|
|
|
|
আপনাদের সবার প্রার্থনা চাই, বলছেন লক্ষ্মী |
মহাযুদ্ধের আগে বাংলাকে তাতাচ্ছে নব্বইয়ের রূপকথা
রাজীব ঘোষ • কলকাতা |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভাষায় ‘চিট-চ্যাট’। একাধিক সাংবাদিক বৈঠকে ভারত অধিনায়ক বলেছেন, “একটু চিট-চ্যাট ছাড়া ক্রিকেট জমে নাকি?” বাংলা ও রেলওয়েজ শব্দটার আমদানি করল রঞ্জি ট্রফিতেও। যে যাই বলুক, বুধবার ইডেনে কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে দুই শিবিরের মধ্যে উত্তেজনার ধিকি ধিকি আগুন কিন্তু জ্বলছেই।
ইডেনে নেট প্র্যাক্টিসের পর বোর্ডের দুর্নীতি দমন ও ডোপিং নিরোধক বিভাগের ‘ক্লাস’ সেরে যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন রেলওয়েজের পেসার কৃষ্ণকান্ত উপাধ্যায়, তখনই অশোক দিন্দার মুখোমুখি। মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যে মৃদু ঝড়। তাতেই বোঝা গেল দিল্লিতে মাঠের বাইরে যে অশান্তির আগুন জ্বলে উঠেছিল, সেই আগুন এখনও নেভেনি। দুই কোচ অবশ্য মুখে বলছেন, ও সব ভুলে গিয়েছেন। শান্তির একটা বাতাবরণও তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেটা আপাত দৃষ্টিতে। ভিতরে ভিতরে কিন্তু চাপা আগুন জ্বলছেই।
বুধবার সকালে দু’দল একই সঙ্গে মাঠের দু’দিকের দুই নেটে কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ প্রস্তুতি সারার সময়ও মুখ দেখাদেখি এক প্রকার বন্ধ দু’পক্ষের। বারুদের এই গন্ধ কমানোর চেষ্টায় যেমন একসঙ্গে পিচ দেখতে গিয়ে মুরলী কার্তিকের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে দেখা গেল বাংলার অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্লকে, তেমন অনুরীত সিংহ, করণ শর্মাদের সঙ্গেও হাত মেলালেন তিনি। দলের অন্য সদস্যরা কিন্তু আগুনটা বুকের মধ্যেই রেখে দিলেন।
ফোকাসটা ‘বদলা’ থেকে সরিয়ে ‘কোয়ালিটি ক্রিকেট’-এ আনার চেষ্টা যেমন শুরু করেছেন লক্ষ্মী, তেমনই সিএবি কর্তারাও সচেষ্ট। সকালে ইডেনে হাজির হয়ে বাংলার ক্রিকেটারদের সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া জানালেন, তাঁদের জন্য ‘বিশেষ প্যাকেজ’ অপেক্ষা করে আছে। ফাইনালে উঠলে আরও বড় প্যাকেজ। চ্যাম্পিয়ন হলে তো কথাই নেই, ‘বোনানজা’। |
প্রাক্তনদের শুভেচ্ছা উপহার। বাংলার প্রাক্তন অধিনায়কদের সই করা ব্যাট
তুলে দেওয়া হল
বর্তমান অধিনায়কের হাতে। লক্ষ্মীর সঙ্গে সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়,
পলাশ নন্দী,
জগমোহন ডালমিয়া এবং
অশোক মলহোত্র। |
