|
|
|
|
সুতোকল বন্ধের আশঙ্কা, গেটে অবস্থান কর্মীদের
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন মেদিনীপুরের ‘কেশর মাল্টিয়ান কটন মিলে’র শ্রমিকরা। কয়েকমাস ধরেই কর্মীরা নিয়মিত কাজ পাচ্ছেন না। এক সপ্তাহ হতে চলল, হাতে গোনা ২০-২৫ জন কাজ পাচ্ছেন। তারই সঙ্গে কারখানা থেকে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিও কর্তৃপক্ষ বাইরে নিয়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানতে পেরেছেন কর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে কাজের দাবিতে কারখানার গেটের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসেছেন শ্রমিকেরা। নেতৃত্বে রয়েছে আইএনটিটিইউসি। শ্রমিকদের কথায়, “আমাদের প্রথম দাবি, কাজ দিতে হবে। তারই সঙ্গে আমাদের আশঙ্কা, কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধ করতে চান। তাই অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেছেন। কয়েকটি নিয়েও চলে গিয়েছেন। আর যাতে যন্ত্রপাতি নিয়ে যেতে না পারে সে জন্যেই মূল ফটকের সামনে অবস্থানে বসেছি।”
কারখানার জেনারেল ম্যানেজার সিদ্ধার্থ ঠাকুর এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়, “এ ব্যাপারে যা বলার মালিক বলতে পারবেন। মালিকের সঙ্গে এখান ইউনিয়নের নেতৃত্বেরও কথা হয়েছে।” আইএনটিটিইউসির জেলা সাধারণ সম্পাদক শশধর পলমল ও কারখানা ইউনিটের সভাপতি পার্থ ঘনা বলেন, “মালিক জানিয়েছিলেন সোমবার থেকেই কারখানা বন্ধের নোটিস ঝোলাতে। লাভজনক এই কারখানা কেন বন্ধ করতে চান তার সদুত্তর দিতে পারেননি। শ্রমিকদের কী হবে তাও জানাতে চাননি। আমাদের অনুরোধে আপাতত ১৬ তারিখ পর্যন্ত মিল রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও শ্রমিকদের কাজ দিচ্ছে না। আমরা বিষয়টি শ্রম মন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীকে জানাব।” |
মেদিনীপুরে সুতোকলের সামনে কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
এই কারখানাটি আগে ছিল বিড়লা গোষ্ঠীর। পরবর্তীকালে অন্য সংস্থা তা কিনে নেয়। ফরে বিড়লা কটন মিলের নামও পরিবর্তন হয়ে যায়। বর্তমানে এই কারখানায় প্রায় ৮০০ জন শ্রমিক রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ২০৯ জন শ্রমিক স্থায়ী হিসাবে কাজ করলে ৩৩৫ টাকা মাইনে পান। ১৮০ টাকা বেতনের কিছু অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। বাকিরা ঠিকাদারের আওতায় কাজ করেন। তাঁদের কারও ১২৫ টাকা ও ১৬০ টাকা বেতন। কারখানার স্থায়ী কর্মী শ্যামানন্দ ঝাঁয়ের কথায়, “আমি ৩০ বছর থেকে এই কারখানায় কাজ করছি। স্থায়ী কর্মী বলে আমাদের চিহ্নিত করলেও যেদিন কাজ কর্ম সেদিন ৩৩৫ টাকা দেওয়া হয় ৮ ঘন্টা কাজের বিনিময়ে। না কাজ করলে মাইনে মেলে না। তার উপর ৪-৫ মাস ধরে নিয়মিত কাজও দিচ্ছে না। কারখানায় এসে ফিরে যাচ্ছি। এখন শুনছি কারখানা বন্ধ করে দিতে চান কর্তৃপক্ষ।” খড়্গপুর থেকে আসা অস্থায়ী কর্মী আজিজা খাতুনের কথায়, “খড়্গপুর থেকে বাসভাড়া খরচ করে আসি। এসে দেখি কাজ নেই। ফিরে যেতে হয়। কয়েকমাস ধরেই এরকম চলছে। আগে ৮ ঘন্টারয় ৬০ কেজি সূতো তৈরি করলেই হত। এখন ৮ ঘন্টায় ৩২০ কেজি সূতো তৈরি করতে হয়। কিন্তু মজুরী বাড়েনি। উল্টে কারখানা বন্ধ করে দেবে বলছে। আমরা খাব কী?” কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য কী কারনে উৎপাদন বন্ধ করতে চান সে বিষয়ে কিছুই জানাতে নারাজ। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, কারখানায় উৎপাদনের জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ মেলেনি। ফলে কাঁচামালও নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে কাজ দেওয়া যায়নি শ্রমিকদের। তাহলে প্রায় ৮০০ জন শ্রমিকেরা কী হবে? তাঁরা কাজের দাবিতে, স্থানীয় বিধায়ক মৃগেন মাইতির কাঝেও গিয়েছিলেন। মৃগেনবাবু বলেন, “ওই কারখানাতে শ্রমিকেরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চনার শিকার। এখন শুনছি, কী একটা কারনে মালিক কারখানা বন্ধ করে দিতে চাইছে। বন্ধ করার উপযুক্ত কারণও দেখাচ্ছে না। এভাবে দুম করে কোনও কারখানা বন্ধ করা যায় না। আমি বিষয়টি কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইব, প্রশাসনকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলব।” |
|
|
|
|
|