ভরসন্ধ্যায় দমদমে বুলেট বৃষ্টি
যেন কোনও সিনেমার আতঙ্কের দৃশ্য। জনবহুল এলাকায় পাঁচ-ছ’জন যুবক একটি দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল। সেখানেই এক ব্যক্তিকে লক্ষ করে তারা পরপর চার রাউন্ড গুলি চালাল। রাস্তাতেই লুটিয়ে পড়লেন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি। যারা গুলি চালাচ্ছিল তারা দিব্যি হাঁটতে হাঁটতে বেরিয়ে গেল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই দৃশ্য দেখল দমদমের শ্যামনগর। পুলিশের দাবি, এটি এলাকা দখলের লড়াই। ভর সন্ধ্যায় দমদমের বসতি এলাকায় এই ভাবে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তিকে ঘিরে ধরে গুলিচালনার ঘটনায় এলাকার মানুষ আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে দমদম ও সংলগ্ন এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য চলছে। প্রশ্ন উঠেছে, যে দখলের লড়াইয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত, সেই ঘটনা আটকাতে পুলিশ কোথায় থাকে?
যদিও পুলিশের দাবি, দমদমে দুষ্কৃতীরাজ কমাতে নিয়মিত ধরপাকড় চলছে। সম্প্রতি গেদু ও রাজেশ নায়েকের মতো একাধিক কুখ্যাত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও গেদু এখন ছাড়া পেয়ে বাইরে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দমদম শ্যামনগর এলাকার এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ইমারতি দ্রব্যের ব্যবসায়ী সুরেশ মিশ্র (৫০) ওরফে ল্যাংড়া সুরেশ। পুলিশের দাবি, সুরেশের সঙ্গেও দুষ্কৃতীদের যোগাযোগ রয়েছে।
তবে এমন ঘটনা নতুন নয়। গত বছরের মতো নতুন বছরেও উত্তপ্ত হল দমদম। গত বছরের গোড়াতে এই শ্যামনগর এলাকাতেই দুষ্কৃতী ফুফার হত্যাকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়েছিল দমদম-বাগুইআটি, লেকটাউন এলাকা। বছরভর গেদু-রাজেশের দলবলের গোলমালে সরগরম ছিল দমদম। বছর শেষের কিছু আগে লেকটাউন ও দমদমের প্রান্তিক এলাকা হরিজন পল্লিতেও একই ভাবে দু’দল দুষ্কৃতী দলের লড়াইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ডাইনাস নামে এক যুবকের। বছর শেষের আগেই রাজেশ-গেদুর মতো কুখ্যাত দুষ্কৃতী ও তাঁদের একাধিক সহযোগীদের গ্রেফতারের পরে পুলিশের ধারণা ছিল, দমদম তুলনায় অনেকটাই শান্ত থাকবে। কিন্তু পুলিশের অনুমান ভুল প্রমাণ করে নতুন বছরেও অব্যাহত ‘দমদম দাওয়াই।’
ঠিক কী ঘটেছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়? পুলিশ জানায়, শ্যামনগরের ৭এ দক্ষিণপাড়া রোডে পূবালি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা সুরেশবাবু এ দিন সন্ধ্যায় এলাকার একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দোকানটির শাটার অবশ্য নামানো ছিল। আচমকা পাঁচ-ছ’জন যুবক এসে খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি চালায়। একটি গুলি তাঁর গায়ে লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় সেখানেই লুটিয়ে পড়েন সুরেশবাবু। চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। গুলির আওয়াজ পেয়ে ছুটে পালাতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে তাঁরাই সুরেশবাবুকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন সুরেশবাবুর ছেলে অঙ্কুশ মিশ্র। তিনি বলেন, “পাঁচ-ছ’টি ছেলে এসে গুলি চালায়। প্রথমে ভেবেছিলাম বাবা কোথাও লুকিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু তা হল না।” ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা বলেন, “রাজেশ নায়েক ও তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের লড়াই বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি রাজেশের দলের লোক বলেই জানা গিয়েছে।”
তদন্তকারীরা জানান, পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে চার রাউন্ড গুলি চলেছে। তবে দুটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে বন্ধ দোকানের শাটারে লেগেছে। একটি গুলি সুরেশবাবুর শরীরে লেগেছে। ঘটনাস্থল থেকে দুটি গুলির খোলও উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের অনুমান, গুলি চলার আগে সুরেশবাবুর সঙ্গে দুষ্কৃতীদের ধস্তাধস্তি হয়েছে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে, টুপি দেওয়া জ্যাকেট, জিন্সের প্যান্ট, স্নিকার্স পরে পাঁচ-ছ’জন যুবক এসেছিল।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বন্ধ সেই দোকানের শাটারে গুলির দাগ। ঘটনাস্থলে পড়েছিল চাপ চাপ রক্ত। জনবহুল দক্ষিণপাড়া রোডে এই ঘটনার পরে কার্যত এলাকা সুনসান। কয়েকটি মোড়ে কিছু লোক জটলা করে রয়েছে। আতঙ্কে এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। স্থানীয় এক বাসিন্দা রমেশ ঘোষ বলেন, “সমাজবিরোধীদের নিজেদের লড়াইয়ে এলাকায় থাকা দায় হয়ে উঠেছে।”
সম্প্রতি দুষ্কৃতী রাজেশ গ্রেফতার হওয়ার পরে এলাকা দখল করতে তার বিরোধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অনুমান পুলিশের। পথের কাটা দূর করতে রাজেশের সঙ্গীদের উপরে চলছে হামলা। তার জেরে ফের এলাকা অশান্ত হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান দেবাশিস বেজ বলেন, “সমাজবিরোধীদের ধরার প্রক্রিয়া চলছে। নজরদারিও আগের থেকে বাড়ানো হয়েছে। সম্প্রতি রাজেশ-সহ একাধিক দুষ্কৃতীকে ধরাও হয়েছে।
কিন্তু সমাজবিরোধীদের একেবারে মুছে ফেলা যায়নি। সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখতে আমরা জোরকদমে দমদমে দুষ্কৃতীরাজ কমানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.