অসুস্থ ছেলের রক্ত উপাদান ‘প্লাজমা’ দরকার। পেশায় দিনমজুর ভবেশ বর্মন তাই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন। অথচ ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে তাঁকে বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ভবেশবাবুর অভিযোগ, কখনও বলা হয়েছে প্লাজমা নেই। কখনও বলা হয়েছে মেশিন খারাপ, কখনও বলা হয়েছে রক্তদাতা লাগবে। রক্তদাতা নিয়ে গেলে রক্ত মেলেনি। কিন্তু দালাল গিয়ে সেই প্লাজমাই ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে এসে তাঁকে ৩২০০ টাকায় বিক্রি করেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিকাল কলেজ হাসপাতালের ওই ঘটনা নিয়ে সরব জুনিয়র চিকিৎসক ও রোগীর পরিবার। রোগীর পরিবারের তরফে সোমবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়েছিল। অথচ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা না-নেওয়া হলে মঙ্গলবার জুনিয়র চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয়রা গিয়ে সুপারের দফতরে গিয়ে ফেটে পড়েন। পুলিশেও অভিযোগ জানানো হয়।
হাসপাতাল সুপার অমরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সোমবার হাসপাতালে এসেছিলেন। সে জন্য ব্যস্ততার মধ্যে এ ব্যাপারে কিছু করা যায়নি। এ দিন পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়েছে।” সুপার বলেন, “ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের ডিরেক্টর মৃদুময় দাস জানান, ডোনার কার্ড দেখালেই সাধারণত রক্ত বা তার উপাদান মেলে। একেবারেই না থাকলে রক্তদাতা আনতে বলা হয়। এ ক্ষেত্রে যে অভিযোগ উঠেছে তা দেখা হচ্ছে। হাসপাতাল এবং রোগীর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩০ ডিসেম্বর কিডনি সমস্যা নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা ভবেশবাবুর ৬ বছরের ছেলে পীযূষকে। তার চিকিৎসার জন্য রক্তের প্লাজমা দরকার হবে বলে গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসক জানান। ৩ দিন ধরে ব্লাড ব্যাঙ্কে ঘুরলেও তা মেলেনি। অবশেষে প্রসূতি বিভাগে সামনে এক দালাল তাদের সমস্যা শুনে ৩৫০০ টাকার বিনিময়ে ওই জোগাড় করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। ২০০ টাকা অগ্রিমও নেন। রবিবার চিকিৎসকের লেখা স্লিপ নিয়ে তিনি প্লাজমা নিয়েও আসেন। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে একটি চায়ের দোকানে ভবেশবাবুর হাতে প্লাজমার প্যাকেট তুলে দেন। ভবেশবাবু বলেন, “তা নিয়ে ওয়ার্ডে গেলে ওই রক্ত চায়ের দোকানে আমার হাতে দিয়েছে বলে স্ত্রী তা দিতে নিষেধ করেন। প্লাজমার প্যাকেটের গায়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্লাজমা বলে উল্লেখ থাকায় চিকিৎসকের পরামর্শে ফের ব্লাড ব্যাঙ্কে যাই। কর্মী জানান, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকেই তা দেওয়া হয়েছে। রোগীকে তা দিলে সমস্যা হবে না। এর পর চিকিৎসক তা রোগীকে দেন।” |