জমি অধিগ্রহণে সমস্যার কারণে রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদের এই যুক্তি মানতে নারাজ রায়গঞ্জের পানিশালা এলাকায় এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য চিহ্নিত হওয়া জমির মালিক তথা চাষিরা। গত সোমবার কলকাতায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, শুধু এ রাজ্যেই নয়। জমি সমস্যার জেরে গোটা দেশেই আপাতত নতুন এইমসের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করাটা একটা বড় সমস্যা। সেই কারণে গোটা দেশেই এইমসের পরিকল্পনা স্থগিত করা হচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের দাবিতে গত দুবছর ধরে কংগ্রেস যাঁর নেতৃত্বে আন্দোলন করছে, সেই রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি বলেন, “রাজ্য সরকারের চক্রান্তেই রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল থমকে যাচ্ছে। আমরা ওই হাসপাতাল রায়গঞ্জে গড়ার দাবিতে আন্দোলনে নামছি।”
মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে সৌজন্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জানার পর পানিশালা এলাকার চাষিদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ দিন এলাকার বিভিন্ন চায়ের দোকান, হাট-বাজার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরেই সরগরম ছিল। চাষিদের অনেকেরই বক্তব্য, “পানিশালার জমির মালিক তথা চাষিরা প্রত্যেকেই হাসপাতাল তৈরির জন্য স্বেচ্ছায় জমি দিতে প্রস্তুত। সাড়ে তিনবছর আগে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে চাষিরা সে কথা জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কেন সমস্যার কথা বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করে দিলেন?”
রফিক আজম, মহম্মদ জাহানুদ্দিন, মহম্মদ আতাউর রহমানদের মতো জমির মালিক তথা চাষিরা বলেন, “আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে এখন এ রাজ্য থেকে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। পানিশালা এলাকার সমস্ত চাষি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে স্বেচ্ছায় জমি দিতে প্রস্তুত। এক বছর আগে চাষিরা মহাকরণ অভিযানের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সে কথাই জানাতেও যান। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য মানতে পারছি না।”
পানিশালা এলাকায় হাসপাতাল তৈরির জন্য চিহ্নিত হওয়া ১১০ একর জমির মালিকের সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ চাষিরই চিহ্নিত হওয়া জমির বাইরেও অন্যত্র জমি রয়েছে। ওই ১১০ একর জমিতে চাষিদের গড়ে তিন বিঘা থেকে ৫০ বিঘার ওপরে জমি রয়েছে।
রায়গঞ্জের প্রাক্তন সাংসদ প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির উদ্যোগে ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ৮২৩ কোটি টাকা বরাদ্দে রায়গঞ্জে ১০০ একর জমিতে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির ঘোষণা করে। তবে রাজ্য সরকারকে জমি অধিগ্রহণ করে দিতে হবে বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়। ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পানিশালায় হাসপাতাল তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনের চিহ্নিত করা ১১০ একর জমি পরিদর্শন করে কেন্দ্রকে সবুজ সঙ্কেত দেয়। কিন্তু রাজ্যে পালাবদলের পর রাজনৈতিক স্বার্থে তৃণমূল পরিচালিত সরকার জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আটকে রাখে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, “তৃণমূল পরিচালিত সরকার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে জমি অধিগ্রহণ না করায় কেন্দ্র হাসপাতাল তৈরি শুরু করতে পারেনি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটাই বোঝাতে চেয়েছেন।” জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব অমল আচার্য জানান, রাজ্য সরকার কৃষিজমি নষ্ট করে হাসপাতাল তৈরির বিরোধী বলেই জমি অধিগ্রহণ হয়নি। তাঁর অভিযোগ, “কংগ্রেসের নেতা নেত্রীরাই রাজ্য সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার শুরু করেছেন।” অমলবাবুর দাবি, রাজ্য সরকার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করলে মুখ্যমন্ত্রী গত ২৭ নভেম্বর জেলা সফরে এসে রায়গঞ্জ ও ইসলামপুরে দুটি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির কথা ঘোষণা করতেন না। |