পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভিন্ রাজ্যের পর্যটক টানতে উদ্যোগী হয়েছে ‘ইউথ হস্টেল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’। কম খরচে বেড়ানোর সুযোগ করে দিতে চলতি অর্থবর্ষেই বিভিন্ন জেলায় ছ’টি শাখা খুলতে চাইছে ভ্রমণপিপাসু স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে তৈরি এই সংগঠন।
ইতিমধ্যে রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে তারা কথাও বলেছে। এই প্রথম শ’দেড়েক ভিনরাজ্যের পর্যটককে নিয়ে সুন্দরবন সফরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি, সোমবার পর্যন্ত দার্জিলিঙ-সান্দাকফু গিয়েছে সদস্যদের কয়েকটি দল। সংগঠনের দাবি, এই ধরনের পর্যটন বাড়লে আখেরে এলাকার মানুষই উপকৃত হচ্ছেন। ১৯১২ সালে ‘ইউথ হস্টেল মুভমেন্ট’ শুরু করেন জার্মানির শিক্ষক রিচার্ড শিরমান। তাদের আন্তর্জাতিক সদর দফতর ইংলন্ডে। ১৯৪৯ সালে এ দেশে তৎকালীন মহীশূরে শুরু হয় ভারতীয় কর্মকাণ্ড। এখন সংগঠনের সদস্যেরা গোটা দেশে স্বীকৃত ১০৬টি হোটেলে কম খরচে থাকার সুযোগ পান। রাজ্যের প্রায় ১২ হাজার সদস্যর অর্ধেকেরও বেশি ‘আজীবন সদস্য’। |
সংগঠনের রাজ্য সভাপতি সমর মিত্রের বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে বেশি মাত্রায় বাইরের পর্যটক আনতে চান। এই কাজে আমরা সবচেয়ে বেশি সহায়ক হতে পারি।” তিনি জানান, তাঁদের মূল লক্ষ্য বেড়ানোর মাধ্যমে বন্ধুতার প্রসার। সংগঠনের কর্মকর্তারা অনেকে বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত, অনেকে অবসরপ্রাপ্ত। কিন্তু সকলেরই পায়ের তলায় সর্ষে।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, নভেম্বর-ডিসেম্বরে তিন পর্যায়ে সুন্দরবন সফর করানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। পাঁচ দিনের এক-একটি পর্যায় ৪৪ জনের ঘোরার ব্যবস্থা ছিল। থাকা-খাওয়া-বেড়ানো বাবদ প্রত্যেক সদস্যের খরচ সাড়ে চার হাজার টাকা। শুধু দক্ষিণবঙ্গে নয়। ২৫ ডিসেম্বর থেকে চার দিন ধরে বালুরঘাটে কয়েক পর্যায়ে ‘নেচার স্টাডি ক্যাম্প’ করার ব্যবস্থা হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে তিন সপ্তাহ পাহাড়ে রওনা দিয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ জনের বেশ কয়েকটি দল।
ইউথ হস্টেল অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, তাদের এই উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারাও উপকৃত হচ্ছেন। কেননা ঘুরতে গিয়ে পর্যটকেরা নানা রকম জিনিস কিনছেন। সুন্দরবনের মধু বিক্রেতারা যেমন তাঁদের কাছে কয়েকশো শিশি মধু বিক্রি করার সুযোগ পেয়েছেন। সংগঠন-স্বীকৃত হোটেলগুলোও ভাল খদ্দের পাচ্ছে। সংগঠনের ফিল্ড ডিরেক্টর কার্তিক শর্মা জানান, এই উদ্দেশ্যে তাঁরা ইতিমধ্যে বেশ কিছু রুগ্ণ হোটেলকে শতর্র্সাপেক্ষে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
রাজ্যের ১২টি হোটেলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে পর্যটক আনার রাস্তাও নিয়েছে ইউথ হস্টেল। সেগুলির অন্যতম, কল্যাণীর একটি গেস্ট হাউসের মালকিন কাজল লাহিড়ি বলেন, “এই অঞ্চলে আরও কিছু গেস্ট হাউস আছে। কিন্তু তাদের চেয়ে আমরা বাড়তি অতিথি পাচ্ছি। বিদেশি আবাসিকদেরও পাচ্ছি। আমাদের হয়ে ইউথ হস্টেল অ্যাসোসিয়েশনই প্রচার করে।” উত্তরে রিম্বিকের কাছে শ্রীখোলার একটি হোটেলের মালিক শুভাশিস সেনগুপ্ত বলেন, “আমি এই অঞ্চলের হোটেল মালিক সংগঠনের সম্পাদক, ইউথ হস্টেল ওয়ার্ডেনও। এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ট্রেকিং রুট এই অঞ্চলে। ফি বছর অ্যাসোসিয়েশন অন্তত দুই খেপে পর্যটকদের পাঠায়। এতে আমাদের উপকার হয় বৈ কি!” ইউথ হস্টেলের কাজে সরকারি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পান্ডে। রাজ্যের যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বলেন, “ওঁরা আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। যুব কল্যাণের প্রয়োজনে নিশ্চয়ই ওঁরা সহযোগিতা পাবেন।”
|
যে কেউ সদস্য হতে পারেন। |
আজীবন সদস্যদের এককালীন ১৫৫০ টাকা, বার্ষিক সদস্যদের বছরে ১০০ টাকা করে লাগে। |
এ রাজ্যে অ্যাসোসিয়েশনের শাখা ১৭টি। ১২টিই জেলায়। |
বনগাঁ, শ্যামনগর, পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ, বহরমপুর ও বীরভূমে নতুন শাখা খোলার জন্য তোড়জোড় চলছে। |
সংগঠনের স্বীকৃত হোটেলে অনলাইন বুকিং করতে পারেন সদস্যেরা। www.yhaindia.org, www.yhawestbengal.org ওয়েবসাইটে মেলে প্রয়োজনীয় তথ্য। চাইলে মেল করা যায় yhaiwestbengal@gmail.com ঠিকানায়। |
|