প্রসব দূরে থাক, আউটডোরেও ওষুধ মেলে না ইন্দিরা মাতৃসদনে
র জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিপুল পরিমাণ প্রসবের চাপ কমাতে বছর দু’য়েক আগে আহিরিটোলার অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি হোমের পাশাপাশি ইন্দিরা মাতৃসদনকেও আর জি করের ‘স্যাটেলাইট ইউনিট’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঠিক হয়, পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে আর জি করে জায়গা না পাওয়া রোগীদের ওই হাসপাতালে রেফার করা হবে। অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি এই কাজে সাফল্যের সঙ্গে পাশ করলেও ডাহা ফেল করেছে ইন্দিরা মাতৃসদন।
আর জি করের ভার লাঘব দূরে থাক, গত এক বছর হল রোগী ভর্তিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে ওই হাসপাতালে। স্বাভাবিক প্রসবটুকুও হচ্ছে না। হাসপাতালে সুপার, ডাক্তার নেই। মাস দু’য়েক আগে নামকা-ওয়াস্তে অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি থেকে এক জন মেডিক্যাল অফিসারকে ডিটেলমেন্টে করে সেখানে রেখে দেওয়া হয়েছে। তিনি দিনে ৩-৪ ঘণ্টা আউটডোরে বসে বাড়ি চলে যান। ৩-৪ জন নার্স ও কয়েক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও বসে বসে মাইনে পান। সরকারি নিয়ম থাকা সত্ত্বেও বিনা পয়সায় ওষুধও পাচ্ছেন না আউটডোরে আসা গর্ভবতীরা। উপায়ান্তর না দেখে ইন্দিরা মাতৃসদনের রোগীরা ভিড় জমাচ্ছেন সেই আর জি করে।
সুনসান ওয়ার্ড। —নিজস্ব চিত্র।
জেলার প্রত্যন্ত সব অঞ্চলে প্রসবের জন্য ডেলিভারি পয়েন্ট চালু করতে এখন ব্যস্ত স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। অথচ শহরের কেন্দ্রস্থলে বিশেষ ভাবে মা ও শিশুদের জন্য তৈরি ১০০ শয্যার ইন্দিরা মাতৃসদনে রোগী ভর্তি গত প্রায় এক বছর ধরে বন্ধ থাকা সত্ত্বেও তাঁদের হেলদোল নেই। এই স্বাস্থ্যকর্তারাই কিন্তু দু’বছর আগে বলেছিলেন স্বাভাবিক প্রসব বা জটিলতাবিহীন সিজার করতে থাকলে মেডিক্যাল কলেজের দক্ষতা ও পরিকাঠামোর অপব্যবহার হয়। অযথা রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় উন্নত মানের পরিষেবা ব্যাহত হয়। একমাত্র প্রসবকালীন বড় জটিলতার চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল কলেজে যাওয়া যেতে পারে। এই দৃষ্টিভঙ্গী থেকেই আর জি করের ভার কমাতে অবিনাশ দত্ত মেটারনিটি ও ইন্দিরা মাতৃসদনের কথা ভাবা হয়েছিল। কারণ, আর জি করের কাছের এই দুই হাসপাতালকে কাজে লাগানোই যাচ্ছিল না।
বছর দু’য়েক পরে অবিনাশ দত্ত মেটারনিটিতে ইমার্জেন্সি, সিজার এবং সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট চালু হয়ে গিয়েছে। অন্য দিকে, ইন্দিরা মাতৃসদনে ইন্ডোর যতটুকু খোলা ছিল, সেটিও পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর কথায়, “ইন্দিরা মাতৃসদনের ইন্ডোর বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা জানি। আসলে এখন জেলার ডেলিভারি পয়েন্ট বাড়াতে বেশি উদ্যোগী হয়েছি। কারণ সেখানে বেশি হাসপাতাল নেই। কলকাতায় একটি হাসপাতাল বন্ধ থাকলেও খুব সমস্যা হয় না। কারণ, অনেকগুলি মেডিক্যাল কলেজ আছে।”
তাই বলে এত বড় পরিকাঠামোয় সাধারণ ডেলিভারি বা সিজারও হবে না? কোনও ডাক্তার থাকবে না? তা হলে ঘটা করে আর জি করের স্যাটেলাইট ইউনিট করা হল কেন? স্বাস্থ্য অধিকর্তার জবাব, “ওখানে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার অন্য পরিকল্পনা ছিল। ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন।” স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফাই, “ওখানে পরিকাঠামো আমূল সংস্কারের পরিকল্পনা রয়েছে। নার্সিং কলেজের ভাবনাও আছে। সব একসঙ্গে হয় না। সময় লাগবে।” যা শুনে আর জি কর-এর স্ত্রীরোগ বিভাগের ডাক্তারদের একাংশের মন্তব্য, “কোনও সময়ে আমাদের হাসপাতালে বছরে ২০ হাজারের নীচে ডেলিভারি হয় না। ২০১৩য় ডেলিভারি হয়েছে ২১০২০টি। তার পরেও প্রায় আড়াই হাজার ডেলিভারি কেস অবিনাশ দত্ত মেটারনিটিতে রেফার করেছি। কিন্তু ইন্দিরা মাতৃসদনের ইন্ডোর বন্ধ থাকায় একটি কেসও পাঠাতে পারিনি।”
ইন্দিরা মাতৃসদনে গিয়ে দেখা গেল, সব ওয়ার্ড সুনসান, বিছানায় গদি-চাদর গোটানো। ইতিউতি গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও নার্সরাই জানালেন, তাঁদের কোনও কাজ নেই। আজকাল আউটডোরেও রোগী আসে না। শুধু বুধবার কয়েক জন এসে বাচ্চাদের রুটিন টিকাকরণ করান। সন্ধ্যা নামলেই হাসপাতাল ভূতের বাড়ি।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.