নিশ্চিন্ত মনে ১৭০ জন যাত্রী নিয়ে রানওয়ে দিয়ে তখন সবে দৌড় শুরু করেছিলেন পাইলট। দৌড় মানে পুরো গতি নিয়ে দৌড়। জানতেন না, মাথার উপরে অপেক্ষা করছে নিশ্চিত মৃত্যু।
কলকাতার রানওয়ে ছেড়ে জেট এয়ারওয়েজের এই মুম্বই উড়ান সে দিন যদি উড়ে যেত তা হলে তার সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারত স্পাইসজেটের বিমানের। সেটি বেঙ্গালুরু থেকে তখন চলে এসেছে কলকাতার মাথায়। বিষয়টি নজরে আসে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে বসে থাকা কন্ট্রোলারের। তিনি তড়িঘড়ি যোগাযোগ করেন জেট-এর পাইলটের সঙ্গে। বলেন, “এখনই টেক-অফ বাতিল করো।” বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)।
কিন্তু কী করে জেট-এর বিমানের মাথায় চলে এল স্পাইসজেটের বিমান? |
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে ঢাকা থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান নামার পরে জেট-এর ওই বিমানটিকে টেক-অফ করার অনুমতি দেওয়া হয়। পাইলটও সেই মতো বিমান নিয়ে ঢুকে পড়েন রানওয়েতে। প্রধান রানওয়ের দক্ষিণ প্রান্তে সল্টলেকের দিক থেকে ঢুকে বিমানটির বারাসতের দিকে মুখ করে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল। আর প্রধান রানওয়ে থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ আকাশে নামার জন্য বেঙ্গালুরু থেকে চলে এসেছিল স্পাইসজেটের ওই বিমান। ঠিক ছিল, জেট উড়ে যাবে আর তার দেড় মিনিটের মধ্যে স্পাইসজেট নেমে আসবে।
কিন্তু, সমস্যা দেখা দেয় স্পাইসজেটের বিমান নিয়ে। মনে করা হচ্ছে, ওই সময় আকাশে যে উচ্চতায় সেই বিমান চলে এসেছিল, সেখান থেকে তার পক্ষে রানওয়ের ঠিক জায়গায় নেমে আসা সম্ভব ছিল না। তাই, সেই বিমানের পাইলট এটিসি-কে জানান, তিনি সরাসরি না নেমে মুখ ঘুরিয়ে আবার উড়ে যাবেন। তার পর নেমে আসবেন। বিমান পরিবহণে এই ঘটনা নিত্য দিনই ঘটে। নামার সময়ে কোনও কারণে হিসেবের ভুলচুক হয়ে গেলে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাই, সেই হিসেবে গরমিল ধরা পড়লে পাইলট বিমান নিয়ে এক চক্কর ঘুরে তার পর নেমে আসেন। বিমান পরিবহণের ভাষায় একে ‘গো-অ্যারাউন্ড’ বলে।
সমস্যা দেখা দেয় সেখানেই। স্পাইসজেটের বিমানের গতি তখন ঘণ্টায় প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। তাকে নেমে এসে মুখ ঘুরিয়ে যেতে হলে প্রধান রানওয়ের মাথার উপর দিয়েই উড়ে যেতে হবে। উড়ানটি রানওয়ের দক্ষিণ প্রান্তে নেমে এলে অবশ্য উত্তর প্রান্ত থেকে জেট-এর উড়ে যাওয়ার সময়ে কোনও সমস্যা হত না। কিন্তু, স্পাইসজেট ‘গো-অ্যারাউন্ড’ করলে তাকে রানওয়ের উত্তর প্রান্তে চলে আসতেই হবে। আর সেই সময়ে রানওয়ে থেকে তার উচ্চতা থাকবে বড়জোর ২০০০ ফুট। তখন জেট যদি টেক-অফ করত তা হলে সেই ২০০০ ফুট উচ্চতায় উঠে যেতে তার সময় লাগতে পারতো বড়জোর ৩০ সেকেণ্ড। ফলে, দু’টি বিমানের ধাক্কা লেগে যেত। ভয়ঙ্কর এক দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকত কলকাতার আকাশ।
বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, “কন্ট্রোলার সঠিক সময়ে সিদ্ধান্তটি না নিলে, জেটকে উড়তে বারণ না করলে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটতে পারত।” এটিসি-র নির্দেশ মেনে বিমান নিয়ে রানওয়ে ছেড়ে আবার টার্মিনালের সামনে পার্কিং-বে তে ফিরে আসে জেট। সেই বিমান ইঞ্জিনিয়াররা পরীক্ষা করার পরে জ্বালানি ভরে আবার তা উড়ে যায়। মুখ ঘুরিয়ে স্পাইসজেটের বিমান মিনিট পাঁচেক পরে নেমে আসে কলকাতায়। |