|
|
|
|
বাস নেই, দুর্ভোগ বাড়াল অটোর দাপট
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ট্রেন থেকে নামার পর দীর্ঘক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করেছেন মেদিনীপুরের বাসিন্দা জয়দীপ নন্দী। তবে, খড়্গপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকাই সার। একটাও বাস মেলেনি। অগত্যা খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুর যাওয়ার জন্য অটোয় চাপেন তিনি। কিন্তু অটোর ভাড়া শুনে তাঁর চক্ষু চড়কগাছ! অন্য দিন যেখানে ৮-১০ টাকা খরচ করলে রেলশহর থেকে সদর শহরে পৌঁছনো যায়, সেখানে সোমবার অটো-ভাড়া ছিল ৩০ টাকা! জয়দীপবাবু বলছিলেন, “বেশি ভাড়া না-দিয়ে তো উপায় নেই। আর কতক্ষণ বাসের জন্য অপেক্ষা করব। খড়্গপুরে কোনও বেসরকারি বাসই চোখে পড়ল না।”
সোমবার দিনভর বহু নিত্যযাত্রীই এ ভাবে সমস্যায় পড়েছেন। কাজ হাতে নিয়ে পথে বেরিয়ে বাস না-পেয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগের কথা মানছেন বাস মালিকরাও। বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতির কথায়, “যাত্রীদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমরা বন্ধ করিনি। এই বন্ধের মধ্য দিয়ে আমাদের সমস্যার কথাই বোঝাতে চেয়েছি।” |
জনশূন্য মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাস্ট্যান্ডে বাসের অপেক্ষায় এক যাত্রী। |
তিনি বলেন, “বন্ধ সর্বাত্মক হয়েছে। সোমবার জেলার কোনও বেসরকারি বাস পথে নামেনি। আশা করব, সরকার বাস ভাড়া বৃদ্ধির দাবি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবে। তবে সরকার এ নিয়ে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না-নিলে আগামী দিনে আমরা চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।” বাস ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, ভাড়া না-বাড়ার ফলে প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। এ ভাবে আর বেশি দিন চলতে পারে না। সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তেলের দাম বাড়ছে। অথচ, শুধু বাস ভাড়াই বাড়ছে না। সরকার ভাড়া না-বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। বাস ভাড়া বৃদ্ধির দাবি যে যুক্তিসঙ্গত, তা মানছেন জেলা পরিবহণ দফতরের সরকার মনোনীত সদস্য প্রদ্যোৎ ঘোষ। তাঁর কথায়, “কিছু ভাড়া বাড়ানো দরকার।” তবে প্রদ্যোৎবাবুর বক্তব্য, “আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। এ ভাবে ধর্মঘট কেন? ধর্মঘট হলে সাধারণ মানুষের সমস্যা হয়। বাস মালিকদের এটা বোঝা উচিত।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের উপর দিয়ে প্রতিদিন ৮০০টিরও বেশি বেসরকারি বাস চলাচল করে। এরমধ্যে জঙ্গলমহল এলাকার উপর দিয়ে চলাচল করে ৫০০টিরও বেশি বেসরকারি বাস। বাস মালিকদের দাবি, সোমবার কোনও বাসই পথে নামেনি। ফলে এ দিন কেউ অফিসে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস না-পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চরম ভোগান্তির শিকার হয় স্কুল পড়ুয়ারাও। অন্য দিকে, বেলদা, দিঘা, কাঁথি, ভসরাঘাট, খড়িকা, কুলবনী, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া রুটের বাসও পথে না নামায় সমস্যায় পড়েছেন এইসব রুটের যাত্রীরাও। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে কোনও রকমে ভাড়া গাড়িতে বা অটোয় বেশি টাকা দিয়ে পৌঁছতে হয়েছে গন্তব্যে। দাঁতনের শিক্ষক খড়্গপুরের বাসিন্দা শুভেন্দু গুইন বলেন, “দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাস না পাওয়ায় একটা গাড়ি ৯জন মিলে ভাড়া করে কোনও রকমে স্কুলে পৌঁছেছি। সপ্তাহের প্রথম দিনেই চরম ভোগান্তির শিকার হতে হল।” |
ম্যাটাডোরই ভরসা। মেদিনীপুর শহরে সোমবার। |
পথে বাস না থাকায় এ দিন অটোর দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। নিত্যযাত্রীরাও বাধ্য হয়ে বিভিন্ন রুটে অটো-ট্রেকারে বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করেছেন। জেলায় ৮৫০ টিরও বেশি অটো চলাচল করে। মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মধ্যে কম সংখ্যক অটো চলাচল করে। কারণ, এই রুটে ১০-১৫ মিনিট অন্তরই বাস পাওয়া যায়। সোমবার অবশ্য মেদিনীপুর-খড়্গপুরের মধ্যে বাড়তি অটো চলাচল করেছে। অটোর ভাড়াও ছিল চড়া। রেলশহর থেকে সদর শহর পৌঁছতে এ দিন খরচ হয়েছে গড়ে ৩০ টাকা। অটো মালিকদের অবশ্য বক্তব্য, এখন বেশি যাত্রী তোলা হলে ধরপাকড় চলে। তাই ৫-৬ জন করে যাত্রী তোলা হয়। ৮-১০ টাকা ভাড়ায় কোনও যাত্রীকে খড়্গপুর থেকে মেদিনীপুরে পৌঁছলে মালিকদেরই ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
মৃগাঙ্কবাবু বলেন, “এমনিতেই এখন বাস ব্যবসায় তেমন লাভ নেই। অনেক সময় লোকসানই হয়। জেলার বহু রাস্তা খারাপ। বেশ কয়েকটি রাস্তা তো বাস চলাচলের অযোগ্য। এমন বেহাল রাস্তায় বাস চালানোর ফলে মালিকদেরও ক্ষতির মুখ দেখতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে কিছু না-কিছু খারাপ হচ্ছে। তা মেরামত করতে গিয়ে আর লাভের মুখ দেখা সম্ভব হয় না।” তাঁর কথায়, “আমরা জানি, সাধারণ মানুষও আমাদের দাবির সঙ্গে একমত। সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের যেখানে মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে, সেখানে বাস ভাড়া বাড়বে না-কেন?”
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|