|
|
|
|
ছাত্র ধর্মঘটের প্রভাব পড়ল না
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর ও খড়্গপুর |
চার বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের তেমন প্রভাবই পড়ল না পশ্চিম মেদিনীপুরে। সোমবার সমস্ত স্কুল-কলেজই খোলা ছিল। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় চত্ত্বরেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। তবে, স্কুল- কলেজে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল অন্য দিনের থেকে কম। অত্যন্ত কম উপস্থিতির জন্য কয়েকটি কলেজে কিছু ক্লাসও হয়নি। অবশ্য, একাংশ শিক্ষকও এ দিন গরহাজির ছিলেন। সোমবার ছিল বাস ধর্মঘট। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বাস ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। কোনও বেসরকারি বাস এ দিন চলাচল না করার ফলে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাজিরা অন্য দিনের থেকে কম ছিল বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।
চার বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের অবশ্য দাবি, সোমবার ছাত্র ধর্মঘট সর্বাত্মক হয়েছে। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “ধর্মঘট সফল হয়েছে। আমরা ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। অভিভাবকদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ।” তাঁর দাবি, “ছাত্র ধর্মঘট বানচাল করতে এ দিন সকাল থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর কর্মীরা বিভিন্ন কলেজ গেটে জড়ো হন। সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেন। তবে, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা কোনও প্ররোচনায় পা দেননি।” তিনি বলেন, “সোমবারের ধর্মঘট থেকে স্পষ্ট, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ওই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন।” দাবি উড়িয়ে দিয়ে টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “সোমবার সমস্ত স্কুল-কলেজই খোলা ছিল। ছাত্রছাত্রীরাও এসেছেন। স্বাভাবিক পঠনপাঠন হয়েছে। কোথাও ধর্মঘট হয়নি।” তাঁর কটাক্ষ, “বন্ধ-বন্ধ করে সিপিএম তো রাজ্যটাকেই পিছিয়ে দিয়েছে। এখন ছাত্রছাত্রীরা আর এসএফআই-য়ের পাশে নেই। সোমবারের পরিস্থিতি থেকে তা স্পষ্ট।” ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “যে ঘটনার প্রেক্ষিতে বন্ধ ডাকা হয়েছিল, সেই ঘটনার প্রতিবাদ আমরাও করি। তবে ওদের প্রতিবাদের পন্থাটা ভুল ছিল।” তাঁর কথায়, “বন্ধ না-ডেকে অন্য কর্মসূচির মাধ্যমেও প্রতিবাদ করা যায়।” |
ছাত্র ধর্মঘটে কলেজিয়েট স্কুলের গেটে পাহারা |
অন্য দিকে, খড়্গপুরে এসএফআই-য়ের ডাকা ছাত্র ধর্মঘটের মিশ্র প্রভাব পড়েছে। রেলশহরের স্কুল-কলেজগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার অন্যদিনের তুলনায় কম ছিল। খড়্গপুর কলেজে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় বেশকিছু বিভাগে ক্লাস হয়নি। তবে এ দিন কলেজের হস্টেল সুপার নিয়োগের ইন্টারভিউ হয়েছে নির্বিঘ্নেই। শহরের অতুলমণি, আর্য বিদ্যাপীঠ, রেলওয়ে বয়েজ, ইন্দা বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্র ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়েছে। অন্য স্কুলগুলিতে উপস্থিতির হার এ দিন কম থাকলেও তা বাস ধর্মঘটের কারণেই বলে ব্যাখ্যা স্কুল কর্তৃপক্ষের। ছাত্র ধর্মঘটকে ঘিরে বড় কোনও গণ্ডগোল ঘটেনি। তবে এ দিন সকালে সাউথ সাইড হাইস্কুলের সামনে কয়েকজন এসএফআই সমর্থক জমায়েত করলে কিছু ছাত্র স্কুল না করে ফিরে যায়। পরে স্কুল পরিচালন সমিতির লোকেরা বাধা দিলে জমায়েত সরে যায়। খড়্গপুরের এসএফআই জোনাল সম্পাদক রাজীব মণ্ডল বলেন, “খড়্গপুর কলেজে এ দিন একটিও ক্লাস হয়নি। ৭০ শতাংশ স্কুলে ছাত্রই আসেনি তাই তৃণমূলের চাপ ও এত কম সময়ের মধ্যেও ধর্মঘটে ভাল সাড়া পড়েছে।” এসএফআই ধর্মঘট সর্বাত্মক বলে দাবি করলেও বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি তা মানতে নারাজ।
মধ্যমগ্রামের ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি-সহ রাজ্যের সার্বিক নৈরাজ্যের প্রতিবাদ এবং সুদীপ্ত গুপ্তর মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিতে সোমবার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল এসএফআই, এআইএসএফ, পিএসইউ এবং ছাত্র ব্লক। সোমবার যে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি অন্য দিনের থেকে কম ছিল, তা মানছেন অধিকাংশ কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁদের দাবি, বাস ধর্মঘটের জন্যই এই পরিস্থিতি। মেদিনীপুর কমার্স কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র বলেন, “বাস ধর্মঘটের জন্য একাংশ ছাত্রছাত্রী কলেজে আসতে পারেননি।” সকালের দিকে কয়েকটি স্কুল-কলেজের সামনে সামান্য উত্তেজনা ছড়ায়। গণ্ডগোল এড়াতে মেদিনীপুর শহরে স্কুল-কলেজের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। পরীক্ষা ছিল ধর্মঘটের আওতার বাইরে। |
|
|
|
|
|