‘সুপার-স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতালে উন্নীত হতে চলেছে ঘাটাল হাসপাতাল। কাল, বুধবার ঝাড়গ্রামের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রকল্পের শিলান্যাস করার কথা। পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “এই হাসপাতালের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এই টাকায় নতুন ভবন তৈরি হবে।”
২০১২-র ২৪ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মোট ছ’টি হাসপাতাল ‘মাল্টি-স্পেশ্যালিটি’ বা ‘সুপার-স্পেশ্যালিটি’ স্তরে উন্নীত হবে। তালিকায় ছিল, ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল, গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম, শালবনি ও ডেবরা হাসপাতাল। ২০১২-র ওই দিনে ডেবরা ও শালবনি গ্রামীণ হাসপাতালের প্রকল্পের শিলান্যাসও করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তার পরে কেটেছে এক বছর আট মাস। কিন্তু ওই দু’টি হাসপাতালের কাজ শুরু হয়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, দু’টি ক্ষেত্রেই টেন্ডার ডাকা হয়েছে। তবে এখনও স্বাস্থ্য দফতরের হাতে জমি আসেনি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, “ডেবরায় সেচ দফতরের কাছ থেকে স্বাস্থ্য দফতরে জমি হস্তান্তর হয়নি। শালবনিতেও স্বাস্থ্য দফতরের হাতে খাস জমি আসেনি।” তবে গিরীশবাবুর আশ্বাস, “ঘাটালে জমি নিয়ে সমস্যা নেই। তাই দ্রুত কাজ শুরু করা যাবে।” ‘সুপার-স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতালে সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন, থাকবে আধুনিক পরীক্ষাগার, অপারেশন থিয়েটার, ব্লাড ব্যাঙ্ক, পর্যাপ্ত শয্যা, শিশুদের জন্য উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা। সেই লক্ষ্যেই শালবনি ও ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা করে মঞ্জুর করা হয়। কিন্তু এখনও কাজ শুরু হয়নি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালের জমিতে পরিকাঠামো গড়া সম্ভব ছিল না। পাশে সেচ দফতরের জমিতে নতুন ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সেই জমিতে বেআইনি দখলদার ছিল। বহু চেষ্টায় জমি দখলমুক্ত হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য দফতরকে জমি হস্তান্তরের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। আর শালবনিতে খাস জমি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ডেবরায় বেআইনি দখলদারদের বুঝিয়ে জমি থেকে সরাতে বেশ খানিকটা সময় লেগেছে। আর শালবনিতে উপযুক্ত জমির খোঁজ পেতে সময় লাগছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ঘাটালের ক্ষেত্রে নতুন প্রকল্পের জন্য জমি মহকুমা হাসপাতাল চত্বরেই রয়েছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, নার্সদের আবাসনের উল্টো দিকে ফাঁকা জমিতে ‘সুপার-স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতালের নতুন ভবন হবে। এই প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বে থাকবে ‘মেডিক্যাল সার্ভিস কমিশন কর্পোরেশন’। এই হাসপাতালে নার্সিং কলেজ তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বছর তিনেক আগে বাম আমলে ঘাটাল হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। হাসপাতালের পরিষেবা নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রসূতি বিভাগে শয্যার
অভাবে এখনও বহু মা ও সদ্যোজাতকে মেঝেতে রাত কাটাতে হয়। অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতিও নিম্ন মানের, পর্যাপ্ত আলো নেই, সাফাইকর্মীর অভাবে নিয়মিত সব বিভাগের আবর্জনা পরিষ্কার হয় না। চিকিৎসক, নার্স, কর্মীও পর্যাপ্ত সংখ্যায় নেইঅভিযোগের তালিকা খুব ছোট নয়। ‘সুপার-স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতাল হলে এই ছবিটা বদলে যাবে বলেই এলাকাবাসীর আশা। |