে পারছি না।”
যানজটের ছবিটা শুধু বড় রাস্তাতেই নয়, ধর্মতলা এলাকার অন্য রাস্তাগুলিতেও মাঝেমাঝেই তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে যানবাহন। দু’টো নাগাদ মিছিলের শেষ প্রান্ত তালতলা-ওয়েলিংটন পেরোতেই রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে গাড়ি চালাতে শুরু করে পুলিশ। পলক ফেলতে না ফেলতেই তৈরি হয় যানজট। ধর্মতলা থেকে পার্ক সার্কাসগামী অটোগুলির জন্য জানবাজারের অলিগলিতেও হেঁটে চলাফেরা দায় হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এক সঙ্গে বহু গাড়ি মেয়ো রোড বা ইডেনের সামনে চলে আসাতেও যানজট হয়েছে।
ধর্মতলায় মিটিং-মিছিল শহরে নতুন নয়। পুলিশের হিসেবে, সিপিএমের সভায় এ দিন প্রায় পঁচিশ হাজার লোক হয়েছিল। আগেও বহু বার এমন হয়েছে। তা হলে মঙ্গলবার এমন যানজট হল কেন?
যদিও যানজট হওয়ার পিছনে নিজেদের দক্ষতার অভাব মানতে চাননি কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) দিলীপ আদক। তিনি বলেন, “মিছিলের জেরে কখনও কখনও যানবাহন থমকে গিয়েছিল। এর জেরেই যানজট তৈরি হয়েছিল। তবে বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনায় খামতি ছিল না।” |