প্রযুক্তির সাহায্যে পড়ুয়ার স্বাস্থ্যে নজর রাখছে স্কুলই
দু’টি পিরিয়ডের মাঝে প্রধান শিক্ষকের ঘরে ডাক পড়ল দশম শ্রেণির পড়ুয়া সাহেব রেজা, সৌমিতা ঘোষ, বিশ্বজিৎ দাসদের। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলে, প্রধান শিক্ষক ইশারায় একটি যন্ত্রের উপর দাঁড়াতে নির্দেশ করলেন ওদের। এতদিন চিকিৎসকদের চেম্বারে ওই যন্ত্র দেখে এসেছে ওরা, এ বার স্কুলের প্রধান শিক্ষকের ঘরেও দেখল। ওজন মাপার যন্ত্রের উপরে একে একে এসে দাঁড়াল সৌমিতারা। সকলের ওজন দেখে, চটপট ল্যাপটপের তুলে রাখলেন প্রধান শিক্ষক। চলতি মরসুম থেকে প্রতি মাসে একবার করে স্কুলের সব পড়ুয়ার ওজন এবং উচ্চতা পরীক্ষার ব্যবস্থা শুরু করেছে শিলিগুড়ি লাগোয়া বিধাননগরের মুরলীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব সফটওয়্যারও তৈরি করিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পড়ুয়াদের ওজন এবং উচ্চতা প্রতিমাসে সেই সফটওয়্যারে নথিবদ্ধ করলে, কোনও পড়ুয়ার শরীরে অপুষ্টি বাসা বাঁধছে কি না তা জানিয়ে দেবে সফটওয়্যার।
একটি পেশাদারি সংস্থাকে দিয়ে সফটওয়্যারটি তৈরি করা হয়েছে। ‘বডি মাস ইনডেক্স ফর চিলড্রেন’ নামে ওই সফটওয়্যারে পড়ুয়াদের নাম, ছেলে অথবা মেয়ে, উচ্চতা, ওজনসহ আরও কয়েকটি তথ্য দিলে, সব হিসেব করে ওই পড়ুয়ার ওজন বেশি না কম তা জানিয়ে দেবে সফটওয়ার। প্রতি মাসে একবার করে ওজন নথিভুক্ত করলে, সফটওয়্যার হিসেব করে অপুষ্টির-রেখাচিত্রও তৈরি করে দেবে। তার ফলে সহজেই জানা যাবে ওই পড়ুয়ার শারীরিক সুস্থতার প্রবণতা।
মুরলীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ঘরে পড়ুয়ারা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে প্রান্তিক এলাকার একটি সরকারি স্কুলে এমন উদ্যোগের কারণ কী? স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাল, প্রান্তিক এলাকায় স্কুলটির অবস্থান বলেই এই উদ্যোগ। স্কুলের ১৬২৬ জন পড়ুয়ার মধ্যে ৬০ শতাংশ-ই ছোট অথবা মাঝারি চা বাগান এলাকার বাসিন্দা। পড়ুয়াদের অন্তত ৭০ শতাংশ-ই পরিবারের প্রথম শিক্ষিত প্রজন্ম। প্রধান শিক্ষক সামসুল আলম বললেন, “বেশিরভাগ পড়ুয়াই প্রান্তিক পরিবারের সদস্য, তাই তাঁদের পুষ্টি সম্পর্কে তথ্য রাখতেই হবে। অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেই, শিশুদের স্বাস্থ্যের আর্ন্তজাতিক মাপকাঠি অনুযায়ী সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমাসে একবার করে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ওজন এবং উচ্চতা মাপা হবে। প্রতিমাসে একবার করে ওই পড়ুয়ার বিস্তারিত বিবরণ সফটওয়্যার থেকে জেনে তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক। তাঁর কথায়, “স্কুলের পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যে নজরদারি নিয়ে দফতর থেকেও কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে কোনও স্কুল যদি নিজেরাই অপুষ্টি নির্ণয় করতে পারে তবে তার থেকে ভাল কিছু হতে পারে না। আমরাও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে আলোচনা করব।”
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে ওই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই প্রতিটি ক্লাসের পড়ুয়াদের ওজন মাপার কাজ শুরু হয়ে যাবে। স্কুলের সব কম্পিউটারেই ওই সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত সুব্রত সরকারের কথায়, “এই পদ্ধতি মডেল হওয়া উচিত। আমরা মুরলীগঞ্জ স্কুলে প্রতিনিধি পাঠিয়ে এ বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.