প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলছে না হাসপাতালগুলিতে, ভোগান্তি
ক ম্যালেরিয়া রোগীকে নিয়ে মঙ্গলবার সকালে তাঁর পরিবারের লোকজন গিয়েছিলেন এম আর বাঙুর হাসপাতালে। জ্বরে ধুঁকতে থাকা ওই রোগীকে প্রাইমা কুইন ফসফেট প্রেসক্রাইব করেন চিকিৎসকেরা। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় অত্যন্ত জরুরি এবং দামে সস্তা এই ওষুধটি সব হাসপাতালেই মজুত থাকার কথা। কিন্তু চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন, হাসপাতালের ফার্মাসিতে ওষুধটি নেই, তাই বাইরে থেকে কিনে আনতে হবে। কেন এমন জরুরি একটি ওষুধ হাসপাতালে মজুত থাকবে না, তার অবশ্য কোনও উত্তর দিতে পারেননি বিভাগের চিকিৎসকেরা। আউটডোর ও ইমার্জেন্সিতে আসা বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরাই অভিযোগ করেছেন, বেশিরভাগ সময়েই হাসপাতাল থেকে তাঁরা ওষুধ পান না। দু’টাকার টিকিটে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা হলেও ওষুধ কিনতে কয়েকশো টাকা খরচ হয়ে যায়।
দিন কয়েক আগেই সকলের কাছে নিখরচায় জরুরি ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যন্ত গ্রামের হাসপাতালেও যাতে ওষুধের অভাবে রোগীর ভোগান্তি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। কিন্তু আদত পরিস্থিতিটা কী, এই ঘটনাই তা প্রমাণ করে দেয়। জেলা বা গ্রাম তো দূর অস্ত্, খাস কলকাতার বড় হাসপাতালগুলিই ধুঁকছে জরুরি ওষুধের অভাবে। ফলে তা বাইরে থেকে কিনে আনতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত হাসপাতালকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, পরিস্থিতি না বদলালে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বস্তুত, এম আর বাঙুর একটি উদাহরণ মাত্র। ওষুধের আকাল সর্বত্র। মুখ্যমন্ত্রী যতই সমস্ত হাসপাতালে ওষুধ মজুত রাখার বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব আরোপের নির্দেশ দিন না কেন, সরকারি হাসপাতালগুলির অধিকাংশই তা অনুসরণ করছে না। এসএসকেএম-এর মতো নামী হাসপাতালে অমিল ঘুমের ওষুধ, ব্যথা কমানোর ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ এমনকী স্যালাইনও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ব্যথা কমানোর ওষুধ, শ্বাসকষ্টের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, প্লাস্টার করার সরঞ্জাম নেই। আর জি কর-এ নেই ঘুমের ওষুধ, শ্বাসকষ্টের ওষুধ, প্লাস্টার করার সরঞ্জাম। এনআরএস-এও অমিল হার্টের সমস্যার ওষুধ, জ্বরের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, ডায়াবিটিসের ওষুধ, ঘুমের ওষুধ, সেলাইয়ের সুতো সবই। শম্ভুনাথ পন্ডিত হাসপাতালেও জ্বরের ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, বমির ওষুধ, শ্বাসকষ্টের ওষুধ নেই।
এমনকী, শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় রেসপিউলসও পাওয়া যাচ্ছে না প্রায় কোথাও।
রোগীদের কাছে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে গয়ংগচ্ছ মনোভাব ঠিক কোন পর্যায়ে গিয়েছে, এসএসকেএম-এর একটি উদাহরণ থেকেই তা স্পষ্ট। গত সেপ্টেম্বরে হাসপাতালের আউটডোরে একটি বোর্ড টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তাতে সমস্ত ইমার্জেন্সি ওষুধ, ইঞ্জেকশন ও অন্যান্য সরঞ্জাম যে হাসপাতালেই মজুত থাকবে, তা স্পষ্ট করে লিখে দেওয়ার কথা। কোনও অবস্থাতেই ওই ওষুধ যাতে রোগীরা বাইরে থেকে না কেনেন, তা-ও উল্লেখ থাকার কথা বোর্ডে। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও একটি বোর্ড লাগিয়ে উঠতে পারেননি আধিকারিকেরা। হাসপাতালের এক কর্তার কথায়, “বহু সময়েই হাসপাতালে ওষুধ মজুত থাকা সত্ত্বেও আউটডোরের ডাক্তার বা নার্সরা তা বাইরে থেকে কিনতে বলেন। রোগী বা তাঁর বাড়ির লোকেরা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কেনেন। এ সব মুখ্যমন্ত্রীর কানে গেলে সর্বনাশ হবে। তাই বিভ্রান্তির কোনও সুযোগ না দিতে ওই বোর্ডের ব্যবস্থা করার কথা। সেটাও এখনও হল না।”
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং গ্রামীণ হাসপাতালে বিভিন্ন জীবনদায়ী অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ, রক্ত-মল-মুত্র-থুতু পরীক্ষা এবং এক্সরে-র ব্যবস্থা করা হবে বলে গত শনিবারই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কলকাতার বহু হাসপাতালে ওষুধ তো বটেই, এমন কী এক্সরে-র ফিল্মও অমিল। স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, এ ক্ষেত্রে টাকা কোনও সমস্যা নয়। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে টাকা কোনও প্রতিবন্ধকতা নয়। ২০১০-এ ওষুধ কেনার বাজেট ছিল ৮০ কোটি। ২০১৩-১৪ সালে তা হয় ৫০০ কোটি। আগামী আর্থিক বর্ষে তা হবে ৭০০ কোটি।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও ভাবেই ওষুধ অমিল থাকার কথা নয়। মুখ্যমন্ত্রী গোড়া থেকেই জীবনদায়ী এবং অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ মজুত রাখার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। মেডিক্যাল কলেজগুলির অধ্যক্ষদের বৈঠক ডেকে তাঁদের এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে বলা হবে। তাতেও কাজ না হলে শাস্তির ব্যবস্থা হবে। আমরা চাই ভুক্তভোগী মানুষ সরাসরি আমাদের কাছে এসে অভিযোগ জানান। তাতে ব্যবস্থা নিতে আমাদের সুবিধা হয়।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.