হাতে ‘কনফার্মড’ টিকিট নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছে অবাক রাকেশ অগ্রবাল। উড়ান সময় মতো ছাড়লেও, যথাযথ টিকিট থাকলেও তাঁকে উঠতে দেওয়া হল না বিমানে! বিমানসংস্থার কর্মীরা জানালেন, বিমান ভর্তি। মঙ্গলবার জেট বিমানসংস্থার উড়ানে কলকাতা থেকে লখনউ যাওয়ার কথা ছিল ওই যাত্রীর।
রাকেশবাবুর প্রশ্ন, তা-ই যদি হবে, তা হলে তাঁদের টিকিট বিক্রি করা হল কেন? তাঁর কথায়, “এ তো আর ট্রেন নয় যে আমি ওয়েটিং লিস্ট-এর টিকিট কাটব! তা ছাড়া টিকিট-এ তো লেখা আছে ‘কনফার্মড’!” জেট-এর তরফে জানানো হয়েছে, এটাই দস্তুর। যত আসন থাকে, বিমানে তার চেয়ে ৫ শতাংশ বেশিই টিকিট বিক্রি করা হয়।
জানা গিয়েছে, ভারতের বিমান পরিবহণ সংক্রান্ত যে নিয়ম রয়েছে সেখানে ‘সিভিল অ্যাভিয়েশন রুল, সেকশন ৩, এয়ার ট্রান্সপোর্ট সিরিজ এম, পার্ট-৩’-তে এ ভাবে বিমানের ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি টিকিট বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া রয়েছে বিমানসংস্থাগুলিকে। কনফার্মড টিকিট নিয়ে এসেও কেউ উড়ান ধরতে না পারলে সেই যাত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা রয়েছে ওই নিয়মে। এ দিন জেট-ও রাকেশবাবুকে সেই ক্ষতিপুরণ দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি নেননি। বলেছেন, বিষয়টি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতকে জানাবেন।
এর অর্থ, রাকেশবাবুর মতো যে কাউকেই যখন-তখন যে কোনও উড়ান থেকে নামিয়ে দিতে পারে বিমানসংস্থা! সঙ্গে কনফার্মড টিকিট থাকলেও প্রতিটি মূহূর্তে আশঙ্কায় থাকতে হবে যাত্রীকে! কারণ কাকে তোলা হবে, কাকে নামানো হবে তা সেই বিমানসংস্থার কর্তাদের মর্জির
উপরে নির্ভর করবে! রাকেশবাবুর অভিযোগ, এটা তো এক ধরনের প্রতারণা। প্রশ্ন উঠছে, ট্রেনে যেমন সমস্ত টিকিট বিক্রির পরে আরএসি (রিজার্ভেশন এগেনস্ট ক্যানসেলেশন) বা ওয়েটিং লিস্ট-এর টিকিট বিক্রি করা হয়, বিমানের ক্ষেত্রে সে রকম কেন করা হবে না?
সদ্য অবসর নেওয়া বিমান
মন্ত্রকের সচিব কে এন শ্রীবাস্তব এই ব্যবস্থার ঘোর বিরোধী। তাঁর কথায়, “এ নিয়ে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়লে বা কোনও মামলা হলে এবং তা নিয়ে বিস্তর হইচই হলে তবে যদি সরকারের টনক নড়ে এবং নিয়ম বদলে ফেলা হয়।” এই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-তে জমা দেওয়ার কথা। ডিজিসিএ-র এক কর্তার কথায়, “সে রকম অভিযোগ কখনও জমা পড়েনি। নির্দিষ্ট আসনের চেয়ে বেশি টিকিট বিক্রির এই ব্যবস্থা সারা বিশ্ব জুড়েই চালু রয়েছে। ফলে এখানে নিয়ম বদলানোর কথা ভাবা হয়নি। ক্ষতিপূরণ এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ।” তবে টিকিট বিক্রির সময়ে ট্রেনের মতো ব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত বলে মনে করেন ডিজিসিএ-র প্রাক্তন কর্তা অরুণ মিশ্র। তাঁর মতে, আরএসি বা ওয়েটিং লিস্ট-এর টিকিট থাকলে যাত্রী আগে থেকে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে বিমানবন্দরে পৌঁছবেন যে, তিনি বিমানে জায়গা না-ও পেতে পারেন।
কিন্তু, কার্যত তা হচ্ছে না। এয়ার ইন্ডিয়ার এক কর্তার পাল্টা যুক্তি, “বিমানের মোট আসন সংখ্যা যদি ১০০ হয়, তা হলে বড়জোর ১০৫ থেকে ১০৭টি টিকিট বিক্রি করা হয়।” কারণ, কমবেশি প্রতিটি উড়ানের ক্ষেত্রেই শেষ মূহূর্তে ওই ৫ থেকে ৭ শতাংশ যাত্রী আসেন না। সেই আসনগুলি যাতে খালি না যায়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা।
জেট এয়ারওয়েজের এক
অফিসার বলেন, “প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যাই হয় না। কিছু টিকিট যেমন বাতিল হয়, তেমন অতিরিক্ত টিকিট কাটা যাত্রীদের বিমানে জায়গা করে দেওয়া হয়।” কিন্তু, ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন রাকেশবাবু। ওই অফিসারের কথায়, “যাত্রীকে অনুরোধ করে পরের দিনের উড়ানে জায়গা করে দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় ক্ষতিপূরণ।” কিন্তু,
পেশায় আইনজীবী রাকেশবাবু সঙ্গে ব্যবসায়ী-বন্ধুকে নিয়ে লখনউয়ে একটি মামলার কাজে যাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, “আমার বুধবার সকালের মধ্যে
লখনউ আদালতে পৌঁছনোর কথা। বুধবার লখনউ গিয়ে সময় মতো আদালতে পৌঁছতে পারব কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।”
বিমান টিকিটের এজেন্ট লক্ষ্মীনারায়ণ ট্রাভেলস-এর জেনারেল ম্যানেজার দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “এই ক্ষতিপূরণই বিমানসংস্থার একমাত্র অস্ত্র। এমন অনেক যাত্রী নির্দিষ্ট দিনে যেতে না পারলেও নগদ তিন-চার হাজার টাকা ও পরের দিনের বিমানটিকিট নিয়ে বিনা প্রতিবাদে বাড়ি চলে যাবেন।” জানা গিয়েছে, কিংফিশার এ সব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাদের বিজনেস শ্রেণির দু’টি টিকিট বিনামূল্যে যাত্রীর হাতে ধরিয়ে দিত। সেই টিকিটে যাত্রী ভারতের যে কোনও শহর থেকে যে কোনও শহরে যেতে পারতেন। এর পরে বাক্যব্যয় না করে বাড়ি ফিরে যেতেন সেই যাত্রী। |