নদী বেষ্টিত আরামবাগ মহকুমায় নদী সেচ প্রকল্পের অভাব নেই। কিন্তু সরকারি তদারকির অভাবে সেই পরিকাঠামো ধ্বংস হয়ে গিয়ে কৃষিক্ষেত্রে নদীসেচ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেচ না মেলায় চাষের এলাকা দিনের পর দিন কমছে এবং অনেক বহু ফসলি বা তিন ফসলি জমি পতিত হয়ে থাকছে বলে অভিযোগ চাষিদের। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে মহকুমা কৃষিসেচ দফতর তা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছে।
মহকুমা কৃষিসেচ দফতরের আওতায় পড়ছে গোঘাটের দু’টি ব্লক এবং আরামবাগ ব্লক। ওই দুই থানা এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকেশ্বর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীকে কেন্দ্র করে কৃষিসেচ দফতরের অধীনে ৫৫টি জল উত্তোলন প্রকল্প রয়েছে। তার মধ্যে চারটি ডিজেল চালিত। বাকিগুলি চলে বিদ্যুতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যথাযথ পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ চাষিদের।
ওই দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জল উত্তোলন প্রকল্পগুলি কর্মীর অভাবে ধুঁকছে। ৫৫টি কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজন ১৬৫ জন কর্মী। কিন্তু বর্তমানে আছেন ৭০ জন। তার মধ্যে দু’জনকে কৃষিসেচ দফতরে এবং ১৯ জনকে ব্লক প্রশাসনে কাজে লাগানো হচ্ছে। জল উত্তোলন প্রকল্পের কেন্দ্রগুলি পরিচালনা করছেন মাত্র ৪৯ জন।
চাষিদের অভিযোগ, ওই কেন্দ্রগুলিতে সব সময়ে কর্মীর বা আধিকারিকের দেখা মেলে না। অভিযোগ জানাতে গিয়েও লাভ হয় না। মেরামতির অভাবে অনেক প্রকল্পই নষ্ট হতে বসেছে। কখনও যন্ত্রাংশ চুরি হচ্ছে, কখনও পাম্প বিকল হচ্ছে, কখনওবা জল উঠলেও ফাটা পাইপের কারণে তা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছচ্ছে না। অথচ, সে সব দেখার লোক নেই। সেই সুযোগে বেআইনি ভাবে পাম্প বসিয়ে এক শ্রেণির মানুষ সেচের জল বিক্রি করছেন চড়া দামে।
গোঘাটের মঙ্গলগাঁতি গ্রামের চাষি শ্যামাপদ দাস বলেন, “ওই প্রকল্পগুলিতে দীর্ঘদিনের পুরনো পাইপলাইন পাল্টানো হচ্ছে না। সেগুলি নষ্ট হতে বসেছে।” দিঘরা গ্রামের বলরাম সরকারের অভিযোগ, “আমরা যে সমস্যার কথা জানাব, প্রকল্পের কেন্দ্রগুলিতে গিয়েও তো আধিকারিকদের সব সময়ে পাচ্ছি না।” আরামবাগের কেশবপুর গ্রামের চাষি শেখ মকবুলের ক্ষোভ, “জলের অনিশ্চয়তায় চাষের এলাকা কমাতে হচ্ছে। অনেক জমিতে বর্ষায় শুধু আমন চাষটা হচ্ছে। তার পরে তা পতিত হয়ে থাকছে।”
মহকুমা কৃষিসেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নদী জল উত্তোলন প্রকল্পপিছু চাষের এলাকা সরকারি ভাবে ৬০ একর করে হলেও চাষিদের দাবিমতো প্রায় সর্বত্রই গড়ে ১০০ একর থেকে ১১০ একর জমিতে সেচের জল দেওয়া হত বছর দশেক আগেও। কিন্তু পরিকাঠামোগত ত্রুটিতে গত কয়েক বছর ধরেই তা কমছে। দফতরের হিসাবে এ বছর ৫৫টি প্রকল্পে খরিফ চাষ হয়েছে ২৭২৮ একর জমিতে। রবি চাষ হয়েছে ৩১২২ একর এবং বোরো চাষ হয়েছে মাত্র ১১৩ একর জমিতে।
মহকুমা কৃষিসেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার প্রসেনজিৎ মল্লিক বলাগড় এবং চুঁচুড়া সদর এলাকাতেও দফতরের কাজ দেখেন। সমস্যার কথা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “আরামবাগের ১২টি প্রকল্প সংস্কারে আর্থিক অনুমোদন মিলেছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। বাকিগুলিরও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দফায় দফায় সংস্কারের সুপারিশ করা হবে। দফতরের ফাঁকা পদগুলি বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ওয়াকিবহাল করা হয়েছে।” নিয়মিত তদারকির অভাবে প্রকল্পের কাজে কিছু ঘাটতি হচ্ছে মেনে নিয়ে তাঁর দাবি, “মহকুমায় নদীসেচ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে।” বেআইনি ভাবে প্রকল্প এলাকায় পাম্প বসিয়ে জল তোলার অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। |