দেড় মাস ধরে কার্যত সুষ্ঠু পরিষেবা দিয়েছিল মেট্রো। যাত্রীরা ভেবেছিলেন, পাতালপথে দুর্ভোগের দিন হয়তো এ বার শেষ হল। কিন্তু মঙ্গলবার কাজের দিনে ফের মেট্রো বিভ্রাটে তাঁদের ধারণা পাল্টাল। এবং আবারও ভোগান্তির মুখে পড়লেন শহরবাসী। মহানগরীর রাস্তায় উঠে ভিড়ে ঠাসা বাসে গন্তব্যে পৌঁছতে হল তাঁদের।
কলকাতার ‘লাইফ-লাইনে’ সমস্যার সূত্রপাত এ দিন দুপুর ১টা ২২ মিনিট নাগাদ। মেট্রোর মুখপাত্র রবি মহাপাত্র জানান, দমদমগামী একটি এসি ট্রেন যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য রবীন্দ্র সরোবরে আটকে যায়। থার্ড-লাইন থেকে বিদ্যুৎ নিতে পারছিল না ট্রেনটি। যাত্রীদের সেখানে নামিয়ে দেওয়া হয়। পরে মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারেরা পৌঁছে রেকটি মেরামত করেন। তার পরে পাঠিয়ে দেন কারশেডে। ট্রেন-বিভ্রাটের জেরে মহানায়ক উত্তমকুমার (টালিগঞ্জ) থেকে ময়দান স্টেশন পর্যন্ত পরিষেবা থমকে যায়। মেট্রোকর্তা জানান, দুপুর ২টো ৮ মিনিটে স্বাভাবিক পরিষেবা শুরুর আগে পর্যন্ত কবি সুভাষ থেকে টালিগঞ্জ ও দমদম থেকে ময়দান পর্যন্ত ট্রেন চলছিল।
আচমকা বিকল হওয়া ওই ট্রেনটিতে ছিলেন এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী শৌভিক মিত্র। তিনি বলেন, “কবি নজরুল থেকে ট্রেনে উঠি। ঘড়িতে তখন ১টা ৩ মিনিট। মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনে পৌঁছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ট্রেনটা। ফের নেতাজিতে মিনিট দশেক আটকে থাকে। থামতে থামতে রবীন্দ্র সরোবরে পৌঁছনোর পরে রেক একেবারেই খারাপ হয়ে যায়।” প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনটি কয়েক বার চালানোর চেষ্টা করেন চালক। দু’-তিন বার দরজা বন্ধ করা হয়। কিন্তু সেটি আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি। এর পরেই স্টেশনের ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে’ ট্রেন খালি করে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়। ধন্দে পড়েন যাত্রীদের অনেকেই। ওই সময়ে যাঁরা ট্রেন ধরতে মেট্রোর সুড়ঙ্গে নামছিলেন, তাঁরাও উপরে উঠে আসেন।
টালিগঞ্জ, রবীন্দ্র সরোবর, কালীঘাট, যতীন দাস পার্ক, নেতাজি ভবন স্টেশনের সামনে তুমুল ভিড় জমে যায় নিমেষে। ধর্মতলা, শ্যামবাজারমুখী বাসগুলিও মুহূর্তে বাদুড়-ঝোলা। ট্যাক্সির খোঁজে ছোটাছুটি করতে থাকেন কয়েক জন। চাঁদনি চকের এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী দেবাশিস দাস বলেন, “হাজরা মোড়ের বাসস্ট্যান্ডে তখন ভিড়। বাসগুলোয় পা রাখার জায়গা ছিল না। একটা ট্যাক্সি আসতেই পাঁচ-দশ জন গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছিলেন। আধ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ট্যাক্সি পেলাম। অফিসে পৌঁছতেও দেরি হল অনেকটা।”
মেট্রো সূত্রের খবর, গত দেড় মাস সুষ্ঠু পরিষেবার পিছনে বিশেষ কিছু প্রযুক্তিগত পরিকল্পনা ছিল কর্তৃপক্ষের। তাতেই মোটামুটি ঠিকঠাকই চলছিল পরিষেবা। এই পরিকাঠামোতেই বড়দিন, নববর্ষের যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়ও সামলেছে মেট্রো। এ দিনের ঘটনার পর পরিকল্পনাগুলিতে কী খামতি রয়েছে, তা দেখতে শুরু করেছেন মেট্রোকর্তারা। |