|
|
|
|
আসামি খালাস পেলে শাস্তি তদন্তকারীকে
নিজস্ব প্রতিবেদন
৭ জানুয়ারি |
ফৌজদারি মামলায় কোনও আসামি বেকসুর খালাস পাওয়ার অর্থ হল বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকট হওয়া। একটি মামলায় মঙ্গলবার এই মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করল তদন্তকারী অফিসারদেরই। এই ধরনের দুর্বলতা ঢাকতে সুপ্রিম কোর্টের দাওয়াই, কোনও ফৌজদারি মামলার আসামি বেকসুর খালাস হওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ওই তদন্তকারী অফিসার যাতে ভবিষ্যতে তাঁর ভুলত্রুটি শুধরে নিতে পারেন তার জন্যই এই ব্যবস্থা।
এ দিন বিচারপতি সি কে প্রসাদ এবং জে এস খেহরের বেঞ্চ এই রায় দিয়ে বলেছে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর ওই তদন্তকারী অফিসারকে খুঁজে বের করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমদাবাদে ১ হাজার টাকার জন্য এক ছ’বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় এ দিন মুক্তি দিয়েছে বেঞ্চ। তদন্তে ব্যাপক ভুলত্রুটির জন্যই ওই আসামি মুক্তি পেয়েছেন, মন্তব্য বিচারপতিদের। তাঁরা বলেন, “ওই মেয়েটি সুবিচার পেল না। যে প্রকৃত অপরাধী সে আমদাবাদ বা অন্য কোনও শহরে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে জানে এই অপরাধ করেও তাকে শাস্তি পেতে হল না। এখন সে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।”
সুপ্রিম কোর্টের মতে, তদন্তে ত্রুটির ফলে আসামি খালাস পাওয়ার ঘটনা বেড়ে গিয়েছে। প্রকৃত অপরাধী ধরাই পড়ছে না। এটা চলতে পারে না। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ও বাতলে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। বেঞ্চের মতে, অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেলে ওই মামলার তদন্তকারী অফিসারকে চিহ্নিত করতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে তদন্তে তিনি কী ভুল করেছিলেন। দেখতে হবে ওই ভুল কাজে অবহেলার জন্য হয়েছে, না অন্য কারণ আছে। ভুলের জন্য প্রত্যেক অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিচারপতিরা এ দিন বলেছেন, এ ধরনের ভুল যাতে না হয় তার জন্য ছ’মাসের মধ্যে পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণের পাঠ্যসূচিতে এই ধরনের মামলাগুলিকে ‘কেস স্টাডি’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তা হলে বিষয়টি তাঁদের অজানা বলে কোনও তদন্তকারী অফিসারই ভবিষ্যতে পার পাবেন না।
বেঞ্চ এ দিন তাদের রায় শোনাতে গিয়ে বলেছে, “তদন্ত ঠিক মতো হলে দোষীরা সাজা পাবে। নিরপরাধদের জেলে কাটাতেও হবে না। কোনও নিরপরাধ গ্রেফতার হলে আটক থাকার সময়টুকু তাঁদের জীবন থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত দায়ী থাকে বিচারব্যবস্থাই। অনেক সময়েই নিরপরাধকে মামলায় ফেঁসে লজ্জা ও অপমানের মুখে পড়তে হয়।”
সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের এই নির্দেশ নিয়ে পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। মুম্বই হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “সব সময়েই যে তদন্তকারী অফিসারের জন্য নিরপরাধকে শাস্তি পেতে হয় তা কিন্তু নয়। তদন্তকারী অফিসার আদালতে চার্জশিট দেন। আদালত সেই চার্জশিট গ্রহণ করে। ” চিত্ততোষবাবুর প্রশ্ন, “পুলিশ কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইলে কেন তা ধরতে পারবে না সংশ্লিষ্ট আদালত?”
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বাস্তবসম্মত নয়। অনেক ক্ষেত্রে ভাল মামলা সরকারি আইনজীবীরা হেরে যান। তদন্তকারী অফিসার সব তথ্য প্রমাণ গুছিয়ে পেশ করলেও সেই মামলায় সরকার পক্ষের হার হয়।” ওই আইনজীবীর প্রশ্ন, “সে সব ক্ষেত্রে তদন্তকারী অফিসারদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে?” অরুণাভবাবুর মন্তব্য, “যে সব ক্ষেত্রে ইচ্ছে করে পুলিশ কাউকে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে, সে সব ক্ষেত্রে এই রায়ে সুফল পাওয়া যাবে।”
অতিরিক্তি ডিজি পর্যায়ের এক পুলিশ অফিসার সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে একপেশে বলে মনে করলেও তাঁর মতে, এ দিনের সব নির্দেশ যথাযথ ভাবে মানা হলে পুলিশেরই দক্ষতা বাড়বে। তিনি বলেন, এর ফলে তদন্ত আরও নিখুঁত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক সময় যথাযথ পরিকাঠামোর অভাবে তদন্ত নির্দিষ্ট মানে পৌঁছতে পারে না। যেমন ফিঙ্গার প্রিন্ট, ফরেন্সিক তদন্ত ইতাদি। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলি এর পর থেকে সুপ্রিম কোর্টের গুঁতোয় ওই পরিকাঠামো যথাযথ করতে উদ্যোগী হবে বলেও মনে করেন ওই পুলিশ কর্তা।” তাঁর মন্তব্য, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কী ভাবে রূপায়ণ করে তার উপরে আদালতের মূল উদ্দেশ্য সফল হওয়া নির্ভর করছে। |
|
|
|
|
|