নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
মাঝগঙ্গায় কনকনে জলে হাবুডুবু খাচ্ছেন এক প্রৌঢ়া। ঘাটে দাঁড়িয়ে শ’খানেক মানুষ। কেউ চেঁচাচ্ছেন। কেউ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ছেন। কেউ পুলিশে খবর দেওয়ার তোড়জোড় করছেন। কেউ খুঁজছেন মাঝি। কিন্তু কেউই জলে নামার সাহস দেখাচ্ছেন না।
শ্রীরামপুরের গঙ্গার ঘাট তখন সরগরম। দুই তরুণ এলেন। নিজেদের মধ্যে দু’-একটা কথা। তার পরেই জলে ঝাঁপ এবং দ্রুত সাঁতার। ফিরিয়ে নিয়ে এলেন প্রৌঢ়াকে।
মঙ্গলবার সকালে বছর পঞ্চান্নর অঞ্জনা ঘোষকে মৃত্যুর হাত থেকে এ ভাবেই ফিরিয়ে নিয়ে এসে নায়ক বনে গিয়েছেন শ্রীরামপুরের আলতাব হোসেন আর রাজা পাল। খবর শুনে দুই তরুণকে সাহসিকতার জন্য পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন হুগলির পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী। |
রাজা (বাঁ দিকে) এবং আলতাবের সঙ্গে অঞ্জনাদেবী। —নিজস্ব চিত্র। |
আর ঘাটে ফিরে কাঁপতে কাঁপতে অঞ্জনাদেবী রাজা-আলতাবের চিবুক ধরে আদর করতে করতে বলতে থাকেন, “তোদের জন্য নতুন জীবন পেলাম বাবা। ভাসতে ভাসতে যেখানে চলে গিয়েছিলাম, বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভগবানই তোদের শক্তি দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিলেন।”
বাসে চড়ে অঞ্জনাদেবী মাঝেমধ্যেই শ্রীরামপুরের গঙ্গায় স্নান করতে আসেন। মঙ্গলবারও নেমেছিলেন রায়ঘাট লাগোয়া মহিলাদের স্নানের ঘাটে। সাঁতার জানেন। কিন্তু জোয়ার এসে যাওয়ায় যাওয়ায় থই পাননি। ভেসে যেতে থাকেন ব্যারাকপুরের দিকে। পায়ে শাড়ি জড়িয়ে যাওয়ায় সাঁতার কাটতে পারছিলেন না।
বছর আঠারোর রাজা শ্রীরামপুরের নেতাজি সুভাষ অ্যাভিনিউতে থাকেন। কলের মিস্ত্রির কাজ করেন। বছর একুশের আলতাব এ বার শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক দেবেন। তাঁর বাড়ি আদালতের কাছেই। দুই বন্ধুর সাক্ষাৎ হয় ঘাটের কাছে। ঘাটে ওই জটলা দেখে কৌতূহলে উঁকি মারেন। তার পরেই স্থির করে ফেলেন কর্তব্য। পাশের জুটমিল ঘাট থেকে দু’জনে ঝাঁপ মারেন। ব্যারাকপুর গাঁধী ঘাটের আগে গঙ্গায় অঞ্জনাদেবীর মাথা তখন এক বার ডুবছে, এক বার উঠছে। তাঁর কাছে পৌঁছে দুই তরুণ তাঁকে অভয় দেন। পায়ে জড়িয়ে যাওয়া শাড়ি খুলে দেন। দুই তরুণের ‘লড়াই’ দেখেতে কয়েক জন উদ্যোগী হয়ে একটি ভুটভুটি পাঠান তিন জনকে নিয়ে আসার জন্য। ভুটভুটি ঘাটে ফিরতেই সকলে উল্লাসে ফেটে পড়েন। পুলিশ অফিসারেরা চাপড়ে দিয়েছেন আলতাব-রাজার পিঠ। পুলিশ সুপার বলেছেন, “আমরা ওঁদের পুরস্কৃত করব।” |