জোড়া ধর্মঘটে ভোগান্তি দুই জেলায়
কদিকে মেঘ-কুয়াশার যৌথ হানা। অন্য দিকে জোড়া ধর্মঘটের ধাক্কায় বিপর্যস্ত বছরের প্রথম সোমবার। নাজেহাল পড়ুয়া থেকে নিত্যযাত্রী, রোগী থেকে ব্যবসায়ী সবাই।
এ দিন সবথেকে বিপাকে পড়েন চাকরিজীবী, স্কুল পড়ুয়া ও নিত্যযাত্রীরা। বহু স্কুলেই এদিন ছিল নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম ক্লাস। বছরের প্রথম দিনেই স্কুল কামাই হোক তা বহু অভিভাবকই চাননি। আবার বহু অভিভাবক জানিয়েছেন, তাঁরা বুঝতে পারেননি যে ছাত্র ধর্মঘটের জন্য এ দিন স্কুল হবে কি না। ফলে বেশিরভাগ অভিভাবককেই হয়রান হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছে।
একইভাবে বছরের প্রথমেই ‘ক্যাজুয়াল লিভ’ নষ্ট করতে চাননি চাকরিজীবিরা। ফলে বহু ভোগান্তির পর দ্বিগুণ বা তিনগুণ ভাড়া দিয়ে এ দিন কর্মস্থলে পৌছতে হয়েছে কর্মীদের। জেলার ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মী স্বপন বিশ্বাস হাঁসখালি থেকে আরও চার জনের সঙ্গে অটো ভাড়া করে কৃষ্ণনগরে অফিসে এসেছিলেন সোমবার। অন্য দিন তাঁর অফিস আসতে তিরিশ টাকা খরচ হলেও এ দিন লেগেছে সত্তর টাকা। আবার স্কুল শিক্ষক রতন দে বলেন, “কৃষ্ণনগর থেকে রোজ চাপড়া যেতে কুড়ি টাকা খরচ হয়। সোমবার দীর্ঘ অপেক্ষার পর পচিঁশ টাকা মাথাপিছু ভাড়া দিয়ে ছোট ম্যাটাডোর করে প্রাণ হাতে করে স্কুলে গিয়েছি।”
বাসের অভাব। হয়রানি যাত্রীদের। —নিজস্ব চিত্র।
জেলায় এদিন বেসরকারি বাস পথে নামে নি। প্রয়োজনের সময়ে টিকি দেখা যায়নি কোন সরকারি বাসেরও। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির তরফে অসীম দত্ত বলেন, “কাগজে কলমে নদিয়ায় সব রুট মিলিয়ে দৈনিক ৫৮৩টি বাস চলে। কিন্তু জ্বালানি সহ অন্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে অনেক বাস বসে গিয়েছে। তবে এখন জেলায় রোজ যতগুলি বাস চলে সোমবার সেই বাসগুলো পথে নামেনি। শুধু সকালে যে চারটি বাস নির্দেশ অমান্য করে পথে নেমেছিল, আমরা নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিচ্ছি। আগামী তিন দিন ওই বাসগুলি পথে নামতে পারবে না।”
নবদ্বীপ কৃষ্ণনগর রুটের নিত্য বাসযাত্রী সমিতির সম্পাদক দিলীপ দাস বলেন, “এ দিন কোনও রুটে একটিও বাস না চলায় যাত্রীরা চরম দূর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। গোটা জেলার রাস্তাঘাট কার্যত বন্ধের চেহারা নিয়েছিল।” নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, “কোথাও কোনও অপ্রীতিকর কিছু ঘটেনি।”
শনিবার এবং রবিবার নদিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৭ ডিগ্রী ও ৭.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় ঠকঠকিয়ে কেঁপেছে গোটা জেলা। আকাশে মেঘ থাকায় সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে হয় ১১.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তাতে ঠাণ্ডার হাত থেকে কিছুটা স্বস্তি মিললেও ধর্মঘটের ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলল না। অন্য দিকে জোড়া ধর্মঘটে নাকাল হল মুর্শিদাবাদও। জেলা জুড়ে বেসরকারি বাস ধর্মঘটের বেশ ভালই প্রভাব পড়েছিল। সরকারি অফিস, আদালত, হাসপাতালগুলিতে এ দিন সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। তবে বেশ কয়েকদিন থেকে বাস ধর্মঘটের আগাম প্রচার থাকায় পথে বেরনো যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় না থেকে ট্রেকার, লছিমন, ও অন্য গাড়িতে করেই যাতায়াত করেছেন। সর্বত্রই যাত্রীদের একমাত্র ভরসা ছিল এই সব ছোট গাড়ি। তবে যাত্রীদের যাতায়াত করতে হয়েছে বাদুরঝোলা হয়ে। কোথাও কোথাও মওকা বুঝে বেশি ভাড়াও হেঁকেছেন লছিমন থেকে অন্যান্য গাড়ির চালকরা। এ দিন গোটা রাজ্যের স্কুল-কলেজগুলিতেও ধর্মঘটের ডাক দেয় এসএফআই। তবে ছাত্র ধর্মঘটের প্রভাব জেলার সর্বত্র সেভাবে পড়েনি। বেলডাঙা, কান্দির বেশির ভাগ স্কুল, কলেজই খোলা ছিল। তবে বাস ধর্মঘটের প্রভাবে বহু স্কুলেই বহিরাগত শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলে যেতে পারেননি।
যদিও এসএফআই-এর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দেবাশিস রায় দাবি করেন, ‘‘গোটা জেলার বেশিরভাগ স্কুল, কলেজই এ দিন বন্ধ ছিল। জঙ্গিপুর কলেজে এ দিন ধর্মঘট পালন করে ছাত্র-ছাত্রীরা না এলেও বেলা ১২টা নাগাদ পুলিশ গিয়ে কলেজের বন্ধ গেট খুলে দেয়। ফলে কর্মীরা কয়েকজন কলেজে ঢুকলেও ছাত্ররা ঢোকেনি। পরে বাস ধর্মঘটের কারণ দেখিয়ে এ দিন ছাত্র ভর্তির কাজ স্থগিত করে দেওয়া হয়।’’
জেলা তৃণমূল শিক্ষা সেলের চেয়ারম্যান সেখ ফুরকান অবশ্য বলেন, ‘‘বাস ধর্মঘটে কিছুটা সমস্যা হলেও ছাত্র ধর্মঘটের জেলায় কোনও প্রভাব পড়েনি। প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই খোলা ছিল। বহরমপুরে এ দিন আমরা যে সভা করেছি সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।’’
জেলা জুড়ে সরকারি বাস অবশ্য চলেছে। তবে তাতেও ছিল ঠাসাঠাসি ভিড়। জঙ্গিপুর বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক মনিরুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যের মতো এই জেলাতেও বাস ধর্মঘট ব্যাপক ভাবে সফল হয়েছে। সাধারণ যাত্রীরাও প্রায় সকলেই বাস ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে সওয়াল করেছেন।”
মনিরুদ্দিন বলেন, “সরকারের উচিত এখন খোলা মনে আলোচনার টেবিলে বসে এ ব্যাপারে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। রাজ্য সরকার ভাড়া না বাড়ালে পরবর্তী আন্দোলন কী হবে তা ঠিক করতে ১০ ডিসেম্বর বিভিন্ন বাস সংগঠনের নেতারা কলকাতায় বৈঠকে বসবেন। সেখানে যা সিদ্ধান্ত হবে মুর্শিদাবাদের বাস মালিকরাও তা মেনে নেবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.