নিয়ম বহির্ভূতভাবে তিন ছাত্রকে ভর্তি করার অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে প্রায় দশ ঘণ্টা ধরে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সোমবার ১২টা থেকে চাঁচল কলেজে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ অধ্যক্ষের ঘরে বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসেনজিৎ দাসের অভিযোগ, “ওই অধ্যক্ষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তিনি কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেআইনি কাজ করে চলেছেন। বেআইনিভাবে ছাত্র পরিষদের সদস্যদের কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করছি।” অধ্যক্ষকে ঘেরাও করার কথা অস্বীকার করে তাঁর দাবি, “আমরা অবস্থান-বিক্ষোভ করছি। ঘেরাও করা হয়নি।” রাজ্যের মন্ত্রী তথা মালদহের ইংরেজবাজারের বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেছেন, “ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়েই তৃণমূল ছাত্র পরিষদ আন্দোলনে নেমেছে। তবে আমি ওঁদের বলেছি সংযত ভাবে আন্দোলন করতে।” বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন অধ্যক্ষকে খাবার দেওয়া হয়েছে। তাঁকে কোনও রকম ভাবে হেনস্থাও করা হয়নি। |
কলেজ সূত্রের খবর, ২০১২ সালে বিএ প্রথম বর্ষের ৩ ছাত্র অকৃতকার্য হন। নিয়ম মেনে ‘ক্যাজুয়াল প্রার্থী’ হিসেবে তাঁরা তিন বার পরীক্ষায় বসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ক্যাজুয়াল প্রার্থীদের কোনও ভোটাধিকার থাকে না। কিন্তু টিএমসিপি-র অভিযোগ, ছাত্র সংসদ দখলে থাকায় ছাত্র পরিষদের চাপে ওই ৩ ছাত্রকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ফের কলেজে ভর্তি করিয়ে নেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগেই এ দিন ঘেরাও শুরু হয়। এ দিন কলেজ পরিদর্শনে এসে জন্য ঘেরাও হয়ে পড়েন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের পরিদর্শক অপূর্ব চক্রবর্তী-সহ সদস্যের প্রতিনিধিদল। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাহুল আমিন বলেন, “ওই তিন ছাত্রের ভর্তি সংক্রান্ত নথি খুঁটিয়ে দেখার জন্য সময় চাওয়া হয়। তার পরেও ওঁরা ঘেরাও শুরু করেন। ওঁদের দাবি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ছাত্র পরিষদ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
দুপুর থেকে চাঁচল কলেজে গেটে তালা ঝুলিয়ে টিএমসিপি-র ঘেরাও আন্দোলনের জেরে এ দিন কলেজের পঠনপাঠন হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে টানা ৯ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ঘেরাও করে রাখায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ চাঁচলের বিধায়ক তথা কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি আসিফ মেহবুব। তিনি বলেন, “একজন অধ্যক্ষকে এতক্ষণ ঘেরাও করে রাখা হয়েছে, অথচ পুলিশ-প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই। অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু এভাবে ঘেরাও করে রাখাটা সমস্যা সমাধানের নয়।” এই দিন চাঁচলের মহকুমাশাসক সঞ্জীব দে বলেছেন, “কলেজে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটকে পাঠানো হয়েছে। দু’পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যাতে সমস্যা মেটানো যায় তা দেখতে বলা হয়েছে।”
এই প্রসঙ্গে মালদহ জেলার পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছ থেকে কোনও সাহায্য চাননি। কোনও পক্ষ থেকেই অভিযোগও করা হয়নি। তবে কলেজে পুলিশ রয়েছে।” |