২০১৫ সালের মধ্যেই এই জেলাকে ‘নির্মল জেলা’ ঘোষণা করতে ১০০ দিন প্রকল্পের হাত ধরল বীরভূম জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে ১ লক্ষ ৯০ হাজার পরিবারের ক্ষেত্রে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকেও যুক্ত করা হবে। জেলা পরিষদের নির্বাহী আধিকারিক তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজার পরিবারকে শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে আরও ৫০ হাজার পরিবারকে উন্নতমানের শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছি। ২০১৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে বাকি সমস্ত বিপিএল ও এপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলির ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরি হয়ে যাবে।”
ইতিমধ্যেই ২০১৭ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে ‘নির্মল রাজ্য’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি বিপিএল ও এপিএল পরিবারের বাড়িতেই থাকবে শৌচাগার। মুখ্যমন্ত্রীর ওই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে তৎপরতা শুরু হয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসনের অন্দরে। প্রশাসন সূত্রে খবর, আগে সাড়ে ৫ হাজার টাকা খরচে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজার পরিবারকে শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫০ হাজার পরিবারের ক্ষেত্রে শৌচাগার তৈরি করা হবে আরও উন্নতমানের। শৌচাগার পিছু খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। |
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ১২ বছর আগে থেকেই এ জেলায় প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার নির্মাণের জন্য উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। তখন অবশ্য শৌচাগার নির্মাণের জন্য পরিবার পিছু ধার্য ছিল ৩০০ টাকা। জেলার বেশ কিছু এলাকায় ওই শৌচাগার নির্মাণও হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা একেবারেই কাজে আসেনি বলে অভিযোগ। প্রশাসনের বর্তমান কর্তাও বাসিন্দাদের দাবি, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ওই শৌচাগারগুলির বেশিরভাগই ব্যবহার করা যায়নি। বিধানবাবু জানান, ২০১২ সাল থেকে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পে কেন্দ্র সরকার শৌচাগার নির্মাণে উদ্যোগী হয়। তার জন্য প্রাপকদের সরকারি ভর্তুকি বাবদ ৪৬০০ টাকা করে ধার্য করা হয়। ২০১২ থেকে এখনও পর্যন্ত যে ৫০ হাজার শৌচাগার নির্মাণ হয়েছে, সেটি ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্পের মাধ্যমেই। তার জন্য পরিবারগুলিকে লেগেছে মাত্র ৯০০ টাকা করে। ওই শৌচাগারগুলি তৈরি হয়েছে তিন ইঞ্চি ইটের গাঁথনি দিয়ে। শৌচাগারগুলি একটু ছোট মাপের। প্রশাসনেরই কর্তাদের দাবি, সরেজমিনে তদন্ত করার পরে দেখা গিয়েছে, মান নিয়ে সমস্যা থাকায় ওই শৌচাগারগুলিও ব্যবহার করতে মানুষের অসুবিধে হচ্ছে।
নতুন লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে সমস্ত রকম প্রযুক্তিগত সমস্যা-সহ অন্যান্য সমস্ত রকম ত্রুটি সারিয়েই বাকি ৫০ হাজার পরিবারের শৌচাগার নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিধানবাবু বলছেন, “এ বার যে শৌচাগার তৈরি হবে, তা সাড়ে তিন ফুট চওড়া এবং চার ফুট লম্বা। দেওয়াল হবে পাঁচ ইঞ্চি চওড়া। শৌচাগারগুলির জন্য পরিবার পিছু ৯০০ টাকা করেই লাগবে। সরকারি অনুদান হিসেবে মিলবে ৪,৬০০ টাকা। বাকি সাড়ে ৪ হাজার টাকা আসবে একশো দিন কাজের প্রকল্পের থেকে।” অর্থাৎ ‘নির্মল ভারত অভিযান’ এবং ১০০ দিন কাজে কেন্দ্র সরকারের এই দুই প্রকল্পকে একযোগে কাজে লাগাতে চায়ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এর ফলেই আগামী ৩১ মার্চের ভেতর ৫০ হাজার বিপিএল ও এপিএল পরিবার পেয়ে যাবেন উন্নতমানের শৌচাগার। আগের ৫০ হাজার এবং বর্তমান ৫০ হাজার ছাড়াও বিপিএল ও এপিএল তালিকাভুক্ত মিলিয়ে জেলায় এখনও প্রায় এক লক্ষ ৪০ হাজার পরিবারকে একই ভাবে শৌচাগার তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী বছর মার্চ মাসের মধ্যেই ওই লক্ষ্যমাত্র পূর্ণ করে বীরভূমকে ‘নির্মল জেলা’ বলে ঘোষণা করা সম্ভব বলে ওই কর্তারা মনে করেছেন।
প্রশসন সূত্রে খবর, ১ লক্ষ ৪০ হাজারের মধ্যে এপিএল পরিবারই রয়েছেন প্রায় ১ লক্ষ। বাকিটা বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবার। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, স্বনির্ভর দল প্রভৃতি ওই সব শৌচাগার নির্মাণ করার দায়িত্ব পেয়েছেন। কাজ শেষ হওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তার পর ব্লক থেকে শৌচাগারগুলি সরেজমিনে খতিয়ে দেখা হবে। তার পরেই সংস্থাগুলি প্রাপ্য টাকা পাবে। বিধানবাবু জানান, গোটা বিষয়টি নজরদারি করার জন্য বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, তৃণমূলের ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “শৌচাগার নির্মাণে যাতে কোনও ফাঁকফোকর বা ত্রুটি না থাকে এবং তা যাতে দ্রুত তৈরি হয়, তার জন্য সচেষ্ট থাকব।” |