দশ প্রাক্তন রঞ্জি ক্যাপ্টেনের সই করা শুভেচ্ছা-ব্যাট তিনিই তুলে দেন লক্ষ্মী-অশোক মলহোত্রদের হাতে। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে সাতসকালে ছুটেছিলেন কালীঘাটে বাংলার জয় কামনা করে পুজো দিতে। সেই প্রসাদ ও প্রসাদি ফুল এনে দেওয়া হয় লক্ষ্মীর দলের ছেলেদের। বাংলা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতেই এত হইচই বঙ্গ ক্রিকেটের প্রশাসনে! এতে আরও চাপে পড়ে যাচ্ছেন না তো তাঁর ক্রিকেটাররা? কোচ অশোক মলহোত্র বললেন, “এই স্তরের ক্রিকেট মানেই তো চাপ। এই চাপটা নিতে না পারলে চলবে কী করে? তবে ছেলেরা ‘ফোকাসড’।
বাইরের ঘটনায় বাড়তি কোনও চাপ নেই ওদের উপর। বরং এ সবে শিবির আরও চাঙ্গা হচ্ছে। ড্রেসিংরুমে এখন দারুণ আবহাওয়া।” লক্ষ্মী বললেন, “ভালই তো, প্রেসিডেন্ট এসে হাত মিলিয়ে শুভেচ্ছা জানানোয় দলের ছেলেরা চার্জড। এটা মাঠে কাজে লাগবে।” ড্রেসিংরুমে এখন কেমন ‘ফিল গুড’ পরিবেশ, তা বোঝা গেল দলের তরুণ ব্যাটসম্যান সুদীপ চট্টোপাধ্যায়কে জায়গা করে দিতে ব্যাটিং অর্ডারে ঋদ্ধিমান সাহার এক ধাপ নামার সিদ্ধান্তে। রাত পর্যন্ত ব্যাটিং অর্ডার, অভিমন্যু, অরিন্দম, শুভময়, সুদীপ, ঋদ্ধিমান, লক্ষ্মী, ঋত্বিক, সৌরাশিস, দিন্দা, শিবশঙ্কর ও সৌরভ সরকার। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী তাতে পরিবর্তন হতেই পারে বলে জানা গেল বাংলা শিবির থেকে।
এই আবহে অশোক মলহোত্রর ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’ ১৯৯০-এ, যে বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলা। বললেন, “এত দিন পর বাংলার ক্রিকেট নিয়ে সে রকম উত্তেজনা ফের অনুভব করছি। সে বারও খুব হইচই হয়েছিল আমাদের ফাইনাল নিয়ে।” ’৯০-এর সেই রূপকথা শুনিয়েই এখন ড্রেসিংরুম তাতাচ্ছেন কোচ। তবে এ বারের হইচইটা একটু বেশিই বলে মনে করেন ‘৯০-এ চ্যাম্পিয়নদের অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সেই দলের অন্যতম সদস্য ও আর এক প্রাক্তন বঙ্গ অধিনায়ক অরুণলাল। সম্বরণ বললেন, “তখন তো এত মিডিয়া ছিল না। সিএবি কর্তাদেরও তখন এতটা উৎসাহিত হতে দেখিনি। এ বার যেমন কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগেই বোনাসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল, সে বার তা হয়নি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর জেনেছিলাম, ইনসেন্টিভ পাব।” ‘প্যাকেজ’ ঘোষণার কনসেপ্টে সায় আছে অরুণলালের। বললেন, “এটা খুব ভাল সিদ্ধান্ত। এতে দলের মোটিভেশন আরও বাড়বে।” প্রাক্তন অধিনায়কদের দিয়ে মাঠ ভরানোর আবেদনের পরিকল্পনাও বেশ পছন্দ তাঁর। বললেন, “জানলে অবশ্যই যেতাম। কিন্তু আমাকে কেউ জানায়নি।” বিশ্বরূপ দে-র বক্তব্য, “আগেই বাংলা দলকে পেপ-টক দেওয়ার জন্য ওঁকে ডাকা হয়েছিল। সে জন্যই এ বার ডাকিনি।” |
