ঘিঞ্জি শহরের অপরিসর রাস্তায় পণ্য তোলানামার সমস্যা দূর করতে ট্রাক টার্মিনালের দাবি তুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। সেই দাবি মেনে জাতীয় সড়কের পাশে কোটি টাকা খরচে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রানিগঞ্জে সেই টার্মিনাল গড়ার কাজ শুরুও করে আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)। কিন্তু কয়েক বছর আগে থেকে বন্ধ পড়ে সেই কাজ। পণ্যবাহী লরি ঢুকছে শহরেই। কেন প্রকল্পটি শেষ হল না, সদুত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, রানিগঞ্জের একাধিক ব্যবসায়িক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় একটি আধুনিক ট্রাক টার্মিনাল তৈরির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বহু বছরের পুরনো রানিগঞ্জ শহর এমনিতেই ঘিঞ্জি। প্রতি দিন প্রচুর পণ্যবাহী লরি শহরে ঢোকে। অপরিসর রাস্তার বেশির ভাগ অংশ জুড়ে সেগুলি দাঁড়িয়ে পণ্য তোলানামার কাজ করে। এর ফলে রীতিমতো যানজট হয়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা সমস্যায় পড়েন। এ নিয়ে ঝামেলা-গণ্ডগোলও বাধে। ব্যবসায়ীরা এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে এডিডিএ কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেন, শহরের বাইরে একটি ট্রাক টার্মিনাল গড়া হোক। দূরদূরান্ত থেকে আসা পণ্যবাহী লরিগুলি সেখানে দাঁড়াবে। সেখানেই পণ্য খালাস করে ছোট লরি বা ঠেলায় চাপিয়ে শহরে নিয়ে যাওয়া হবে।
এডিডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যবসায়ীদের এই প্রস্তাব মেনে রানিগঞ্জের পঞ্জাবি মোড়ের প্রায় ১০০ মিটার দূরে আধুনিক টার্মিনালটি তৈরিতে উদ্যোগী হয়। দু’নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে এ জন্য প্রায় ২০ একর সরকারি খাস জমিও নেওয়া হয়। |
২০০৫ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছিল প্রায় ২৫ কোটি টাকা। রাজ্য সরকারের তরফে তৎকালীন এডিডিএ কর্তৃপক্ষ পিপিপি মডেলে একটি বেসরকারি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ শুরু করে। পরিকল্পনা ছিল, এক সঙ্গে ৫০০টি লরি, ২০০টি বাস ছাড়াও অন্য যানবাহন রাখার মতো ব্যবস্থা করা হবে। বেশ কিছুটা কাজও হয়। কিন্তু বছর কয়েক আগে টার্মিনাল তৈরির কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেখানে আবর্জনার স্তূপ হয়ে রয়েছে। যেটুকু নির্মাণ হয়েছিল, তার পলেস্তারাও খসে পড়ছে।
ট্রাক টার্মিনালের কাজ শুরু হওয়ার পরেও তা সম্পূর্ণ না হওয়ায় তাঁরা হতাশ বলে জানান রানিগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। রানিগঞ্জ বণিকসভার অন্যতম কর্ণধার তথা ‘ফেডারেশন অব সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, টার্মিনালটি তৈরি হলে শহরের সকলেরই সুবিধা হবে। কিন্তু মাঝপথে কেন কাজ থমকে গিয়েছে, তা জানতে চেয়েও আমরা উত্তর পাইনি।” শহরবাসী অভিযোগ, পণ্যবাহী লরি দাঁড়ানোর নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় জাতীয় সড়কের পাশে বিপজ্জনক ভাবে লরিগুলি দাঁড়িয়ে থাকে। তার জেরে মাঝে-মধ্যে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাও ঘটে থাকে। রাজেন্দ্রপ্রসাদবাবুরা অবিলম্বে ট্রাক টার্মিনালের কাজ শেষ করার দাবি তুলেছেন।
যে সময়ে টার্মিনালটি তৈরির কাজ শুরু হয়, তখন এডিডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি জানান, নিছক একটি ট্রাক টার্মিনাল নয়, সেখানে দূরপাল্লার বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা ছিল। চালক ও যাত্রীদের রাতে থাকার ব্যবস্থা, হোটেল, ধাবা, পেট্রোল পাম্প, এটিএম, ওষুধের দোকান ইত্যাদিরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেল কেন, সে প্রশ্নে বংশগোপালবাবুর বক্তব্য, “আমরা শুরু করেছিলাম। অনেকটা কাজ এগোয়। তার পরে আমাদের হাত থেকে ক্ষমতা চলে গিয়েছে। এখন সরকারে যাঁরা আছেন, এডিডিএ-র ক্ষমতায় তাঁরাই আছেন। এ ব্যাপারে যা বলার তাঁরাই বলতে পারবেন।”
কেন টার্মিনালের কাজ শেষ হল না, বর্তমান এডিডিএ-র বোর্ডের কাছেও তার কোনও সদুত্তর মেলেনি। সংস্থার চেয়ারম্যান নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ বিষয়ে বিশেষ কিছু জানা নেই। আমি সবিস্তারে খোঁজ নিয়ে দেখব।” এডিডিএ-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যে বেসরকারি সংস্থার এই টার্মিনাল গড়ার কথা, সেই নির্মাণ সংস্থাও এ ব্যাপারে কোনও কথা বলতে চায়নি। |