প্রাচীন শহর হাওড়ার মাটির তলায় কোথায় কী রয়েছে, সেই মানচিত্র হারিয়ে গিয়েছিল আগেই। ফলে কোথা দিয়ে জলের পাইপ লাইন গিয়েছে তা জানার উপায়ও ছিল না। এ বার সেই মানচিত্র তৈরি করতে উদ্যোগী হল হাওড়া পুরসভা। এ জন্য বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ অ্যাণ্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসুর সাহায্য চেয়েছেন হাওড়া পুর কতৃর্পক্ষ।
হাওড়ার মেয়র তৃণমূলের রথীন চক্রবর্তী বলেন, “শহরটা রোগগ্রস্থ। চিকিৎসা প্রয়োজন। তাই দেশের সর্ববৃহৎ কারিগরি-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বেসুকে দিয়েই চিকিৎসা করাতে উদ্যোগী হয়েছি।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, মেয়র হিসাবে শপথ নেওয়ার কয়েক দিন পরেই রথীনবাবু বেসুতে যান এবং আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে পুর পরিষেবার উন্নতি করা যায় সে ব্যাপারে তাদের সাহায্য চান। মঙ্গলবার বেসুর সহ উপাচার্য অজয় রায় পুরভবনে আসেন মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে। দু’জনের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক বৈঠকের পরে মেয়র বলেন, “হাওড়া শহরের জন্য বাম বোর্ড কোনও কাজ করেনি। এমনকী মাটির নিচের মানচিত্রও হারিয়ে ফেলেছে। ফলে জলের লাইন কোথা দিয়ে গিয়েছে আমরা জানি না। ওই মানচিত্র তৈরির পাশাপাশি পানীয় জল থেকে নিকাশি সব ক্ষেত্রেই বেসুর তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়ার চেষ্টা করছি।”
মেয়রের বক্তব্য, “মানুষের শরীরে যে ভাবে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি হয়, স্ক্যানিং হয় সে ভাবেই শহরের মাটির তলার তথ্য জানা প্রয়োজন। বেসু সে ভাবেই আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মাটির তলার তথ্য পুরসভাকে সরবরাহ করবে।”
অজয়বাবু বলেন, “আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে কাজে না লাগিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। পুর-পরিষেবার উন্নতির জন্য হাওড়া পুরসভাকে প্রয়োজন মত সব রকম কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সাহায্য করা হবে।”
পুরসভা সূত্রের খবর, যেহেতু হাওড়া পুর এলাকার প্রধান সমস্যা পানীয় জল সরবরাহ, তাই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে শহরের জল সরবরাহ নিয়ে তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করছেন বেসুর ইঞ্জিনিয়াররা। তাতে থাকবে কোন ওয়ার্ডে দৈনন্দিন কত জল সরবরাহ হচ্ছে, কোথায় সরবরাহ হয়নি সেই বিষয়ে তথ্য। যাতে তা দেখে মেয়র ও কাউন্সিলরেরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
পাশাপাশি যে সব এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে জলসঙ্কট আছে বেসুর ইঞ্জিনিয়ারেরা সেই সব এলাকা চিহ্নিত করে কেন জল আসছে না, খতিয়ে দেখবেন। যেমন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা কেন গত ২৫ বছর ধরে জল পাচ্ছেন না তাও দেখা হবে। মঙ্গলবারের বৈঠকে শহরের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি এবং বেলগাছিয়া ভাগাড়ের বর্জ্য নিয়েও আলোচনা হয়। রথীনবাবু জানান, বেসুর সাহায্যে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আধুনিক মানের এক কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। সেখানে পুর পরিষেবা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকবে। সমস্তটাই হবে কম্পিউটারাইজড।”
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবারের বৈঠকে স্থির হয়েছে খুব শীঘ্রই মেয়র এবং বেসুর উপাচার্য পানীয় জলের বুস্টিং স্টেশন ও বেলগাছিয়া ভাগাড় পরিদর্শনে যাবেন। এর পরে ঠিক হবে কী ভাবে বুস্টিং স্টেশনগুলিকে উন্নত করা যায়। পাশাপাশি ভাগাড়ের আবর্জনাকে কী ভাবে অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হবে। |