যুদ্ধং দেহি নয়, আপাত শান্তি
সন্ধির মেজাজে দুই অধিনায়ক। মঙ্গলবার ইডেনে।
|
তবে অশোক যে ভাবে বললেন, “’৯০-এর দলের চেয়ে এই দল মানসিক শক্তিতে এগিয়ে,” সেই ধারণার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না সম্বরণ। বললেন, “সে বার ফাইনালে ওদের (দিল্লি) অজয় শর্মা, রামন লাম্বা, মনোজ প্রভাকর, মনিন্দর সিংহ, অতুল ওয়াসন-সহ ছ’জন ক্রিকেটার ইন্ডিয়া টিমে খেলত। তাদের বিরুদ্ধে খেলে আমরা জিতি। তাই বলে এদের খারাপ বলছি না। জুনিয়ররা দারুণ। দুর্দান্ত ফিল্ডিং করছে। মনে আছে ’৯০-এ আমাদের শরদিন্দু দুর্দান্ত একটা থ্রোয়ে রান আউট করেছিল, রাজা বেঙ্কট দুর্দান্ত একটা ক্যাচ নিয়েছিল। সে বার আমাদের ফিল্ডিংও দারুণ ছিল। এদের ফিল্ডিংটাও তেমনই ভাল। এটা ওদের বড় প্লাস পয়েন্ট। আমি এদের নিয়ে খুব আশাবাদী।” অরুণলালও বললেন, “আমি বাংলার খেলা সে ভাবে দেখতে পারিনি। তবে এটুকু জানি যে, কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার মতো দল ছিল না বাংলার। তা সত্ত্বেও ওরা উঠেছে। এটাই দারুণ ব্যাপার। মনে হয়, ওরা শেষ চারেও যাবে।” ১৯৯০-এর দলের এই দুই তারকাই আগামী পাঁচ দিন ইডেনে থাকবেন বলে জানিয়ে দিলেন। আর বর্তমান ক্যাপ্টেনকে সে দিনের ক্যাপ্টেনের পরামর্শ, “পরিস্থিতি অনুযায়ী, প্রতি সেশনের আগে পরিকল্পনা করে নিয়ে খেলো।”
লক্ষ্মী তাঁর পরিকল্পনা নিয়ে তৈরি। এত হইচই, প্রতিশ্রুতি, উত্তেজনা ছাপিয়ে অধিনায়কের পাখির চোখ এখন ইডেনের বাইশ গজে। শুধু বললেন, “যা হবে, ভালই হবে। শুধু চাই, সারা বাংলা আমাদের জন্য প্রার্থনা করুক।” |
খেলা শুরুর আগেই কড়া পদক্ষেপ ম্যাচ রেফারির
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
তিনি যে বেশ কড়া মানুষ, তা ইডেনে বাংলা-রেলওয়েজ ম্যাচ শুরুর আগের দিনই বুঝিয়ে দিলেন সৌরাষ্ট্রের ম্যাচ রেফারি রাজেন্দ্র জাডেজা। তাঁর নির্দেশ অমান্য করায় বোর্ড নিযুক্ত ভিডিও অ্যনালিস্টকে সরতে হল দায়িত্ব থেকে। ম্যাচ রেফারি ও টিভি আম্পায়ারকে ফুটেজ সরবরাহ করার জন্য প্রতি ম্যাচেই বোর্ডের ভিডিও অ্যানালিস্ট থাকেন। এই ম্যাচে দেবাশিস মাইতি ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁকে জাডেজা ক্লাবহাউসে ম্যাচ রেফারির বক্সে বসে কাজ করার নির্দেশ দিলে দেবাশিস তা