একই দিনে দুটি ধমর্ঘটের জেরে দিনভর উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। বেসরকারি বাস ধর্মঘটের কারণে উত্তরের ছয় জেলার নিত্যযাত্রীরী চরম হয়রান হন। সপ্তাহের প্রথম দিন এসএফআই সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডাকায় বহু স্কুল-কলেজ অচল হয়ে যায়। তবে দক্ষিণ দিনাজপুরে এসএফআইয়ের ছাত্র ধর্মঘটের তেমন প্রভাব পড়েনি। বালুরঘাটে কলেজ গুলিতে ছাত্র উপস্থিতি কম ছিল। তা ছাড়া জেলা জুড়ে হাইস্কুল গুলিতে বনধের কোনও প্রভাব পড়েনি। উত্তর দিনাজপুরে অনেক জায়গাতেই স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। কোথাও কোনও মারপিটের খবর মেলেনি বলে পুলিশের দাবি। তবে শিলিগুড়ি সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বেসরকারি বাস ধর্মঘটের সুযোগে অটো সহ ছোট গাড়ির মালিক-চালকদের একাংশ চড়া হারে ভাড়া নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নিত্যযাত্রীদের অনেকেই। |
রায়গঞ্জ থেকে মালদহ, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট সহ জেলার বিভিন্ন রুটে প্রতিদিন প্রায় ৪০টি বেসরকারি বাস চলে। এদিন একটি বাসও রাস্তায় নামেনি। কয়েকটি সরকারি বাস নামায় তাতে ভিড় উপচে পড়ে। রায়গঞ্জের রমেন্দ্রপল্লি এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী কৌশিক দে এদিন প্রায় দুঘন্টা রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করেও বালুরঘাটগামী কোনও বাস পাননি। তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ বালুরঘাটের বাসিন্দা আমার এক আত্মীয় আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। খবর পাওয়া মাত্রই বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ বালুরঘাটগামী গাড়ি ধরার জন্য শিলিগুড়ি মোড় বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াই। সওয়া ১ টা পর্যন্ত কোনও বাস পাইনি। শেষে ট্যাক্সি ভাড়া করতে হয়।” দক্ষিণ দিনাজপুর বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েনের সম্পাদক অশোক চন্দ জানান, এক বছরের বেশি সময় ধরে বহুবার ডিজেলের দাম বাড়লেও রাজ্য সরকার বাস ভাড়া বৃদ্ধি করেনি। বাসের যন্ত্রাংশ ও বিমার খরচও বেড়েছে। তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে বাস মালিকরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন। সেই কারণে উত্তর দিনাজপুর জেলার বাস মালিকরা পরিবহণ ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন।” |
এনবিএসটিসি সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক সর্বাধিক ৩৮৫ টি বাস বিভিন্ন জেলায় চলে। এদিন বেসরকারী বাস ধর্মঘটের জেরে অতিরিক্ত ২০ টি বাস চালান হয়েছে। তার মধ্যে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি রুটে চলেছে ৯ টি বাস। কোচবিহার থেকে হলদিবাড়ি সহ কিছু রুটে অন্যদিন বাস চালানো না হলেও যাত্রীদের সমস্যার কথা ভেবে এদিন বিশেষ বাস চালায় নিগম। অন্য দিন গড়ে প্রতিটি বাস তিনবার একটি রুটে যাতায়াত করলেও এদিন তা বাড়িয়ে সর্বাধিক ৫ টি ট্রিপ পর্যন্ত করা হয়েছে। সকাল থেকে কোচবিহার সদর দফতরে কন্ট্রোল রুমও খোলে। এনবিএসটিসির ম্যানেজিং ডাইরেক্টর জয়দেব ঠাকুর বলেন, “নানা রুটে বাস অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি চলাচল করেছে। বাড়তি ২০ টি বাসও রাস্তায় নামানো হয়েছে।” |
জলপাইগুড়িতে বাস কম থাকায় চা রগুণ বেশি ভাড়া গুনে ছোট গাড়ি ভাড়া করে অফিস যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে। এ দিন সুযোগ বুঝে বিভিন্ন রুটের অটোগুলিতেও বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ডুয়ার্স মিনিবাস অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক গৌরব চক্রবর্তী বলেন, “আমরা আগাম জানিয়ে ধর্মঘটে সামিল হয়েছি। তাই যাত্রীদের সতর্ক থাকা উচিত ছিল।” |