হার মানল মঙ্গলগ্রহ, ঘরবন্দি আমেরিকা
মার্কিন-মুলুকে ঠান্ডা ও তুষারপাতের বহু রেকর্ড ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলেছে সে। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত দিচ্ছে না ‘পোলার ভর্টেক্স’ বা মেরু-ঘূর্ণাবর্ত। আবহবিদ্দের আশঙ্কা, আমেরিকার ‘মিডওয়েস্ট’ রাজ্যগুলির হাল খারাপ করার পর এ বার তার নিশানায় দক্ষিণ ও পূর্বের রাজ্যগুলি। মার্কিন প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রতিকূল হাওয়ার জেরে ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন চার জন। পরিস্থিতি দ্রুত না বদলালে এই তুষার-হানায় ঠিক কতটা বিপত্তি হতে পারে, তা ভেবেই দিশাহারা বাসিন্দারা।
বাস্তবিক। গত দু’তিন দিন ধরে এই ঘূর্ণাবর্তের শাসানিতেই ঘরবন্দি বহু বাসিন্দা। বন্ধ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস। সোমবার মন্টানা, নর্থ ও সাউথ ডাকোটা, মিনেসোটা, আইওয়া, উইসকনসিন, মিশিগান এবং নেব্রাস্কার মতো রাজ্যগুলির কোথাও কোথাও স্বাভাবিকের থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল। তবে আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা সংস্থার হিসেব মতো সোমবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল মিনোসোটার ব্যাবিট শহরের। সেখানে থার্মোমিটারের পারদ শূন্যের থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে নেমে যায়। যার কাছে হার মানছে মঙ্গলগ্রহের তাপমাত্রাও। নাসা সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, ২ জানুয়ারি মঙ্গলগ্রহের তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে। অর্থাৎ শীতের তীব্রতার নিরিখে ফেল মঙ্গলগ্রহও। সব মিলিয়ে সপ্তাহের শুরুতেই ‘ডে আফটার টুমরো’ ছবিটির বাস্তব সংস্করণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মিডওয়েস্ট আমেরিকা।
ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব দা আমেরিকান ইন্ডিয়ানের কৃত্রিম ঝর্নাটিও জমে বরফ।
ওয়াশিংটনে। মঙ্গলবার। ছবি: রয়টার্স।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই প্রাণঘাতী শীত? বিশেষজ্ঞদের দাবি, শীতের সময়, সুমেরু অঞ্চলে এক ধরনের তীব্র ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। প্রবল হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা হাওয়া আর বিপজ্জনক তুষারপাত এ হেন ঘূর্ণিঝড়ের মূল বৈশিষ্ট্য। এরই বৈজ্ঞানিক নাম পোলার ভর্টেক্স। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ বার যে পোলার ভর্টেক্সটির জেরে আমেরিকার এমন অবস্থা, সেটির উৎস সাইবেরিয়া। সেখান থেকেই প্রথমে আমেরিকার উত্তরে, তার পর মিডওয়েস্ট রাজ্যগুলিতে ধীরে ধীরে ঘুরেছে এটি। এ বার লক্ষে দক্ষিণ আর পূবের রাজ্যগুলি। এর জেরে গত বেশ ক’বছরের মধ্যে শীতলতম দিনটি কাটাতে পারে টেক্সাস এবং ফ্লোরিডার মতো রাজ্যগুলি। অন্য দিকে, নিউ ইয়র্কে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো।
শুধু বাড়িতে বন্দিদশা কাটানোই নয়, এই তীব্র শৈত্যের জেরে সাংঘাতিক বিপর্যস্ত হয়েছে ট্রেন ও বিমান চলাচল ব্যবস্থা। শিকাগোর ও’হেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বাকি রাজ্যগুলির বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকেই সোমবার বহু উড়ান বাতিল হয়। মূলত তীব্র শীতে জ্বালানির জমে যাওয়া এবং দৃশ্যমানতা কম থাকায় উড়তে পারেনি বিমান। অন্য দিকে, রেলপথে পুরু বরফ পড়ায় ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়। প্রশাসনের তরফ থেকে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে, খুব প্রয়োজন না হলে কোনও অবস্থাতেই যেন গাড়ি নিয়ে না বেরোন বাসিন্দারা। ইন্ডিয়ানাপোলিসে আবার গাড়ি নিয়ে বেরোনোকে বেআইনি ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
অতলান্তিকের ও পারের ব্রিটেনেরও অবস্থা শোচনীয়। বৃষ্টি থামার লক্ষণ নেই। বরং কোথাও কোথাও তা বেড়েছে। গোটা ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস জুড়ে জারি হয়েছে বন্যা-সতর্কতা। গত রাতে দক্ষিণ পশ্চিম ইংল্যান্ডের ডরসেটের তীরে এত উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছিল, যে প্রশাসনকে ‘সাইরেন’ বাজিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করতে হয়। কিসওয়েল, প্রিস্টন বিচ এবং ডরসেটের এক অংশে ‘সর্বোচ্চ’ বন্যা সতর্কতা জারি করেছে পরিবেশ সংস্থা। শিলাবৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.