মানতে রাজি হননি। কিছুক্ষণ পরেই মুম্বই থেকে বোর্ডের ই-মেলে দেবাশিসকে সরানোর নির্দেশ আসে। দেবাশিসের বদলি রাজু সোনি। দেশের ক্রিকেটমহলে রাজেন্দ্র বেশ কড়া মানুষ বলে পরিচিত। গত মরসুমেও ইডেনে একটি ম্যাচে দেবাশিসের সঙ্গে তাঁর মতান্তর হয়। সে বারও বোর্ডে তাঁর নামে নালিশ করেন জাডেজা। তবে সে বার তাঁকে সরানো হয়নি। ইডেনে রঞ্জি ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে বোর্ডের দূর্নীতি দমন বিভাগের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধি অংশুমান উপাধ্যায় হাজির থাকছেন। ড্রেসিংরুমের দরজায় নোটিস দেওয়া হয়েছে। যার বক্তব্য, ই-মেল, বা টেক্সট মেসেজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার, অর্থাৎ ল্যাপটপ, মোবাইল নিয়ে ড্রেসিংরুমে প্রবেশ করা যাবে না। প্রতি দিন খেলার পর র্যান্ডম সিস্টেমে দু’ দলের দু’জন করে ক্রিকেটারকে ডেকে নিয়ে ডোপ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে। |
যুযুধান ১ |
ওপেনার বনাম পেসার
অরিন্দম দাস ৬ ম্যাচে ৪৪৬ রান, সর্বোচ্চ ১৬৫, গড় ৪৪.৬০, সেঞ্চুরি ২, হাফসেঞ্চুরি ১
রঞ্জিত কুমার মালি ৫ ম্যাচে ২৩ উইকেট, ইনিংসে সেরা ৮-৪৮, ম্যাচে সেরা ১০-১০৩, গড় ১৫.৩০
মিডল অর্ডার বনাম সিমার
ঋদ্ধিমান সাহা ৪ ম্যাচে ২৮৭ রান, সর্বোচ্চ ৭৮, গড় ৪৭.৮৩, হাফসেঞ্চুরি ৩
কৃষ্ণকান্ত উপাধ্যায় ৭ ম্যাচে ১৯ উইকেট, ইনিংসে সেরা ৪-৬৩, ম্যাচে সেরা ৫-৮৯, গড় ৩৩.১৫
এক্স ফ্যাক্টর বনাম এক্স ফ্যাক্টর
লক্ষ্মীরতন শুক্ল ৭ ম্যাচে ৪৯১ রান, সর্বোচ্চ ১৫৫, গড় ৫৪.৫৫, সেঞ্চুরি ২, হাফসেঞ্চুরি ১
অনুরীত সিংহ ৭ ম্যাচে ৩৫ উইকেট, ইনিংসে সেরা ৫-৫২, ম্যাচে সেরা ৮-১১২, গড় ১৭.৫১ |
যুযুধান ২ |
পেসার বনাম টপ অর্ডার
অশোক দিন্দা ৭ ম্যাচে ২৯ উইকেট, ইনিংসে সেরা ৭-৮২, ম্যাচে সেরা ১০-১৫৭, গড় ২৫.৬২
নীতিন ভিল্লে ৮ ম্যাচে ৪৩২ রান, সর্বোচ্চ ১০০ ন.আ., গড় ৪৩.২০, সেঞ্চুরি ১, হাফসেঞ্চুরি ৪
সিমার বনাম মিডল অর্ডার
সৌরভ সরকার ৩ ম্যাচে ১২ উইকেট, ইনিংসে সেরা ৪-৫১, ম্যাচে সেরা ৭-৮৪, গড় ২১.৫৮
মহেশ রাওয়াত ৮ ম্যাচে ৬৮৭ রান, সর্বোচ্চ ১৮৮, গড় ৬৮.৭০, সেঞ্চুরি ২, হাফসেঞ্চুরি ৫
এক্স ফ্যাক্টর বনাম এক্স ফ্যাক্টর
সৌরাশিস লাহিড়ী ৭ ম্যাচে ২০ উইকেট, ইনিংসে সেরা ৭-৬২, ম্যাচে সেরা ১০-৯৫, গড় ১৮.৫০
অরিন্দম ঘোষ ৮ ম্যাচে ৬০২ রান, সর্বোচ্চ ২০৮ ন.আ., গড় ৬৬.৮৮, সেঞ্চুরি ২, হাফসেঞ্চুরি ২ |
|
|
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
পুরনো খবর: আশার আবহে টেনশনের চোরাস্রোত
|
|
|
|
|
|