ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গে অশান্তি অব্যাহত। কোথাও মনোনপত্র জমা দিতে বাধাকে ঘিরে কে লজে ভাঙচুর, মারধর হয়েছে। কোথাও আবার মনোনয়পত্র ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। কোচবিহারে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি ভোট বয়কটের ঘোষণাও করেছে। টিএমসিপি অস্বীকার করলেও প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের দিকেই অভিযোগ তুলেছে অন্য সংগঠনগুলি।
মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় গোলমালটি হয় জলপাইগুড়ি শহরেই। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া নিয়ে ছাত্র পরিষদ এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সমর্থকদের বচসার জেরে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজে দিনভর ভাঙচুর চলে। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় চারটি কম্পিউটার, চেয়ার টেবিল, জানালার কাচ। পুড়িয়ে দেওয়া হয় রেজিস্ট্রার খাতা। দফায় দফায় চলে হাতাহাতি। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। ছাত্র পরিষদ প্রার্থীদের মারধর করে আটকে রাখার অভিযোগ নিয়ে দুপুরের পরে উত্তেজনা বাড়লে পুলিশ লাঠি চার্জ করে বহিরাগতদের হঠিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। ছাত্র পরিষদের তরফে কেউ মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। |
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সন্ধ্যা পর্যন্ত কলেজ চত্বর ঘিরে রাখে পুলিশ। সংঘর্ষে ৬ জন জখম হয়েছেন। বলে ছাত্র সংগঠনগুলির তরফে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে ছাত্র পরিষদের ৩ জন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ২ জন সমর্থক এবং এসএফআই-র ১ জন আছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখনও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।” কলেজের অধ্যক্ষ ধীরাজকুমার বসাক বলেন, “বহিরাগতরা কলেজে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। গোলমালের জন্য অনেকেই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেনি।”
কলেজের নির্বাচন পরিচালনার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “এ দিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ মনোনয়নপত্র জমা পড়েনি। এই পরিস্থিতিতে আমরা কী করব সেটা জানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছি।”
কলেজ সূত্রের খবর, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ৪৭টি আসনের জন্য সোমবার থেকে মনোনয়ন পত্র জমা নেওয়ার কাজ শুরু হয়। ওই দিন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই প্রতিটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়। মঙ্গলবার সকালে ছাত্র পরিষদের প্রার্থীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলেই গোলমাল শুরু হয়। এই কলেজের ছাত্র সংসদ ছাত্র পরিষদের দখলে রয়েছে। সংসদের সহকারি সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর নন্দী’র অভিযোগ, “তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা বাইরে থেকে ছেলেদের কলেজে ঢুকিয়ে আমাদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে বাঁধা দেয়। পুলিশের সামনেই মারধর করা হয়।” অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছাত্র পরিষদের নেতা ও কর্মীরা বহিরাগতদের কলেজে ঢুকিয়ে গোলমাল পাকিয়ে নির্বাচন বাতিল করতে চাইছে।”
অন্য দিকে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে কোচবিহারের ৯টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বয়কট করার ঘোষণা করল বামপন্থী ছাত্র মোর্চা। এদিন জেলার বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন নেতৃত্ব যৌথভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি কলেজ ছাড়া জেলার বাকি ৯ টি কলেজের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। তাঁদের অভিযোগ, টিএমসিপি-র সন্ত্রাসের জেরে বাম প্রার্থীরা মনোয়ন জমা দিতে পারেনি। ডিএসও’র তরফেও এদিন টিএমসিপির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ জেলাজুড়ে ধিক্কার দিবস পালন করা হয়। কোচবিহার হরিশপাল চৌপথীতে দুপুরে তাঁরা আধ ঘন্টা রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভ দেখান। অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপির জেলা কার্যকরী সভাপতি অরিন্দম দে বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। ছাত্রছাত্রীদের সমর্থন হারিয়ে বামেরা আমাদের নামে নানা অভিযোগ করছে।”
মালবাজার কলেজে তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও ছাত্র সংগঠন মনোনয়পত্র জমা দেয়নি। এসএফআই, ছাত্র পরিষদের মত সংগঠনগুলির অভিযোগ, তৃণমূলের বাধায় তাঁরা মনোনয়ন জমা দিতেই পারেননি। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে কোনও গোলমাল হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে এদিন আলিপুরদুয়ার বিবেকানন্দ কলেজে সকাল থেকে উত্তেজনা দেখা দেয়। টিএমসিপি-র বাধায় তাঁরা মনোনয়ন জমা দিতে পারছেন না বলে অভিযোগ করে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত পথ অবরোধ করে ছাত্র পরিষদ। পরে পুলিশি নিরাপত্তায় ছাত্র পরিষদ মনোনয়ন জমা দেয়। কামাখ্যাগুড়ি শহীদ ক্ষুদিরাম কলেজের ২৮টি আসনে টিএমসিপি ছাড়া অন্য কোনও সংগঠনন মনোনয়ন জমা দেয়নি।
ইসলামপুর কলেজে ছাত্র পরিষদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র ছিনতাই করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, এদিন সংগঠনের দুইজন সদস্য কলেজ থেকে ১৫০টি মনোনয়ন পত্র তুলে বাইরে বার হচ্ছিলেন। টিএমসিপি-র সদস্যরা তাঁদের মারধর করে মনোনয়নপত্রগুলি ছিনিয়ে নেয়। সংগঠনের জেলা সভাপতি এহসানুল হক বলেন, “পুলিশের সামনে আমাদের কর্মীদের মারধর করে মনোনয়নপত্র ছিনতাই করা হয়েছে।” অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিএমসিপি-র ইসলামপুর ব্লক সভাপতি মেহেতাব চৌধুরী বলেন, “পুরোটাই চক্রান্ত।” |