শিক্ষাবর্ষ শুরুর সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পর্যাপ্ত পাঠ্যপুস্তক পৌঁছয়নি অনেক স্কুলে। ফলে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বহু পড়ুয়া বই পায়নি। পাঠ্যপুস্তক না আসায় বর্ধমান জেলার বহু স্কুলে ক্লাস নিতে গিয়ে শিক্ষকেরাও সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ।
সরকারি নিয়ম মেনে ২ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে স্কুলগুলিতে। কিন্তু ওই চার শ্রেণির বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক পৌঁছয়নি নানা স্কুলে। অনেক স্কুলে আবার বই পৌঁছলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা কম। অভিভাবকদের অভিযোগ, স্কুলে দেরিতে এই বই আসার সমস্যা চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আগে বছরে দু’বার পরীক্ষা হত। তাই পাঠ্যপুস্তক দেরিতে এলেও বাড়তি পড়াশোনা করে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার সুযোগ পেত পড়ুয়ারা। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই। কারণ, ২০০৭ সাল থেকে শুরু হয়েছে ইউনিট টেস্ট। ফলে, স্কুল খোলার পরে প্রথম ইউনিট টেস্টের পড়াশোনার জন্য হাতে অল্প সময় থাকে। বছরে চার বার পরীক্ষা নেওয়া হয়। সমস্যায় পড়েন শিক্ষকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, বই পড়ুয়াদের হাতে থাকলে তারা বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। ফলে, পড়া মনে রাখতে সুবিধা হয় তাদের। কিন্তু বই না মেলায় তা হচ্ছে না। স্কুলে যেটুকু পড়াশোনা হচ্ছে, সেটাই একমাত্র ভরসা।
জেলার বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন স্কুলে এক এক রকম পাঠ্যপুস্তক আসেনি। সরকারি নিয়মে, পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, গণিত, ইংরেজি, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরাজি, গণিত, বিজ্ঞান-পরিবেশ, ইতিহাস ও ভূগোল বই দেওয়ার কথা। কাঁকসার সিলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার পাল জানান, পঞ্চম শ্রেণির ইতিহাস, ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি ও ইতিহাস, সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস এবং অষ্টম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞান-পরিবেশ বিষয়ক বই আসেনি তাঁদের স্কুলে। কাঁকসার মলানদিঘি দুর্গাদাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তন্ময় চট্টোপাধ্যায় আবার জানান, অষ্টম শ্রেণির গণিত ও বিজ্ঞান বই মেলেনি। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের নতুনডাঙা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ চট্টরাজ জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস এবং অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও গণিত বই পায়নি স্কুলের পড়ুয়ারা।
আউশগ্রামের হাটকীর্তিনগর বালিকা বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক বুদ্ধদেব কোনার বলেন, “আমার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ওরা ইতিহাস বই এখনও পায়নি।” কালনার সিমলন এ কে বিদ্যামন্দিরে আবার পড়ুয়া সংখ্যার থেকে বই এসেছে অনেক কম। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবনাথ শিকদারের বক্তব্য, “পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া সংখ্যা ১৩০। সব বিষয়ের বই এসেছে। তবে ৯০টি করে। ফলে, সবার হাতে বই তুলে দেওয়া যায়নি এখনও।” তিনি আরও জানান, ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস এবং অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস, গণিত ও বিজ্ঞান বই এখনও পাননি তাঁরা।
পড়ুয়ারা ঠিক কবে বই হাতে পাবে, তা সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে জেলা স্কুল পরিদর্শক জোসনারা বেগম স্কুলগুলিকে স্কুল পরিদর্শকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোন কোন শ্রেণিতে কী বই কতগুলি করে প্রয়োজন, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর আশ্বাস, “ধাপে ধাপে সব বই পাঠিয়ে দেওয়া হবে স্কুলে।” |