মনোনয়ন জমা দেওয়া ঘিরে সংঘর্ষ কলেজে
লেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ফের উত্তেজনা ছড়াল উত্তরবঙ্গের একাধিক কলেজে। সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির নানা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
কোচবিহারে এ দিন মনোনয়ন পত্রের ফর্ম তোলাকে কেন্দ্র করে শাসক ও বিরোধী দলের ছাত্র সংগঠন সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ৪৫ জন জখম হয়েছেন। মেখলিগঞ্জ কলেজে টিএমসিপি ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ২০ জন জখম হন। ১৮ জনকে মেখলিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বেশ কিছু মোটরবাইক, একটি গাড়িও ভাঙচুর হয়। দিনহাটা কলেজেও মনোনয়ন তোলা নিয়ে বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে টিএমসিপির সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ডিএসও সমর্থকদের সঙ্গেও সেখানে টিএমসিপি সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। কোচবিহারের এবিএন শীল ও মাথাভাঙা কলেজেও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “মেখলিগঞ্জ কলেজ ছাড়া জেলার কোনও কলেজে গোলমাল হয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পুলিশ জানায়, কোচবিহারের ১১ টি কলেজে সোম ও মঙ্গলবার মনোনয়ন পত্র তোলার দিন চূড়ান্ত করেছে প্রশাসন। সেই মত জেলার সমস্ত কলেজেই এদিন বেলা ১২ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত মনোনয়নের ফর্ম তোলার সময়সীমা ছিল। ফর্ম তোলার প্রথম দিন জেলার কলেজগুলিতে পুলিশ পাহারার বন্দোবস্ত ছিল। তার মধ্যেই মেখলিগঞ্জ কলেজে এসএফআই ও ছাত্র ব্লক ও টিএমসিপি সমর্থকদের মধ্যে বাদানুবাদ থেকে লাঠিসোটা, ইট, পাথর নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। মাথাভাঙা কলেজে ডিএসও ও টিএমসিপির সংঘষ হয়। কোচবিহারের এবিএন শীল কলেজেও ওই দুই দলের ছাত্রদের মধ্যে গোলমালে উত্তেজনা ছড়ায়।
এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলা সাদক দেবজ্যোতি গোস্বামীর দাবি, “মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ি ছাড়া টিএমসিপির সন্ত্রাসে কোথাও মনোনয়ন তোলা যায়নি। মেখলিগঞ্জে ফর্ম তুলে বেরোনর সময় টিএমসিপি হামলা চালায়। আমাদের ৫ জন আহত হন। দিনহাটা, বক্সিরহাট, শীতলখুচি, বক্সিরহাটেও বহিরাগতদের এনে জমায়েত করে রাস্তায় বাধা দেওয়া থেকে বিক্ষিপ্ত হামলা হয়।” ডিএসও’র কোচবিহার জেলা সম্পাদক মৃণাল রায় বলেন, “দিনহাটায় টিএমসিপির হামলায় ৮ জন জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মাথাভাঙা ও এবিএন শীল কলেজেও আমাদের সমর্থকরা আক্রান্ত হন। পরে কয়েকটি কলেজে আমরা মনোনয়নের ফর্ম তুলতে পেরেছি।” টিএমসিপি অবশ্য সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। টিএমসিপির কোচবিহার জেলা কার্যকরি সভাপতি অরিন্দম দে-র দাবি, “মেখলিগঞ্জে ফর্ম তুলতে কলেজে ঢোকার মুখে আমাদের সমর্থকদের ওপর বামেরা হামলা চালান। ১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ৩০ টি বাইক, একটি গাড়িও ভাঙচুর হয়। দিনহাটাতে বাম ও ডিএসও’রা হামলা চালায়। এসব করেও সমস্ত কলেজেই আমাদের সমর্থকরা মনোনয়ন তোলা আটকানো যায়নি।”
জলপাইগুড়ির মালবাজারে পরিমল মিত্র স্মৃতি কলেজে এসএফআইকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপির বিরুদ্ধে। মালবাজার কলেজ এসএফআই নেতা অর্চন রায়চৌধুরী, সায়ন্তনী সরকারেরা বলেন, “আমরা যাতে মনোনয়ন জমা দিতে না পারি তাঁর জন্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাদের আক্রমণ করা হয়েছে।” এসএফআই মনোনয়ন জমা দিতে না পেরে মালবাজার থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভের ফলে জাতীয় সড়কেও বেশ কিছুক্ষণ যান চলাচল থমকে যায়। ওই সময়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কলেজ শাখার সভাপতি শুভজিৎ ঘোষকে বাইক থেকে নামিয়ে মারধোর ও বাইক ভাঙচুর করা হয় বলে এসএফআই এর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ উঠেছে। মালবাজার কলেজ থেকে মালবাজার থানা অবধি তৃণমূল ছাত্রপরিষদের জেলা সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে একটি ধিক্কার মিছিলও করা হয়। অরিন্দমবাবুর দাবি, “এসএফআইকে মনোনয়ন জমা দিতে আমরা বাধা দিইনি। বরং আমাদের বেশ কিছু সদস্য-সমর্থককে এসএফআই আক্রমণ করে।” মালবাজারের মহকুমাপুলিশ আধিকারিক অরিন্দম সরকার জানান কলেজ চত্বরে নিরাপত্ত বাড়ানো হয়েছে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
ধূপগুড়ি ও ফালাকাটা কলেজে এসএফআই কোনও মনোনয়ন পত্র তুলতে পারেনি বলে আগেই অভিযোগ রয়েছে। তবে ছাত্র পরিষদ সমর্থকেরা ১৪টি মনোনয়ন পত্র তুলেছেন। তবে তা জমা দিতে টিএমসিপি বাধা দেয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেস নেতা উজ্জ্বল সরকারের কথায়, “মনোয়নপত্র জমা দিতে গেলে আমাদের সমর্থকদের মারধর করা হয়। মনোনয়নপত্র জমা দেব কি না তা আমরা এখনও সিদ্ধান্ত নিইনি।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। অপর দিকে কলেজের নির্বাচনের দিনক্ষণ বাতিল করার দাবিতে এ দিন ধূপগুড়িতে এসএফআই মিছিল বের করে। বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত বিডিও অফিস ঘেরাও করে রাখা হয়। সংগঠনের ধূপগুড়ি জোনাল সম্পাদক নূর আলমের কথায়, “অনলাইনে নতুন করে ফর্ম তোলা ও জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করার দাবি করেছি।”
এ দিনই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বাধায় আলিপুরদুয়ারে বিবেকানন্দ কলেজে এসএসআই ও ছাত্র পরিষদ মনোয়নপত্র জমা দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। কলেজের গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হলেও পুলিশ কিছু করেনি বলেও অভিযোগ। ছাত্র পরিষদের তরফে বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দফতরে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “কলেজে কড়া নিরাপত্তা রাখা হয়েছিল। বিবেকানন্দ কলেজে এসএফআই সমর্থকদের পুলিশ কলেজ চত্বরে নিরাপত্তা দিয়ে ঢোকায়।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.