রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় যাতায়াতের সুবিধার জন্য ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে নতুন রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। আজ, মঙ্গলবার হাওড়া ও হুগলি-সহ এক যোগে গোটা রাজ্যের সব পঞ্চায়েতে ওই কাজ শুরু হতে চলেছে। প্রতিটি পঞ্চায়েতে পাঁচটি করে রাস্তা তৈরি হবে। তার মধ্যে একটি হবে কংক্রিট বা মোরামের, বাকি চারটি মাটির।
আজ, পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ির আমলাশোলে ‘ফার্ম নেট’ নামে নতুন এই প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই সব পঞ্চায়েতে এক যোগে শুরু হয়ে যাবে কাজ। হুগলিতে রয়েছে ২০৭টি পঞ্চায়েত। হাওড়ায় ১৫৭টি। দু’টি জেলাতেই প্রকল্পটি উদ্বোধনের সময়ে উপস্থিত থাকবেন রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের পদস্থ কর্তা এবং মন্ত্রীরা।
গত পঞ্চায়েত ভোটের জন্য রাজ্যের ১৯টি জেলাতেই ১০০ দিনের কাজ কিছুটা গতি হারায়। এ নিয়ে রাজ্য সমালোচনার মুখে পড়ে। সম্প্রতি বিভিন্ন জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ চাপা থাকেনি। তিনি বারে বারই প্রশাসনিক কর্তাদের সতর্ক করে দেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রকল্পভিত্তিক খোঁজখবর নিতেও শুরু করেন।
রাজ্যের সর্বত্রই খেত রয়েছে। চাষবাসও হয়। কিন্তু ভাল রাস্তা না থাকায় খেতের ফসল ঘরে তুলতে সমস্যা হয় চাষিদের। তার উপর দিয়েই গরুর গাড়িতে বা ট্রাক্টরে ফসল নিয়ে যেতে হয়। গ্রামবাসীদের হাটবাজার, হাসপাতাল যাতায়াতের পথও যাতে সুগম হয়, সে কারণে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ‘ফার্ম নেট’ প্রকল্পটিকে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করে রাজ্য।
হুগলির জেলাশাসক মনমীত নন্দা জানিয়েছেন, আজ, মোট ৫৭০টি জায়গায় একই সঙ্গে কাজ শুরু হচ্ছে। প্রতিটি প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কাজ দেখতে রাজ্য সরকারের পরিবহণ, গ্রামোন্নয়ন এবং আবাসন দফতরের অন্তত ১৪ জন কর্তা জেলায় উপস্থিত থাকবেন। তা ছাড়াও থাকবেন, জেলার সব মন্ত্রী, পরিষদীয় সচিব এবং জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারীরাও। চণ্ডীতলা-২ ব্লকে থাকছেন পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ সচিব আশিস চক্রবর্তী থাকছেন শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকে। জেলাশাসক নিজে থাকবেন মগরা-চুঁচুড়া ব্লকের কোদালিয়া পঞ্চায়েতে। পোলবাতেও যাবেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আবিদ হোসেন বলেন, “কংক্রিটের রাস্তা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মোরামের কাজও শুরু করা হবে। খানাকুল, বলাগড়, জাঙ্গিপাড়ার মতো ব্লকগুলিতেও এই কাজে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”
হাওড়াতে মোট ৬৫১টি রাস্তার কাজ শুরু হবে বলে প্রশাসন জানায়। এখানে প্রতিটি রাস্তার কাজের উদ্বোধনের সময়ে উপস্থিত থাকছেন মন্ত্রী, বিধায়ক এবং জেলা থেকে ব্লক স্তরের প্রশাসনের পদাধিকারীরা।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ১০০ দিনের কাজে কোন রাস্তা হবে তা বাৎসরিক পরিকল্পনায় আগেই অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ম। সেই মতো বহু রাস্তাই ওই পরিকল্পনার মধ্যে আছে। তার বাইরেও বেশ কিছু রাস্তা নতুন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস জানান, প্রকল্পে যাতে বেশি সংখ্যক জব কার্ডধারীকে সামিল করানো যায়, সেটাও দেখতে বলা হয়েছে।
আজ, জেলাশাসক নিজে থাকছেন উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের ধুলাশিমলা পঞ্চায়েতে। শ্যামপুর-১ ব্লকের নবগ্রাম পঞ্চায়েতে যাচ্ছেন রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়। সদ্য নির্বাচিত পরিষদীয় সচিব তথা উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক পুলক রায় যাচ্ছেন চণ্ডীপুর পঞ্চায়েতে। বাগনান-২ ব্লকের বাঁটুল বৈদ্যনাথপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে থাকছেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য।
কোন কোন রাস্তার কাজ হবে, সপ্তাহখানেক ধরে তার তালিকা তৈরি করতে ঘুম ছুটেছে পঞ্চায়েত প্রধানদের। আমতা-১ ব্লকের রসপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়ন্ত পোল্লে বলেন, “কংক্রিটের রাস্তার স্কিম আমরা এখনও দিতে পারিনি। কিন্তু চারটি নতুন মাটির রাস্তা নির্বাচন করেছি।” |