|
|
|
|
কেউ ঝুলল ট্রেকারে, কেউ গুনল বাড়তি ভাড়া
নিজস্ব প্রতিবেদন |
প্রশাসনের আশঙ্কাই সত্যি হল। ভাড়াবৃদ্ধির দাবিতে বাস ধর্মঘটের জেরে রাজ্যের বাদবাকি এলাকার সঙ্গে হাওড়া এবং হুগলি জেলাতেও মুখ থুবড়ে পড়ল পরিবহণ-পরিষেবা।
বেসরকারি বাস-মালিকদের পাঁচটি সংগঠনের ডাকে সোমবার ওই ধর্মঘট হয়। বাস ধর্মঘটের প্রভাব যাতে সাধারণ জীবনযাত্রায় না পড়ে, সে ব্যবস্থা সরকার করবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। কিন্তু কুয়াশামাখা সকালে কাজে বেরিয়ে বাস না পেয়ে নাকাল হলেন দুই জেলার অসংখ্য সাধারণ যাত্রী। বিপাকে পড়েন স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। বাড়তি ভাড়া গুনে মোটরভ্যান, অটো বা ট্রেকারে চেপেও তাঁরা সময়মত গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। কারণ, ভিড়ের চাপ।
|
বাসের পথ চেয়ে...। আরামবাগে নিজস্ব চিত্র। |
হাওড়া থেকে বহু মানুষ যেমন বাসে কলকাতায় আসেন, তেমনই কলকাতা থেকেও বহু মানুষ যান গ্রামীণ হাওড়ায় কাজ করতে। বাস না পেয়ে দু’তরফেই সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। সরকারি সিটিসি বাস চললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্টই কম ছিল বলে অভিযোগ। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা, ট্রেকার বা ছোট গাড়িতে যাতায়াতে বাধ্য হয়েছেন নিরুপায় যাত্রীরা।
এ দিন সকালে আমতা থেকে অটোতে ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে বাগনানে কাজে এসেছিলেন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মচারী অভিজিৎ চরিত। তাঁর কথায়, “আমতা থেকে বাগনানে বাসে যাতায়াতে খরচ হয় ১৬ টাকা। এ দিন যাতায়াতে বাড়তি দিতে হল ২৪ টাকা।” প্রতিদিন সকালে নিমদিঘি থেকে কলকাতায় যান উলুবেড়িয়া জুয়ারগড়ির বাসিন্দা শ্রীনিবাস কয়াল।
এ দিন উলুবেড়িয়া বাসস্ট্যান্ডে ঘণ্টাখানেক আগে এসেও বাসের দেখা পাননি। তাঁর বিরক্তি, “ঘণ্টা দেড়েক ধরে দাঁড়িয়েও বাস মিলল না। দু’-একটা যাও বা চলছে, তাতে ওঠা যাচ্ছে না।” একই অভিজ্ঞতা উলুবেড়িয়ার বৃন্দাবনপুরের বাসিন্দা মধুমিতা কোলেরও। তিনি বালির একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
উলুবেড়িয়া-আমতা, সাঁকরাইল-আমতা, বাগনান-আমতা, হাওড়া-জুজারসাহা, ডিহিভুরসুট-হাওড়া, ডোমজুড়-হাওড়া, বড়গাছিয়া-হাওড়া, বাগনান-শ্যামপুর, বাগনান-কমলপুর, বাগনান-বাক্সি, বাগনান-মানকুর, বাগনান-জয়পুর প্রভৃতি রুটে নিয়মিত প্রচুর বাস চলাচল করে। ধর্মঘটের জেরে এই সমস্ত রুটের বাস সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ ছিল। দাপিয়ে বেরিয়েছে অটো, ট্রেকার এবং ছোট গাড়ি। |
কী রকম ভাবে বেঁচে আছি
যাত্রী দুর্ভোগের খণ্ড চিত্র। |
হাওড়া-ঝিকিরা এবং মুচিঘাটা-করুণাময়ী এই দুই রুটে সারা দিনে প্রায় ৩৫টি বাস চলে। হাওড়ার একেবারে গ্রামীণ এলাকা থেকে কলকাতায় আসার একমাত্র ভরসা এই দুই রুটের বাসও বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন বহু গ্রামবাসী। এ দিন হাওড়া-ঝিকিরা বাসমালিক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে দেবাশিস পালুই বলেন, “বাস ভাড়া বাড়ানোর দাবি তো রয়েইছে, তার সঙ্গে জেলায় যত বেআইনি ট্রেকার, অটো, ছোট গাড়ি চলাচল করছে, সেগুলিও অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আমরা পরিবহণ দফতরের কাছে দাবি জানিয়েছি।”
প্রায় একই ছবি হুগলিতেও। জেলার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বাসস্ট্যান্ড চুঁচুড়া, তারকশ্বের এবং আরামবাগ থেকে প্রায় কোনও বাসই ছাড়েনি। চুঁচুড়া সদর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন বাগখাল, তারকেশ্বর, দশঘরা, হরিপাল, বর্ধমানের কালনা, পাণ্ডুয়া, মেমারি ইত্যাদি রুটে তিনশোরও বেশি বাস যাতায়াত করে। ভিড় থাকে যাত্রীদের। এ দিনও যাত্রীরা এসেছেন।
সকালের দিকে কিছু বাস রাস্তায় নামলেও একটু বেলা বাড়তেই তা বন্ধ হয়ে যায়। বাস না-পেয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে বেছে নেন বিকল্প পরিবহণ। বাসরুটে পরিবহণ ব্যাহত হচ্ছে আরামবাগ মহকুমাতেও। জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে অধিকর্তা সৈকত ঘোষ বলেন, ‘‘যাত্রীরা যাতে ঠিকমতো গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন, সে জন্য প্রশাসনিক ভাবে অটো, ট্রেকার এবং অন্য যাত্রীবাহী গাড়ি বেশি চালানোর অনুরোধ করা হয়।” |
|
|
হাওড়া ও হুগলি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দুর্ভোগে যাত্রীরা। |
|
কিন্তু ছোট গাড়িগুলিতে ছিল বাদুরঝোলা ভিড়। ভদ্রেশ্বরের সুমনা দাস চুঁচুড়ার পিপুলপাতি বাণীবন্দির স্কুলে পড়ে। এ দিন বাস না পেয়ে তাকে উঠতে হয় ট্রেকারে। সুমনার কথায়, “বাস বন্ধ থাকার জন্য সময় মতো স্কুলে পৌঁছতে যাতে দেরি না হয়, ট্রেকারে ঝুলে যেতে হয়েছে।”
আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার বাস চলেনি। তবে, এক-দু’ঘণ্টা অন্তর কিছু সরকারি বাস চলেছে। এমনকী, কলকাতা থেকে ছাড়া বহু দূরপাল্লার বাসকেও এ দিন হুগলি ছুঁয়ে যেতে দেখা যায়নি। জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি দেবব্রত ভৌমিক বলেন, ‘‘যে হারে তেলের দাম বাড়ছে, তাতে বাস চালানো সম্ভব নয়। ভাড়া বৃদ্ধি না হলে একটা বাস পিছু যে সব কর্মীরা কাজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে।” |
ছবিগুলি তুলেছেন তাপস ঘোষ, মোহন দাস ও সুব্রত জানা। |
|
|
|
|
|