ছাত্রভোট ঘিরে মারধর মৌলানা আজাদেও
শিক্ষার অঙ্গনে হিংসা এড়াতে ছাত্রভোট সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে ফের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বাদ্যি বাজতেই কলেজে কলেজে সংঘর্ষ-সহ নানা ধরনের অশান্তি শুরু হয়েছে।
খাস কলকাতাতেই মণীন্দ্রচন্দ্র, জয়পুরিয়া, হরিমোহন ঘোষ, বিদ্যাসাগর উইমেন-এর পরে বুধবার মৌলানা আজাদ কলেজে ছাত্রভোটকে কেন্দ্র করে অশান্তি বেধে যায়। এসএফআইয়ের এক সদস্যকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। টিএমসিপি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বুধবার ছিল মৌলানা আজাদ কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার দিন। প্রথম বর্ষের ছাত্র, এসএফআই-সমর্থক শামসের আলির অভিযোগ, বিকেল ৪টে নাগাদ টিএমসিপি-র সমর্থক বহিরাগত এক দল যুবক কলেজের বাইরে তাঁকে বেধড়ক মারধর করে। তিনি জানান, বহিরাগতেরা দু’বার তাঁর মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দেয়। মনোনয়নপত্র জমা দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়।
শামসের বলেন, “বহিরাগতদের হাতে মার খেয়ে প্রাণের ভয়ে পালাচ্ছিলাম। ওয়েলিংটন মোড়ের কাছে এক ট্রাফিক সার্জেন্ট আমাকে তাঁর মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে এসএফআইয়ের রাজ্য অফিসের সামনে নামিয়ে দেন।” শামসের পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে শারীরিক পরীক্ষা করান। তবে এই ঘটনায় রাত পর্যন্ত পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাননি ওই ছাত্র। কলেজ-কর্তৃপক্ষ জানান, মারধরের খবর তাঁদের জানা নেই। টিএমসিপি-র রাজ্য সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ বলেন, “আমাদের ছেলেরা কাউকে মারধর করেনি।” তবে এসএফআইয়ের কলকাতা জেলা সভাপতি ময়ূখ বিশ্বাসের অভিযোগ, “যে-ভাবেই হোক, কলেজগুলির ছাত্র সংসদ দখল করতে চাইছে টিএমসিপি।”
প্রায় এক বছর বন্ধ থাকার পরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে রাজ্য সরকার এ বার যথেষ্ট তৎপর। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের দিন স্থির হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশি প্রহরার বন্দোবস্তও করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও গোলমাল এড়ানো যাচ্ছে না কেন?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষের খবর আসছে। এগুলি সবই বিক্ষিপ্ত ঘটনা। তবে অনভিপ্রেত। প্রশাসন যথেষ্ট কড়া। মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি, নির্বাচন পর্ব নির্বিঘ্নেই মিটবে।”
শিক্ষাজগতের অনেকের বক্তব্য, মনোনয়নপত্র তোলা ও জমা দেওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটাই অনলাইনে করা গেলে এই ধরনের অশান্তি এড়ানো যেত। কিন্তু এই পদ্ধতি শুরু করার ব্যাপারে বেশির ভাগ কলেজের পরিচালন সমিতির অনীহা আছে। পরিচালন সমিতিগুলি মূলত শাসক দল প্রভাবিত। ছাত্র সংসদও শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের অধীনে রাখতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলা বা জমা দেওয়ার বিরোধী তারা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে মনোনয়নপত্র তোলার বন্দোবস্ত করা গেলেও মঙ্গলবার তা জমা নেওয়া হয় হাতে হাতেই। আর সেই প্রক্রিয়ায় তাঁদের নানা ভাবে চাপ ও শাসানির মুখে পড়তে হয়েছে বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটা বড় অংশ বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানান। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন কি না, তা-ও ভেবে দেখা হবে বলে জানান তাঁরা। অভিযোগ, রিটার্নিং অফিসার, বাণিজ্য বিভাগের ডিন স্বাগত সেন বিভাগীয় প্রধানদের বাদ দিয়ে নিজেই অনেক মনোনয়নপত্র জমা নিয়ে একেবারে শেষ পর্যায়ে সেগুলি জমা দেন। তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বুধবার জানান, ওই সব মনোনয়নপত্র গৃহীত হবে কি না, বিভাগীয় প্রধানেরাই স্ক্রুটিনিতে তা বিবেচনা করবেন। আর মনোনয়নপত্র বাতিল নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠলে রিটার্নিং অফিসারই সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। এ দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন কুটা-র প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাঁরা এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাংখ্যায়ন চৌধুরী বলেন, “বিভাগীয় প্রধানদের হাতে ছেড়ে না-দিয়ে এই বিচারের দায়দায়িত্ব নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকেই।”
কুটা-র এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুরঞ্জনবাবু বলেন, “বিভাগীয় প্রধানদের সই করা মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনির জন্য পাঠানো হচ্ছে। বিতর্কিত মনোনয়নপত্রের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন রিটার্নিং অফিসার।”
কিন্তু রিটার্নিং অফিসারের জমা নেওয়া মনোনয়নপত্রগুলিই তো বিতর্কিত। তা হলে সিদ্ধান্তের ভার তাঁর হাতেই ছাড়া হচ্ছে কেন?
উপাচার্যের জবাব, “নিয়মবিধি অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে ওই অফিসারের হাতেই।”
আজ, বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনি হওয়ার কথা। পর্যাপ্ত পুলিশি প্রহরায় সেই কাজ হবে বলে জানান উপাচার্য। তিনি বলেন, “আশা করি, নির্বিঘ্নেই এই প্রক্রিয়া মিটবে।” বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হবে বলেও জানান তিনি।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.